শনিবার ০৯ আগস্ট ২০২৫, শ্রাবণ ২৫ ১৪৩২, ১৪ সফর ১৪৪৭

জাতীয়

ভুল তথ্যের ভিত্তিতে অভিযোগ: প্রেস উইংয়ের পাল্টা জবাব

 প্রকাশিত: ২১:৩১, ৮ আগস্ট ২০২৫

ভুল তথ্যের ভিত্তিতে অভিযোগ: প্রেস উইংয়ের পাল্টা জবাব

(ফাইল ছবি)

নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) সম্প্রতি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও তথ্যপ্রাপ্তির সুযোগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করায় বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে প্রেস উইং জানায়, “আমরা দৃঢ়ভাবে এবং দ্ব্যর্থহীনভাবে এই ইঙ্গিত প্রত্যাখ্যান করছি। এক বছর ধরে অন্তর্বর্তী সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী নয়।”

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের সম্পাদকীয়, কার্যক্রম বা ব্যবসায়িক দিকগুলোতে হস্তক্ষেপ করেনি। বরং, ভুল তথ্য ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সম্প্রচারের বিপক্ষেও ব্যতিক্রমী সংযম অনুশীলন করা হয়েছে। টেলিভিশনের টকশো ও কলামগুলোয় প্রায়ই সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও উসকানিমূলক দাবি তোলা হলেও কোনো ধরনের সেন্সর আরোপ বা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি লাইসেন্স স্থগিতও করা হয়নি। অতীতে জোরপূর্বক বন্ধ করে দেওয়া কিছু মিডিয়ার পুনরায় সম্প্রচারে ফেরার পথও সরকার প্রশস্ত করেছে। এই পদক্ষেপগুলো বাকস্বাধীনতা ও মুক্ত সংবাদপত্রের প্রতি সরকারের অঙ্গীকারের প্রতিফলন।

প্রেস উইং দাবি করে, সীমিত প্রবেশাধিকারের অভিযোগ সত্ত্বেও সাংবাদিকরা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীদের কাছে সরাসরি ও উন্মুক্ত অ্যাক্সেস পাচ্ছেন। কোনো সাংবাদিককে তাদের আউটলেট বা সম্পাদকীয় অবস্থানের কারণে ব্রিফিং বা সাক্ষাৎকার থেকে বঞ্চিত করা হয়নি। স্বচ্ছতার নীতিতে সরকার অটল রয়েছে বলেও জানানো হয়।

নোয়াবের সমালোচনার জবাবে বলা হয়, সংস্কার করা অ্যাক্রেডিটেশন পদ্ধতি নিয়ে নোয়াবের বক্তব্য শুধুমাত্র বিভ্রান্তিকর নয়, বরং তথ্যগতভাবে ভুল। পূর্ববর্তী ব্যবস্থাটি বিপজ্জনকভাবে আপসকৃত ছিল, যেখানে বৈধ সাংবাদিকতার কার্যকারিতা ছাড়াই রাজনীতিবিদ, লবিস্ট ও সুবিধাবাদীরা সচিবালয়ে প্রবেশাধিকার পেতেন। এই ভাঙা কাঠামো বিলুপ্ত করে একটি অস্থায়ী পাশ সিস্টেম চালু করা হয়েছে, যা প্রকৃত সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করে।

অন্তর্বর্তী সরকার দাবি করেছে, আগের নীতিমালায় সাংবাদিকদের সরকারের ইতিবাচক দিক তুলে ধরার বাধ্যবাধকতা ছিল, যা সাংবিধানিক অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ছিল। এই নীতিমালা সংশোধন করে সাংবাদিকদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বর্তমানে নতুন করে অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

যেসব সাংবাদিক চাকরি হারিয়েছেন, তা সরকারের নির্দেশে নয় বলে প্রেস উইং জানিয়েছে। বরং এগুলো ছিল গণমাধ্যম মালিকদের কৌশলগত করপোরেট পুনর্বিন্যাসের সিদ্ধান্ত, যার সঙ্গে সরকারের কোনো চাপ বা নির্দেশনার সম্পর্ক নেই।

সরকার সাংবাদিকসহ সকল নাগরিকের শারীরিক নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষায় সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে বিবৃতিতে জানানো হয়। এটি শুধু সরকারের নয়, বরং মিডিয়া, সরকার এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সম্মিলিত দায়িত্ব বলেও উল্লেখ করা হয়।

প্রেস উইং আরও জানায়, চলতি বছরের শুরুতে ‘সাংবাদিক সুরক্ষা আইন’সহ মিডিয়া সংস্কারের প্রস্তাব করেছে মিডিয়া সংস্কার কমিশন। এর লক্ষ্য সাংবাদিকদের জন্য আইনি সুরক্ষা বৃদ্ধি করা এবং ভীতিপ্রদর্শনের কারণে সৃষ্ট আত্ম-সেন্সরশিপ হ্রাস করা। সরকার প্রস্তাবিত আইন প্রণয়নের বিষয়ে ভাবছে।

নোয়াবের উদ্দেশে প্রেস উইং পরামর্শ দেয়, অভিযোগ তোলার আগে সংগঠনটিকে নিজেদের সদস্যদের কার্যক্রম খতিয়ে দেখা উচিত। বিশেষ করে মজুরি শোষণ, শ্রম অধিকার অস্বীকার, প্রতিকূল পরিবেশে পর্যাপ্ত সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়া কাজ করানো ও কথিত অসহনীয় কাজের পরিবেশে সাংবাদিকদের নিযুক্ত করার বিষয়গুলোতে তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা দরকার।

বিবৃতির শেষাংশে বলা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন হিসেবে সরকার একটি ‘হ্যান্ডস-অফ’ (অহস্তক্ষেপমূলক) পদ্ধতি অনুসরণ করছে, যাতে গণমাধ্যম হস্তক্ষেপ বা ভয় ছাড়াই কাজ করতে পারে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে নিছক স্লোগান নয়, বরং একটি মৌলিক নীতি হিসেবে বিবেচনা করে সরকার।

প্রেস উইং-এর ভাষ্যমতে, তথ্যের ভিত্তিতে এবং সঠিক পক্ষগুলোর দিকে নির্দেশিত হলে নোয়াবের উদ্বেগগুলো আরও অর্থবহ হতো। পক্ষান্তরে, ঘটনাবলির ভুল ব্যাখ্যার ভিত্তিতে তোলা খোলামেলা অভিযোগ গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অগ্রগতির পরিবর্তে প্রকৃত চ্যালেঞ্জগুলো থেকে মনোযোগ সরিয়ে দেয়।

সরকার স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এবং এই মূল্যবোধ রক্ষা ও উন্নয়নের জন্য সব স্টেকহোল্ডারকে একসঙ্গে কাজ করার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।