সাড়ে ৫০০ বছরের পুরোনো বাবা আদম শাহ মসজিদ
মুন্সিগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার দরগাবাড়ি গ্রামে অবস্থিত বাবা আদম শাহ মসজিদ বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন স্থাপনা। ১৪৮৩ সালে নির্মিত এ মসজিদটির বয়স আজ সাড়ে ৫০০ বছরেরও বেশি। এখনও এখানে নিয়মিত জামাতে নামাজ আদায় করা হয়। মসজিদ চত্বরে অবস্থিত রয়েছে বাবা আদম (রহ.)-এর মাজারও।
জনশ্রুতি অনুসারে বাবা আদম (রহ.) ১০৯৯ সালে সৌদি আরবের তায়েফ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। কিশোর বয়সেই তিনি আধ্যাত্মিক সাধনায় মনোনিবেশ করেন এবং পরবর্তীতে ইরাকের বাগদাদে গিয়ে হযরত আবদুল কাদের জিলানি (রহ.)-এর কাছে দীক্ষা গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে তিনি উপমহাদেশে আসেন।
১১৭৮ সালে তিনি বর্তমান মুন্সিগঞ্জের মিরকাদিম এলাকায় আসেন—তখন অঞ্চলটি সেন শাসক বল্লাল সেনের অধীনে ছিল। প্রচলিত কাহিনি অনুযায়ী, বল্লাল সেন মুসলমানদের ধর্মীয় অনুশীলন নিষিদ্ধ করেছিলেন। বাবা আদম (রহ.) সেই নিষেধ অমান্য করে আজান ও নামাজের প্রচলন পুনরায় শুরু করেন। এতে সংঘর্ষ বাধে, এবং এক যুদ্ধে তিনি শহীদ হন বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
তবে ঐতিহাসিকদের মতে, এই কাহিনিগুলোর অনেকটাই লোকগাথা—কারণ বল্লাল সেনের উত্তরসূরিরা আরও কয়েক প্রজন্ম অঞ্চলটি শাসন করেছেন। তবুও বাবা আদমের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১৪৮৩ খ্রিষ্টাব্দে সুলতান ফতেহ শাহর শাসনামলে তার কবরের পাশে মসজিদটি নির্মাণ করেন মালিক কাফুর।
মসজিদটির নাম শিলালিপিতে ‘জামে মসজিদ’ হিসেবে পাওয়া যায়। ছাদে ছয়টি গম্বুজ, চার কোণায় চারটি অলংকৃত মিনার রয়েছে। ভিত্তি এলাকার দৈর্ঘ্য ৪৩ ফুট এবং প্রস্থ ৩৬ ফুট; দেয়ালের পুরুত্ব প্রায় ৪ ফুট। পুরো কাঠামো তৈরি হয়েছে লাল পোড়ামাটির ইট ও সুরকি দিয়ে।
মসজিদের পূর্ব দিকে তিনটি খিলানাকৃত প্রবেশদ্বার রয়েছে, যার শীর্ষে রয়েছে কারুকাজ, ঝুলন্ত শিকল ও ঘণ্টার নকশা। ভেতরে রয়েছে তিনটি অর্ধবৃত্তাকার মেহরাব। প্রাচীরের লতাপাতা, জ্যামিতিক নকশা ও ঝুলন্ত প্রদীপের অলংকরণ সেই সময়ের মুসলিম স্থাপত্যকলার অনন্য উদাহরণ।
মসজিদটিতে ছয়টি কাতারের স্থান থাকলেও, নামাজে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সামনের প্রাঙ্গণে অতিরিক্ত সাতটি কাতারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জানালা না থাকায় অভ্যন্তর কিছুটা অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং দুর্গসদৃশ, যা সম্ভবত সুরক্ষার উদ্দেশ্যে নকশা করা হয়েছিল।