ভোটের আগে সরকারের বিতর্কিত ব্যক্তিদের চলে যেতে হবে: আমীর খসরু

নির্বাচনের আগে সরকারের মধ্যে 'বিতর্কিত ব্যক্তিদের চলে যেতে হবে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেছেন, যেহেতু নির্বাচনের আগে আর কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসবে না, সেহেতু এই সরকারকে শিগগিরই ‘কেয়ারটেকার সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে’।
আমীর খসর বলেন, “আমরা চাই, একটা শান্তিপূর্ণ ট্রানজিশন হোক। তাহলে যারা সরকারের আছে…ড. মুহাম্মদ ইউনুস সাহেবের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আছে। উনারতো সম্মানের সাথে যেতে হবে…আমরা সেটা তো চাই। কিন্তু কিছু লোকের কার্যকলাপের মাধ্যমে সেটা যদি বিঘ্নিত হয় সেজন্য আমরা অন্তবর্তীকালীন সরকারকে বলেছি, আপনি পুরোপুরি কেয়ারটেকার মুডে চলে যান।
‘‘যাদেরকে নিয়ে বিতর্ক আছে সেই লোকগুলাকে চলে যেতে হবে। তারা থাকলেই তো প্রশ্নবিদ্ধ হবে। সকলের কাছে মেসেজ যাবে, ক্লিয়ার মেসেজ যাবে যে, অন্তবর্তীকালীন সরকার তার সঠিক নিরপেক্ষ ভূমিকায় অন্তর্বর্তী হয়েছেন।”
বুধবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে বিএনপির নেতাদের আগের দিনের বৈঠকের প্রতি ইঙ্গিত করে এই মন্তব্য করেন।
আমীর খসরু বলেন, “যেহেতু বর্তমান সরকার অন্তর্বর্তী সরকারই কেয়ারটেকার সরকারের দায়িত্ব পালন করবেন আগামী নির্বাচনে, যেহেতু আর কোনো কেয়ারটেকার সরকার আসবে না নির্বাচনের আগে।
“সেজন্য এই সরকারকে অতিসত্বর সহসাই কেয়ারটেকার সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে, অতিসত্বর তাদেরকে কেয়ারটেকার মুডে সরকারকে চলে যেতে হবে। কেয়ারটেকার সরকারের জায়গা অবতীর্ণ হওয়ার অর্থ হচ্ছে, পুরোপুরি নিরপেক্ষ অবস্থানে যাওয়ার কথা বলছি।”
অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রসঙ্গ টেনে আমীর খসরু বলেন, “এখানে সরকারের ভেতরে, সরকারের বাইরে যারা নিরপেক্ষতাকে ভঙ্গ করার সুযোগ আছে তাদেরকে রেখে নিরপেক্ষতা রক্ষা করা যাবে না। এই প্রশ্নটা আসছে বিভিন্ন কারণে। আমরা লক্ষ্য করেছি, অনেকগুলো পদায়ন, অনেকগুলো বদলি, অনেক গুলো বিষয়ে সরকারের অবস্থান যে, কিছু কিছু লোক এগুলোকে প্রভাবিত করছে।
“সেজন্য আমরা বলেছি, যাদেরকে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, যারা আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে অথবা যারা কোনো দলের সাথে সস্পৃক্ত আছে কিংবা দলের সাথে নিজেদেরকে আইডেন্টিফাই করেছে তারা সরকারে থাকলে কেয়ারটেকার সরকারের ভূমিকা পালন করতে পারবে না।”
আমীর খসরু বলেন, কেয়ারটেকার সরকার কিভাবে পরিচালিত হবে সেটা সংবিধানে বলা আছে পরিষ্কারভাবে।
“সুতরাং এই সরকারকে এই মুহূর্ত থেকে সংবিধানে যে কেয়ারটেকার সরকারের ভূমিকা দেওয়া আছে সেই বৈশিষ্ট তাদেরকে এখন থেকে করতে হবে তাদের সমস্ত কর্মকাণ্ডে।
“আমি মনে করি তাদের কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এখন দেওয়া উচিত না। তাদের দৈনন্দিন যে কাজগুলো সেই কাজগুলোতে আস্তে আস্তে চলে যাওয়া উচিত। কারণ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দিতে গেলে তখন অনেক ধরনের প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে।”
জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল ও মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের যৌথ উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গুরুত্ব’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
নির্বাচনের আগে প্রশাসনে যে কোনো ধরনের বদলি বা পদায়ন সরাসরি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের তত্ত্বাবধানেই হবে বলে বিএনপিকে আশ্বস্ত করেছেন সরকারপ্রধান।
বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার রাতে রাষ্ট্রীয় ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাদের তিনি এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেন।
‘নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে’
আমীর খসরু বলেন, “ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের দিকে যখন, তখন নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য নানা ধরনের কার্যক্রম আমরা মাঠে দেখতে পাচ্ছি। আমরা তো চাইলে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে রাস্তায় যেতে পারতাম সমস্যাগুলো নিয়ে…আমরা রাস্তায় যাই নাই। আমরা দায়িত্বশীল একটা রাজনৈতিক দলের ভূমিকা পালন করছি…আমরা জোর করে কিছু আদায় করতে যাই নাই। কারণ আমি তো গণতন্ত্রে বিশ্বাসী।
“আমরা কী দেখছি? জনগণের ম্যান্ডেটের বাইরে কিছু তাদেরকে দিতে হবে। জনগণের কাছে গিয়ে ম্যান্ডেট নিতে রাজি নেই। আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে প্রত্যেকটি দলের অধিকার আছে তার ম্যান্ডেট নেওয়ার। যে সমস্ত দাবি দাওয়া নিয়ে রাস্তায় নেমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার করা হচ্ছে এবং নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার যে চেষ্টা হচ্ছে বিভিন্ন দাবি দাওয়া তুলে রাস্তায় গিয়ে এগুলো তো ঠিক না।”
‘রাস্তার আন্দোলনের দিন শেষ’
আমীর খসরু বলেন, “রাস্তায় যাওয়ার তো দিন শেষ হয়ে গেছে শেখ হাসিনাকে বিদায় করা হয়েছে। এখন যাবেন জনগণের কাছে। রাস্তায় নয় এখন যাবেন জনগণের কাছে যেতে হবে।
‘‘ আপনার দলের যদি কোন কিছু আপনি মনে করেন করবেন বাংলাদেশের মানুষের জন্য, আপনার যত দাবি-দাওয়া আছে সবগুলো নিয়ে আগামী নির্বাচনে আপনার ম্যানিফেস্টোতে নিয়ে জনগণের কাছে যান। জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সংসদে পাস করেন। আপনি রাস্তায় নেমে জোর করে করতে গেলে তাইলে তো আপনি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী হলেন না। আপনি তো গণতন্ত্রের প্রতিপক্ষ হিসেবে কাজ করছে।”
আসন্ন নির্বাচনে মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতা-কর্মীদের সর্বাত্মক ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, দেশটাকে স্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক একটি রাষ্ট্রে জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে একটি রাষ্ট্র গঠন করতে হবে যেখানে সকলের জন্য সমান অধিকার থাকবে।”
“বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে প্রত্যেকটি নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে, বর্ণ-ইতিহাস-সংস্কৃতি-ভাষা নির্বিশেষে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র যাতে আমরা গঠন করতে পারি এই চেতনায় আমরা এগিয়ে যাব।”
ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান, প্রয়াত মশিউর রহমান যাদু মিয়ার মেয়ে রিটা রহমান, মুক্তিযোদ্ধা মাসুদ হোসেন আলমগীরসহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন।