ইনকিলাব মঞ্চের শহীদী শপথ, হত্যার বিচার ছাড়া রাজপথ না ছাড়ার ঘোষণা
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের বিচারের আগ পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে ‘শহীদী শপথ’ করেছে সংগঠনটি।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর শহীদ মিনারে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের এই শপথবাক্য পাঠ করান। উপস্থিত ব্যাক্তিরা হাত তুলে শপথ পাঠ করেন। এ সময় ওসমান হাদির ভাই শরীফ ওমর, ইনকিলাব মঞ্চের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আহ্বায়ক ফাতেমা তাসনিম জুমাসহ একাধিকজন উপস্থিত ছিলেন।
শপথে আব্দুল্লাহ আল জাবের বলেন, শহীদ ওসমান হাদির রক্তের শপথ, এই রক্ত বৃথা দিতে দেবো না। যে হাত তাকে হত্যা করেছে, যে শক্তি এই হত্যার ষড়যন্ত্রের পেছনে রয়েছে, যে আধিপত্য এই দেশকে দাস বানাতে চায়, তার বিরুদ্ধে আমরা শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত লড়ে যাবো। এই বাংলার জমিনে যে আধিপত্যবাদ ঝেঁকে বসেছে, তা সমূলে উৎপাটন করব।
তিনি বলেন, ভয়, লোভ ও আপসের রাজজনীতি আমরা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।
কোন ভয় এবং লোভ আমাদের এই লড়াই থেকে পিছপা হতে দেবে না। আমরা শপথ করছি, শহীদ ওসমান হাদির হত্যার দ্রুততম ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকবো। লড়াইয়ে থাকবো। পিছু হটব না।
একচুলও লড়ব না।
তিনি আরও বলেন, আমরা শপথ করছি, শহীদ ওসমান হাদির স্বপ্নের ইনসাফভিত্তিক, সার্বভৌম ও মর্যাদাশীল একটি নতুন বাংলাদেশ করব। যেখানে শাসক জনগণের কাছে জবাবদিহি করবে। বিচার নিশ্চিত করবে। গুম, খুন ও হত্যা বন্ধ করবে।
শপথে জাবের আরও বলেন, এই শপথের ব্যতয় ঘটানোর চেয়ে মৃত্যুই আমাদের কাছে সহজতর। শাহাদাতের তামান্না নিয়ে আমরা বেঁচে থাকতে চাই। কারণ রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে নীরবতা মানেই বিশ্বাসঘাতকতা। শরিফ ওসমান হাদির হত্যার বিচার না হওয়ার পর্যন্ত, ইনসাফ প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য, ইনসাফ কায়েমের জন্য, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের সংগ্রাম চলছে, চলবে।
উল্লেখ্য, ১২ ডিসেম্বর মতিঝিলে জুমার নামাজ পড়ে নির্বাচনী প্রচারণা শেষ করেন শহীদ ওসমান হাদি। এরপর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়ার পথে ওইদিন দুপুর ২টা ২০ মিনিটে হাদিকে বহনকারী অটোরিকশা পল্টন মডেল থানাধীন বক্স কালভার্ট এলাকায় পৌঁছালে মোটরসাইকেলে থাকা দুষ্কৃতকারীরা হত্যার উদ্দেশ্যে তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অপারেশন শেষে এভারকেয়ার হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৫ ডিসেম্বর তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর তিনি মারা যান।
এদিকে হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ১৪ ডিসেম্বর পল্টন থানায় ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলায় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, হত্যাচেষ্টা, বিপজ্জনক অস্ত্র ব্যবহার করে স্বেচ্ছায় গুরুতর আঘাত, দুষ্কর্মে সহায়তার অভিযোগ আনা হয়। হাদির মৃত্যুর পর মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।