ছায়ানটে হামলা `ফৌজদারী অপরাধ`, গণঅভ্যুত্থানের চেতনারও পরিপন্থি: ফারুকী
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্ববায়ক শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবরে ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে ধানমন্ডিতে ছায়ানট ভবনে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ‘ফৌজদারি অপরাধ’ এবং তা ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থি’ বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
তিনি বলেছেন, ওই হামলায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার বিষয়ে সরকার ‘কাজ করছে’।
সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর এলে বৃহস্পতিবার রাতে প্রথমে শাহবাগ অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে একদল লোক কারওয়ানবাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে এংপরে ডেইলি স্টার ভবনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করে।
পরে রাত দেড়টা থেকে আড়াইটার মাঝামাঝি সময়ে একদল বিক্ষোভকারী ধানমন্ডিতে ছায়নটের সাততলা ভবনের নিচতলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন তলায় গিয়ে প্রতিটি কক্ষে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়।
৫০ থেকে ৬০ জনের একটি দল মিছিল নিয়ে এসে এ হামলা করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। প্রথমে পার্কিং লটের দিকে আগুন দেওয়া হয়। পরে তারা ভবনের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে।
এ সময় হামলাকারীরা ‘ভারতের দালাল’, ‘ভুয়া’,’ নারায়ে তাকবীর’, ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’, ‘ভাঙো’ এসব স্লোগান দেয়। প্রয়াত সন্জীদা খাতুনের প্রতিকৃতি কেটে নষ্ট করার সময় ‘নাস্তিক’ বলে সম্বোধন করেছে।
মিলনায়তনে হামলাকারীর যা পেয়েছেন সেটিই ভাঙচুর করেছেন। তবলা, হারমোনিয়াম, তানপুরা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র ভাঙচুর করা হয়, পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তিনতলার একটি ভবনে পুড়ে যাওয়া বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে স্তুপকারে পড়ে আছে পুড়ে যাওয়া বই।
পুরো মনিটরিং সিস্টেম, ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা, স্পিকার, লাইট ও ফ্যান ভেঙে ফেলা হয়েছে। সেখানে থাকা মাটির তৈরি চারুকর্ম ও শিল্প কর্ম ভেঙে ফেলা হয়েছে।
প্রতিটি তলায় থাকা সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট এবং সেখানে পরিচালিত বিদ্যালয়ের সবগুলো কক্ষ ও অফিস রুমের বেশিরভাগ আসবাব ভেঙে ফেলা হয়েছে। কাগজপত্র ও সরঞ্জাম তছনছ করা হয়েছে।
সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কক্ষও বাদ যায়নি। আলমারির গ্লাস ভেঙে ফেলা হয়েছে। চেয়ার-টেবিল ভেঙেচুড়ে ওলট পালট করা হয়েছে। রমেশ চন্দ্র স্মৃতি মিলনায়তন, মূল মিলনায়তনসহ, শৌচাগারও রেহাই পায়নি ভাঙচুরের তাণ্ডব থেকে।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, "বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক শরীফ ওসমান হাদির শহীদী মৃত্যুতে জাতি আজ শোকার্ত। এই জাতীয় শোকের মুহূর্তে এক শ্রেণির হঠকারী দেশকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে সাংস্কৃতিক সংগঠন 'ছায়ানট'-এ হামলা চালিয়ে ক্ষয়-ক্ষতি সাধন করেছে।
"মৃত্যুঞ্জয়ী হাদীর মৃত্যুতে কোনো সাংস্কৃতিক সংগঠনে হামলা কেবল একটি ফৌজদারী অপরাধই নয়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনারও পরিপন্থি।"
'গণতান্ত্রিক রূপান্তরের এই সময়ে সকল হঠকারিতার বিরুদ্ধে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ' থাকার আহবান জানিয়েছেন উপদেষ্টা।
তিনি বলেছেন, ছায়ানট ভবনে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে এ বিষয়ে যা যা করণীয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ছায়ানট কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয় করে তা করবে।