ছেলের সুস্থতা ছাড়া আর কিছুই চান না সখিনা বেগম
“আমি আর কিছুই চাই না, আমার ছেলের চোখ ভালো করে দেন। চোখ ভালো হলে আমার ছেলে কাজ করে সংসার চালাতে পারবে। আমরা গরীব মানুষ, চিকিৎসার টাকা কই পাই?”- এই আকুতি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে চোখ হারানো শফিকুলের মা সখিনা বেগমের।
মোঃ শফিকুল ইসলাম কুড়িগ্রাম পৌর শহরের কৃষ্ণপুর পাইকপাড়া গ্রামের মোঃ ওয়াহেদ আলী ও সখিনা বেগমের ছেলে। শফিকুলের স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। তিনি গত ১৯ জুলাই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গিয়ে এক চোখে গুলিবিদ্ধ হন।
সুচিকিৎসা না হলে অন্য চোখটিও আলোহীন হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
শফিকুল ইসলাম বাসসকে জানান, তিনি থাকতেন ঢাকার নয়াপল্টন এলাকায়। প্রায় ১৮বছর ধরে কখনও বেসরকারি চাকুরি আবার কখনও রাজমিস্ত্রীর কাজ করে সংসার চালাতেন। এ বছর ১৯ জুলাই শুক্রবার জুমার নামাজের পর নয়াপল্টন এলাকায় ছাত্রদের একটি মিছিল বের হলে মিছিলে যোগ দেন শফিকুল। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে প্রথমে দৌড় দিলেও কিছুদূর গিয়ে পেছন ফিরে তাকাতেই আচমকা একটি বুলেট তার ডান চোখে লাগে। সেখানেই লুটিয়ে পড়েন তিনি। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কাছের হাসপাতালে নিয়ে যায়। তবে কয়েকটি হাসপাতালে গিয়েও চিকিৎসা পাননি তিনি।
ঘটনার দু’তিনদিন পর আগারগাঁও চক্ষু বিজ্ঞান ইনষ্টিটিউটে শফিকুলের চোখে অস্ত্রপাচার করা হয়। কিন্তু ততক্ষণে তার ডান চোখটির আলো চিরদিনের জন্য নিভে যায়। এদিকে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অপর চোখটি রক্ষা করতে হলে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এমনকি বিদেশেও যেতে হতে পারে। এমন অনিশ্চয়তার কথা শুনে এখন দিশেহারা পরিবারটি। অভাব অনটনের সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটির অসুস্থতায় স্বজনদের নিকট ধার দেনা করে কোন রকমে চলছে সংসার। সেখানে চিকিৎসার ব্যয় বহন করার কথা ভাবতেও পারছেন না তারা।
এদিকে শফিকুলের বাবা ওয়াহেদ আলীও ১৫ বছর আগে রাজ মিস্ত্রির কাজ করতে গিয়ে চোখ হারিয়েছেন। প্রতিবন্ধী ভাতা আর ছেলের উপার্জনে সংসার চললেও গত দুই মাস ধরে নিদারুণ অর্থ কষ্টে দিন কাটছে পরিবারটির। বিশেষ করে চোখ হারানোর কষ্ট আর পরিবারের কথা চিন্তা করে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন শফিকুল ইসলাম।
শফিকুল বলেন, আমার বাবাও প্রায় ১৫ থেকে ১৬ বছর আগে চোখ হারান। কাজ করার সময় অসাবধানতাবশত: তার দু’চোখে সিমেন্ট ঢুকে যায়। কিন্তু ঠিকমত চিকিৎসা না পাওয়ায় তিনি অন্ধ হয়ে যান। এহেন অবস্থায় আমার মা আর স্ত্রী’র ঝিয়ের কাজই ভরসা।
শফিকুলের প্রতিবেশী ও শিক্ষার্থী মোঃ রিয়াজুল ইসলাম বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দিয়ে শফিকুল ইসলাম ভাই এক চোখ হারিয়েছেন। অন্যচোখও যায় যায় অবস্থা। সরকারের উচিত তার পাশে দাঁড়ানো। কারণ, এটা আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা।
স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর আনিছুর রহমান বলেন, শফিকুলদের খুবই অভাবের সংসার। শফিকুলের পিতার নামে কেবল একটি প্রতিবন্ধী ভাতা আছে। এ ছাড়া আর কোন সুবিধা তারা পাচ্ছেন না। শফিকুলের উপার্জন দিয়ে সংসার চলতো। এখন সেটাও বন্ধ হয়ে গেলো। সরকারি ভাবে পরিবারটিকে সহযোগিতা করলে উন্নত চিকিৎসায় শফিকুলের চোখ ভালো হতো, পরিবারটিও উপকৃত হতো।
স্থানীয়রাও মনে করছেন, যেহেতু দেশের মানুষের মুক্তিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন দিনমজুর শফিকুল, তাই তার ও তার পরিবারের সাহায্যে সরকারের এগিয়ে আসা উচিত।