মঙ্গলবার ২৮ অক্টোবর ২০২৫, কার্তিক ১৩ ১৪৩২, ০৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

ব্রেকিং

ডেঙ্গুতে ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০৪১ ঐকমত্য কমিশন নিষ্কৃতি পেতেই কিছু সুপারিশ দিয়েছে: সালাহউদ্দিন নভেম্বরে গণভোট, আরপিও আর সংশোধন নয়: ইসিকে জামায়াত ‘জাতীয় নির্বাচনের দিন বা আগে’ গণভোট করার সুপারিশ ঐকমত্য কমিশনের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রধান নিয়োগ বন্ধে মাউশির চিঠি জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নতুন বাংলাদেশের পথ দেখাবে : প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে দ্রুত বডি-অন-ক্যামেরা ক্রয়ের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার অস্ত্র মামলায় সম্রাটের যাবজ্জীবন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ইসিকে ১৮ দফা দিয়েছে জামায়াত নির্বাচন ভবনের নিরাপত্তা বাড়াতে ডিএমপিকে ইসির চিঠি মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে মৃত্যু: ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট মামলা নির্বাচনে বেশি নিয়োজিত থাকবে আনসার সদস্যরা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা: ভোট পাড়ি দেওয়ার ফর্দ নিয়ে বসছে ইসি দুর্লভ খনিজের সরবরাহ ‘নিরাপদ’ করার লক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের চুক্তি স্বাক্ষর অস্ট্রেলিয়ার ১৬ বছরের নিচে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিষেধাজ্ঞা মেনে চলবে মেটা ও টিকটক হালাল পণ্যের বাণিজ্য সম্প্রসারণে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই রেমিট্যান্স প্রবাহ ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত বেড়েছে ১১.১ শতাংশ

জাতীয়

কী থাকছে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশে?

 প্রকাশিত: ১৭:৫৮, ২৮ অক্টোবর ২০২৫

কী থাকছে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশে?

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে যে সুপারিশমালা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সরকারকে দিয়েছে, সেখানে সাংবিধানিক আদেশ জারি করে গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে।

ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ মঙ্গলবার দুপুরে কমিশনের সভাপতি, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই সুপারিশমালা তুলে দেন।

জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এর একটি খসড়াও সেখানে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

সেখানে বলা হয়েছে, জুলাই জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের জন্য ‘সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী’ জনগণের অনুমোদন প্রয়োজন এবং সেজন্য গণভোট অনুষ্ঠান, সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন ও ওই পরিষদের মাধ্যমে সংবিধান সংস্কার ‘অপরিহার্য’।

এই আদেশ জারির পর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যথোপযুক্ত সময়ে অথবা নির্বাচনের দিন গণভোট হবে। সেজন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করতে হবে।

গণভোটে জানতে চাওয়া হবে ভোটার জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশে সন্নিবেশিত সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবগুলোতে সম্মতি দিচ্ছেন কি না।

গণভোটে জনগণের সায় পেলে আগামী জাতীয় নির্বাচনের পর নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নিয়ে একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে। তারা একইসঙ্গে জাতীয় সংসদের সদস্য এবং সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন।

পরিষদ প্রথম অধিবেশন শুরুর তারিখ থেকে ২৭০ পঞ্জিকা দিবসের মধ্যে জুলাই জাতীয় সনদ অনুসারে সংবিধান সংস্কার করবে।

এই কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দুটি বিকল্পের সুপারিশ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

প্রথম বিকল্পে বলা হয়েছে, গণভোটের আগে জনগণের জ্ঞাতার্থে এবং সাংবিধানিক পরিষদের দায়িত্ব পালনের সুবিধার্থে জুলাই জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত প্রস্তাবগুলোর ভিত্তিতে সরকার প্রণীত একটি খসড়া বিল গণভোটে উপস্থাপন করা হবে।

এই খসড়া বিলের বিষয়টি দ্বিতীয় বিকল্পে রাখা হয়নি।

প্রথম বিকল্পে বলা হয়েছে, সংবিধান সংস্কার পরিষদ নির্ধারিত ২৭০ পঞ্জিকা দিবসের মধ্যে কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হলে সংবিধান সংস্কার বিল ‘গৃহীত হয়েছে’ বলে গণ্য হবে এবং তা সংবিধার সংস্কার আইন হিসেবে কার্যকর হবে।

প্রধান উপদেষ্টার কাছে সুপারিশমালা হস্তান্তর করার পর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে আসেন ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ।

তিনি বলেন, "গণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের এক নতুন যাত্রার সুযোগ এবং সূচনা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে যে রাষ্ট্র কাঠামো ফ্যাসিবাদী শাসন তৈরি করেছিল তারও আগে গণতন্ত্র চর্চার ক্ষেত্রে বারবার যে হোঁচট খাওয়ার অভিজ্ঞতা সেগুলোকে মোকাবিলা করেই সেগুলোকে বিবেচনায় রেখেই যেন রাষ্ট্র সংস্কারের এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, সুপারিশ করা হয়।

"সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান, বাস্তবায়নের উপরেখা নির্দেশ করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর অনুরোধের প্রেক্ষাপটে আমরা একটি বিশেষজ্ঞ দলের সহযোগিতা নিয়েছি, সাহায্য নিয়েছি। যাতে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন সাবেক বিচারপতি, তিনজন আইনজীবী এবং একজন আইনের শিক্ষক। রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত, বিশেষজ্ঞদের মতামত, আমাদের কমিশনের সম্মানিত সদস্যদের অভিজ্ঞতা এবং আন্তরিকতার প্রেক্ষাপটে আমরা সুপারিশগুলো তৈরি করেছি।”

তিনি বলেন, “এই সুপারিশগুলোর লক্ষ্য হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ যেন একটি আইনি ভিত্তি পায়। ভবিষ্যতের পথরেখা হিসেবে যে সমস্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত এবং ঐকমত্য হয়েছে সেগুলো যেন বাস্তবায়িত হয়।”

সুপারিশে প্রধানত তিনটি ভাগ আছে জানিয়ে কমিশনের সহ সভাপতি বলেন, “প্রথমটি হচ্ছে যে সকল বিষয়ে সাংবিধানিক বিষয় সংশ্লিষ্ট নয়, সে সমস্ত বিষয়ে সরকার যেগুলো অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে পারেন সেটা যেন অবিলম্বে সরকারের পক্ষ থেকে সে সমস্ত বিষয় বাস্তবায়িত করা হয়।

"দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে এর মধ্যে সুপারিশের অনেক কিছুই আছে যেগুলো সরকারি নির্দেশ এমনকি অফিস অর্ডার দিয়েও বাস্তবায়ন করা সম্ভব সেগুলো যেন সরকার দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করে। এ দুটো বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনোরকম ভিন্নমত নেই এবং এটা আলোচনার মধ্য দিয়ে যখনই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা সেটা সরকারকে অবহিত করেছি।"

আলী রীয়াজ বলেন, "কোনগুলো অধ্যাদেশের মাধ্যমে কোনগুলো অফিস অর্ডারের মাধ্যমে করা যাবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ্য করেছি যে সাংবিধানিক বিষয়গুলোতে অনেক অনেক বিষয়ে ঐকমত্য আছে। কিছু বিষয়ে ভিন্ন মত আছে।

“এই সংবিধান সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে বাস্তবায়নের একটি আইনি ভিত্তি প্রদান এবং বাস্তবায়নের পথ নির্দেশ করার জন্য আমরা আমাদের তৃতীয় সুপারিশে কীভাবে এগুলোকে বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হওয়া যায় তার সুপারিশ করেছি।”

তিনি বলেন, "সংবিধান সংশ্লিষ্ট ৪৮টি বিষয়ের ব্যাপারে আমরা সরকারকে পরামর্শ দিয়ে বলেছি, দুটো বিকল্প প্রস্তাব সরকারের হাতে আছে। এর দুটো বিকল্পেরই কিছু কিছু জিনিস এক, কিন্তু সামান্য ভিন্নতাও আছে আমাদের প্রস্তাবে।

“আমরা সরকারকে অনুরোধ করেছি, পরামর্শ দিয়েছি যে সরকার যেন অবিলম্বে একটি আদেশ জারি করে। এই আদেশের বিষয় হবে জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ সংবিধান সংস্কার বিষয়ক। সরকারের এই আদেশে অধীনে সরকার একটি গণভোটের আয়োজন করবেন।

"এই গণভোটে জনগণের কাছে আমরা সুপারিশ করেছি সরকার যেন একটি প্রশ্ন উত্থাপন করেন। সেটি হচ্ছে এই যে আদেশ এবং আদেশের তাফসিলে অন্তর্ভুক্ত ৪৮টি সংবিধান সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সেগুলো বাস্তবায়ন এর ব্যাপারে জনগণের সম্মতি আছে কিনা? আমরা যে সুপারিশ করেছি তাতে বলা হয়েছে যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ একই সঙ্গে সংবিধান সংস্কার পরিষদ এবং জাতীয় সংসদ হিসেবে কার্যকর থাকবে।"

তিনি বলেন, " তবে সংবিধান সংস্কার পরিষদ কার্যকর থাকবে ২৭০ দিন। এই সময়ের মধ্যে সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্যরা জুলাই জাতীয় সনদে বর্ণিত এবং গণভোটে যদি সকলের জনগণের সম্মতি পাওয়া যায় সেই বিষয়গুলো সংবিধানে সংযুক্ত করার জন্য প্রয়োজন সমস্ত রকম বিধি-বিধান প্রয়োজনীয় সংশোধন সংযোজন বিয়োজন পরিবর্ধন পরিমার্জন করবেন।

"এরপরে যেটা আমরা বলেছি, সেটি হচ্ছে, একটি অন্যতম বিষয় হচ্ছে একটি উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করা। সংবিধান সংস্কার কমিশন এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট সুপারিশ ছিল ভোটের সংখ্যানুপাতে ১০০ সদস্যের একটি উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করা।

“সেই মোতাবেক যদি জনগণের সম্মতি পাওয়া যায় তবে জাতীয় সংসদ প্রতিষ্ঠার ৪৫ দিনের মধ্যে উচ্চকক্ষ গঠন বিষয়ক প্রয়োজনীয় সংশোধনীর মাধ্যমে তা বাস্তবায়িত হবে।”