কিয়ামতের দিন যে ৫ প্রশ্নের জবাব না দিয়ে কেউ রেহাই পাবে না

মৃত্যু মানবজীবনের অবিচ্ছেদ্য সত্য। ধনী-গরিব, রাজা-প্রজা, শক্তিশালী-দুর্বল— সবার জন্যই মৃত্যু এক অনিবার্য গন্তব্য। আর আমরা যে দুনিয়ায় বাস করি, এটি সাময়িক। পরীক্ষার হলের মতো। পরকালে সফল হতে অবশ্যই এই পরীক্ষায় পাস করতে হবে। এরপরই মিলবে কাঙ্ক্ষিত জান্নাত।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করছেন, ‘জমিনের ওপর যা কিছু আছে আমি সেগুলোর শোভাবর্ধন করেছি, যাতে আমি মানুষকে পরীক্ষা করতে পারি যে, আমলের ক্ষেত্রে কারা উত্তম।’ (সুরা কাহাফ : ৭)
সুরাতুল বাকারায় ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে তাদের সুসংবাদ দাও, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতসমূহ, যার তলদেশ দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত হবে। ( আয়াত : ২৫)
সুরা নাহলে আল্লাহ তায়ালা বলছেন, ‘অতঃপর নির্ধারিত সময়ে যখন তাদের মৃত্যু এসে যাবে, তখন এক মুহূর্তও বিলম্বিত কিংবা ত্বরান্বিত করতে পারবে না।’ (আয়াত : ৬১)
মৃত্যুকে ‘আলিঙ্গনের’ পর প্রত্যেকের কাছে তার চিরস্থায়ী আবাসস্থল তুলে ধরা হয়। হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, মারা যাওয়ার পর মৃত ব্যক্তির সামনে তার মূল বাসস্থানকে তুলে ধরা হবে। সে যদি জান্নাতি হয়, তবে জান্নাতের বাসস্থান আর যদি সে জাহান্নামী হয়, তবে জাহান্নামের বাসস্থান। পরে বলা হবে, এই তোমার স্থান। অবশেষে আল্লাহ তায়ালা তোমাকে কিয়ামতের দিন উত্থিত করবেন। (তিরমিজি : ১০৭২)
আর কেয়ামত প্রসঙ্গে রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘সেদিন মানুষ নিজের ভাই, নিজের মা, নিজের পিতা, নিজের স্ত্রী ও সন্তানাদি থেকে পালাবে। তাদের মধ্যে প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর সেদিন এমন সময় এসে পড়বে, সে নিজেকে ছাড়া আর কারও প্রতি লক্ষ করার মতো অবস্থা থাকবে না।’ (সুরা আবাসা : ৩৪-৩৭)
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি মহানবীকে (সা.) বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন মানুষ উলঙ্গ হয়ে খতনাহীন অবস্থায় কবর থেকে হাশরের ময়দানে এসে দাঁড়াবে। এ কথা শুনে আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! নারী-পুরুষ সবাই কি উলঙ্গ থাকবে? এমন হলে তো খুবই লজ্জার ব্যাপার। উত্তরে হুজুর (সা.) বললেন, ‘হে আয়েশা, সেদিনের পরিস্থিতি এত ভয়ংকর হবে, কেউ কারও দিকে তাকানোর কথা কল্পনাও করতে পারবে না।’ (মুসলিম : ৬৯৩৪)
মহানবী (সা.) আরও বলেছেন, কিয়ামত দিবসে পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ হওয়ার আগপর্যন্ত আদম সন্তানের পদদ্বয় আল্লাহ্ তায়ালার নিকট থেকে সরতে পারবে না।
প্রশ্নগুলো হলো—
১. তার জীবনকাল সম্পর্কে, কীভাবে তা অতিবাহিত করেছে?
২. তার যৌবনকাল সম্পর্কে, কী কাজে তা বিনাশ করেছে?
৩. তার ধন-সম্পদ সম্পর্কে, কোথা থেকে তা উপার্জন করেছে? এবং
৪. তা কী কী খাতে খরচ করেছে? এবং
৫. সে যত টুকু জ্ঞান অর্জন করেছিল সে মোতোবেক কী কী আমল করেছে। (তিরমিজি : ২৪১৬)
কাজেই, পরকালে সফল হতে পৃথিবীর ক্ষণস্থায়ী জীবনে মহান আল্লাহর হুকুম যেমন মেনে চলা জরুরি, তেমনি রাসুল (সা.) এর আদর্শ ও তাঁর দেখানো পথ অনুসরণও