জানাজা নামাজের নিয়ম ও দোয়াসমূহ
মনে মনে নিয়তই যথেষ্ট, তার পরও কউ যদি মুখে উচ্চারণ করে আরবি নিয়ত বলতে চান তাহলে নিচের
نَوَيْتُ اَنْ اُؤَدِّىَ لِلَّهِ تَعَا لَى اَرْبَعَ تَكْبِيْرَاتِ صَلَوةِ الْجَنَا زَةِ فَرْضَ الْكِفَايَةِ وَالثَّنَا ءُ لِلَّهِ تَعَا لَى وَالصَّلَوةُ عَلَى النَّبِىِّ وَالدُّعَا ءُلِهَذَا الْمَيِّتِ اِقْتِدَتُ بِهَذَا الاِْمَامِ مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِ يْفَةِ اَللَّهُ اَكْبَرُ
উচ্চারণ: "নাওয়াইতু আন উয়াদ্দিয়া লিল্লাহি তায়ালা আরবা আ তাকবীরাতে ছালাতিল জানাজাতে ফারজুল কেফায়াতে আচ্ছানাউ লিল্লাহি তায়ালা ওয়াচ্ছালাতু আলান্নাবীয়্যে ওয়াদ্দোয়াউ লেহাযাল মাইয়্যেতে এক্কতেদায়িতু বিহাযাল ইমাম মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতে আললাহু আকবার।"
এখানে নিয়তে ‘লেহাযাল মাইয়্যেতে’ পুরুষ/ছেলে লাশ হলে পড়তে হবে, আর লাশ নারী/মেয়ে হলে ‘লেহাযিহিল মাইয়্যেতে’ বলতে হবে।
মনে রাখবেন, নিয়ত আরবিতে করতে না পারলে বাংলায় করলেও চলবে : "আমি চার তাকবিরের সহিত ফরজে কিফায়া জানাজার নামাজ কিবলামুখী হয়ে ইমামের পেছনে দাঁড়িয়ে মরহুম ব্যক্তির (পুরুষ/মহিলার) জন্য দোয়া করার উদ্দেশ্যে আদায় করছি। আল্লাহু আকবার।"
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, মূলত কোরআন ও হাদিসে কোনো নামাজের জন্য নির্দিষ্ট নিয়ত নেই। এই মৃত ব্যক্তির দোয়ার জন্য জানাজার নামাজ পড়ছি।
মূলত মনে মনে বলাটাই হলো নিয়ত।
জানাজার নামাজের নিয়ম :
কাতারবদ্ধ হয়ে ইমামের পেছনে দাঁড়ানোর পর নিয়ত করে প্রথম তাকবিরের পর ছানা পাঠ।
দ্বিতীয় তাকবিরের পর দরুদে ইবরাহিম পাঠ।
তৃতীয় তাকবিরের পর মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া পড়বে।
চতুর্থ তাকবির দিয়ে সালাম ফিরিয়ে, হাত নামিয়ে জানাজার নামাজ শেষ করতে হয়।
হাত উঠানো : জানাজা নামাজে শুধু প্রথম তাকবিরে হাত উঠাবে। এরপর আর কোনো তাকবিরে হাত ওঠানোর বিধান নেই।
তাকবিরে তাহরিমা— অর্থাৎ আল্লাহু আকবার বলার পর হাত তুলে তারপর অন্যান্য নামাজের মতো হাত বেঁধে নিতে হবে। হাত বেঁধে সানা পড়তে হবে।
আরবিতে সানা :
سُبْحَا نَكَ اَللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَا لَى جَدُّكَ وَجَلَّ ثَنَاءُكَ وَلَا اِلَهَ غَيْرُكَ
বাংলা উচ্চারণ :
"সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারা কাসমুকা ওয়া তায়ালা জাদ্দুকা, ওয়া জাল্লা ছানাউকা ওয়া লা ইলাহা গইরুক।"
সানা পড়ার পরে তাকবির বলে দুরুদে ইব্রাহিম পড়তে হবে, যেটা সাধারণ নামাজে তাশাহুদের পর পড়া হয়।
দুরুদ শবিফ :
اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى اِبْرَا هِيْمَ وَعَلَى اَلِ اِبْرَ اهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ- اَللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى اِبْرَا هِيْمَ وَعَلَى اَلِ اِبْرَا هِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌمَّجِيْدٌ
উচ্চারণ:
‘আল্লাহুম্মা সল্লিআলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ। কামা সল্লাইতা আলা ইব্রাহিমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহিমা ইন্নাকা হামিদুম মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ। কামা বারাকতা আলা ইব্রাহিমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহিমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।’
দুরুদ শরিফ পড়ার পর তৃতীয় তাকবির আদায় করে জানাজার মূল দোয়া পড়তে হয়।
জানাজার নামাজের মূল দোয়া :
اَللّٰهُمَّ اغْفِرْلحَيِّنَاوَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيْرِنَا وَكَبِيْرِنَا وَذَكَرِنَا وَاُنْثَا نَا اَللَّهُمَّ مَنْ اَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَاَحْيِهِ عَلَى الاِسْلاَمِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَى الاْيمَانِ بِرَحْمَتِكَ يَا ارْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ
উচ্চারণ:
"আল্লাহুম্মাগ ফিরলি হাইয়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়িইবিনা ওয়া ছগীরিনা ওয়া কাবীরিনা ওয়া যাকারিনা ওয়া উনছানা। আল্লাহুম্মা মান আহ ইয়াইতাহু মিন্না ফাআহয়িহি আলাল ইসলামী ওয়া মান তাওয়াফ ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফ ফাহু আলাল ঈমান। বিরহমাতিকা ইয়া আর হামার রহীমিন।"
তবে নাবালক ছেলের ক্ষেত্রে জানাজার দোয়া পড়তে হবে,
اَللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرْطًا وْاَجْعَلْهُ لَنَا اَجْرًا وَذُخْرًا وَاجْعَلْهُ لَنَا شَافِعًا وَمُشَفَّعًا
উচ্চারণ:
"আল্লাহুম্মাজ আল হুলানা ফারতাও ওয়াজ আল হুলানা আজরঁও ওয়া যুখরঁও ওয়াজ আলহুলানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ্ফায়ান।"
নাবালিকা মেয়ের ক্ষেত্রে জানাজার দোয়া পড়তে হবে,
اللَّهُمَّ اجْعَلْهَا لَنَا فَرْطًا وَاجْعَلْهَا لَنَا اَجْرًا وَذُخْرًاوَاجْعَلْهَا لَنَا شَافِعَةً وَمُشَفَّعَة
উচ্চারণ :
"আল্লাহুম্মাজ আলহা লানা ফারতাও ওয়াজ আলহা লানা আজরঁও ওয়া যুখরঁও ওয়াজ আলহা লানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ ফায়ান।"
এরপর চতুর্থ তাকবীর দিয়ে একটু নীরব থেকে ডানে এবং বামে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে।
উল্লেখ্য, যদি কারো নামাজে আসতে দেরি হয়ে যায়, তবে ইমাম সাহেবকে অনুসরণ করতে হবে। সম্ভব হলে চার তাকবীর আদায় করে নিতে হবে, তা যদি সম্ভব না হয়, তবে ইমাম সাহবকে অনুসরণ করে সালাম ফিরিয়ে নিয়ে জানাজা নামাজ সম্পন্ন করবেন। জানাজা নামাজ জামাতে আদায় করতে হয়,তাই এটি কাজা পড়ার সুযোগ নেই।
জানাজার জরুরি মাসায়েল:
মাসআলা : ছানা, দরূদ ও দুআর পরে যে আরো তিনবার তাকবীর বলতে হয় তখন ইমাম ও মোক্তাদীর হাত বাঁধা থাকবে।
মাসআলা : ইমাম তাকবীর ব্যতীত সবকিছুই চুপে চুপে বলবে, শুধু তাকবীর উচ্চস্বরে বলবে। মোক্তাদীরা তাকবীরসহ সবকিছুই আস্তে আস্তে বলবে।
মাসআলা : ডান দিকে সালাম ফিরানোর সঙ্গে সঙ্গে ডান হাত এবং বাম দিকে সালাম ফিরানোর সঙ্গে সঙ্গে বাম হাত নামিয়ে ফেলবে।
মাসআলা : জানাজার নামাজের পরে আর কোনো দোয়া বা মোনাজাত এক সঙ্গে করার বিধান নেই।
মাসআলা : জানাজার নামাজ ছুটে যাওয়ার আশংকা হলে (পানি নিকটে থাকা সত্ত্বেও) তায়াম্মুম করে জানাজায় শরীক হওয়া যায়।
মাসআলা : জুতা পায়ে রেখেও জানাজার নামাজ পড়া যায়। তবে শর্ত এই যে জুতার তলা এবং জুতার নিচে জায়গা পাক থাকতে হবে। আর যদি জুতা খুলে জুতার উপরে পা রেখে দাঁড়ায় তাহলে পায়ের সঙ্গে লেগে থেকে জুতার উপরের অংশ পাক থাকলেই হবে।
তথ্যসূত্র:
১. ইমাম মুসলিম উম্মে আত্বিইয়া (রদিয়াল্লাহু ’আনহা) হতে র্বণনা করেন, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৯৩৯।
২. জানাযার বিধিবিধান \ লেখকঃ শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন রহ।
৩. বুখারী, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/১৩২৭; মুসলিম, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৯৫১।