জামায়াতকে আমরা আর মাথায় উঠতে দেব না: সাক্ষাৎকারে ফখরুল

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির কাছ থেকে জামায়াতে ইসলামী ৩০টি আসনে ছাড় চেয়েছিল। সেই প্রস্তাবে বিএনপি সম্মত না হওয়ায় দলটি এখন পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে মাঠে নেমে বিএনপির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এজন্য বিএনপি আর জামায়াতে ইসলামীকে ছাড় দেবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাংলা দৈনিক 'এই সময়'কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফখরুল এসব কথা বলেন। সম্প্রতি সাক্ষাৎকারটি নেন পত্রিকাটির সাংবাদিক অনমিত্র চট্টোপাধ্যায়। জামায়াতে ইসলামী, আগামী নির্বাচন, ভারতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কসহ নানা প্রসঙ্গে কথা বলেছেন মির্জা ফখরুল।
গতকাল সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুলকে প্রশ্ন করা হয়, আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন কি আদৌ হবে? জামায়াতে ইসলামী এবং এনসিপি যেভাবে একটার পরে একটা নতুন দাবি তুলছে এবং সেগুলো পূরণ না হলে নির্বাচন হতে দেবে না বলছে, অনেকেই সংশয়ে। হলেও দেশজুড়ে প্রবল অশান্তি ও রক্তপাত হবে?শিরোনাম :
সন্ধ্যায় দেখা যেতে পারে রবিউস সানির চাঁদ জামায়াতকে আমরা আর মাথায় উঠতে দেব না: সাক্ষাৎকারে ফখরুল কুমিল্লায় পাওয়া গেল সাড়ে তিনশ বছরের পুরনো কুরআন শরিফ! নিপীড়িত উইঘুরদের নিয়ে নিশ্চুপ কেন মুসলিম দেশগুলো, জানালেন মানবাধিকারকর্মী বিশ্বকে বদলাতে তরুণদের ‘থ্রি-জিরো ক্লাব’গড়ে তোলার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার এনসিপিনেতা আখতারের ওপর ডিম নিক্ষেপকারী যুবলীগনেতা গ্রেপ্তার যুব মজলিস ঢাকা মহানগর দক্ষিণের তরবিয়তি সফর উলামায়ে উম্মতের ৫টি বিষয়ে কাজ করা প্রয়োজন ১৫ জনের জামায়াতে যোগদান, বিএনপি বলছে কখনোই তারা দলে ছিলেন না মুন্সিগঞ্জের ধীপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দল।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির কাছ থেকে জামায়াতে ইসলামী ৩০টি আসনে ছাড় চেয়েছিল। সেই প্রস্তাবে বিএনপি সম্মত না হওয়ায় দলটি এখন পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে মাঠে নেমে বিএনপির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এজন্য বিএনপি আর জামায়াতে ইসলামীকে ছাড় দেবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাংলা দৈনিক 'এই সময়'কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফখরুল এসব কথা বলেন। সম্প্রতি সাক্ষাৎকারটি নেন পত্রিকাটির সাংবাদিক অনমিত্র চট্টোপাধ্যায়। জামায়াতে ইসলামী, আগামী নির্বাচন, ভারতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কসহ নানা প্রসঙ্গে কথা বলেছেন মির্জা ফখরুল।
গতকাল সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুলকে প্রশ্ন করা হয়, আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন কি আদৌ হবে? জামায়াতে ইসলামী এবং এনসিপি যেভাবে একটার পরে একটা নতুন দাবি তুলছে এবং সেগুলো পূরণ না হলে নির্বাচন হতে দেবে না বলছে, অনেকেই সংশয়ে। হলেও দেশজুড়ে প্রবল অশান্তি ও রক্তপাত হবে?
জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতেই ভোট হবে। সংশয়ের কোনো জায়গা নেই। কোনো অশান্তি হবে না। মানুষ ভোটাধিকার ফেরত চাইছেন, নির্বাচন চাইছেন। উৎসবের মতো ভোট হবে ফেব্রুয়ারিতে।
সাংবাদিক প্রশ্ন করেন-তবে জামায়াত যে বলছে পিআর (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি ছাড়া ভোট হবে না, এনসিপি প্রচলিত সংবিধান বাতিল করে আগে গণপরিষদের নির্বাচন চাইছে। না হলে ভোট হতে দেবে না বলছে...।
এই বিষয়ে ফখরুল বলেন, জামায়াত ভোটে আসবে। পিআর–টিআর নয়, মানুষ যে পদ্ধতিতে ভোট বোঝেন, সেই প্রচলিত পদ্ধতিতেই হবে বাংলাদেশের ভোট। জামায়াতও দেখবেন অংশ নেবে। আর এনসিপি-কে আমরা কোনো শক্তি বলেই আর মনে করি না। এটা ঠিক এই ছাত্ররাই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভের বারুদে আগুনটা দিয়েছিল। এখন আর তাদের কিছু নেই। ডাকলে লোকও আসে না।
শোনা যায়, এনসিপি নাকি আপনাদের কাছে আসন চেয়েছিল? এমন প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, না। এনসিপি কখনো চায়নি। তবে জামায়াত চেয়েছে। এনসিপির এখন একমাত্র লক্ষ্য, বিএনপিকে সরকার গঠন করতে না দেওয়া।
জামায়াত কি ৫০টা আসন চেয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, ৩০টা চেয়েছে। আমরা উৎসাহ দেখাইনি। অনেক কম একটা সংখ্যার কথা বলেছি, যা তাদের মনোঃপূত হয়নি। আপনাকে আশ্বাস দিচ্ছি, জামায়াতকে আর আমরা মাথায় উঠতে দেব না। তারা যত বড় না শক্তি, আমরা অকারণে তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। পিআর-টিআর সবই বিএনপির ওপরে চাপ সৃষ্টির কৌশল। জামায়াত কিন্তু নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করছে। আসলে দেশের প্রবলভাবেই মানুষ নির্বাচন চাইছেন। সেনাবাহিনী চাইছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসও চাইছেন।
কিছু দিন আগেও তো ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে এনসিপির প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছিল বিএনপি। তিনি নির্বাচন করাতে চান না, এমন কথাও বলা হয়েছে। নির্বাচনের বিষয়ে এখন ড. ইউনূসের ওপরে আস্থা রাখছেন কি না- এমন প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, পরিস্থিতি বদলেছে। দলের পক্ষে আমি তার সঙ্গে কথা বলি। দেখছি, এখন তিনি সর্বোচ্চ সিরিয়াস। আন্তরিকভাবেই চান ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হোক। আগস্টের ৫ তারিখে ইউনূস নির্বাচনের দিন ঘোষণা করলেন। তার আগের দিন রাতে ইউনূস সাহেবের বাসভবনে তার ও সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ–জামানের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আমার দীর্ঘ আলোচনা হয়। সেনাপ্রধান বলেন, পুলিশ কম বলে এক বছর ধরে সেনাদের রাস্তায় ডিউটি করতে হচ্ছে, যা একেবারেই কাম্য নয়। তিনি ডিসেম্বরে ভোটের কথা বলেছিলেন, ফেব্রুয়ারিতে আপত্তি নেই। সব রকম সহযোগিতা করবেন। তিনি চান, নির্বাচন করিয়ে বাহিনী এবার ব্যারাকে ফিরুক। ড. ইউনূসও ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়ে অব্যাহতি চান। তিনি বলেছেন, আর চাপ নিতে পারছেন না। আমরাও আশ্বাস দিয়েছি, সরকার গঠনের পরেও সংস্কার চলবে। স্বৈরাচারীদের বিচার প্রক্রিয়াও চলবে। তিনটি আলাদা বিষয়। অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো ম্যান্ডেট নেই, তাদের সংস্কারের গুরুত্বই বা কী! নতুন কথা তারা বলেনি। বিএনপির ৩১ দফায় সবই আছে।
সম্প্রতি যেদিন জাতীয় পার্টির অফিস ভাঙচুর হলো, তার পরের দিন বিএনপি, জামায়াত এবং এনসিপি নেতৃত্বকে বাসভবনে ডেকে পাঠিয়েছিলেন ইউনূস। কেন? তিনি কি কোনো বিশেষ বার্তা দিলেন আপনাদের?
জবাবে খানিক চুপ করে থাকার পর মির্জা ফখরুল বলেন, ঠিকই বলেছেন। সেদিন ড. ইউনূস আমাদের একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। সে বার্তা সংক্ষিপ্ত, এক লাইনের। এক ধরনের ফাইনাল বেল বলতে পারেন। ইউনূস সেদিন আমাদের জানিয়ে দেন, ফেব্রুয়ারিতে ভোটের বাস ধরতে না পারলে তিনি মার্চ থেকে আর থাকবেন না। এমন পরিস্থিতি যেন না হয়, যাতে ভোটটাই করা গেল না।
আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) বা ওয়ার্কার্স পার্টির মতো তাদের শরিকেরা আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না- এমন প্রশ্নে ফখরুল বলেন, আমরা বলেছি আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিকেরা সবাই, এমনকি জাতীয় পার্টিও নির্বাচনে অংশ নিক। একটা সুষ্ঠু ও অবাধ ভোট হোক। এজন্য অনেকে আমাকে ভারতের এজেন্ট, আওয়ামী দালাল বলে গালাগাল দিচ্ছে। কিন্তু শেখ হাসিনার অপকর্ম আমরাও কেন করব? হাসিনা ১৫ বছর প্রতিপক্ষকে ভোটে দাঁড়াতেই দেননি, তার শাস্তি পেয়েছেন। একই কাজ করলে আমরাও তো প্রতিফল পাব। তবে মানুষ এত রক্ত দেখেছেন, এত প্রাণহানি— তাদের মধ্যে আওয়ামী-বিরোধিতা রয়েছে।
ড. ইউনূস বলছেন, ফেব্রুয়ারিতে ভারতের প্রভাব ছাড়া নির্বাচন ও সরকার গঠন হবে। সত্যিই কি বাংলাদেশে ভারতের কোনো প্রভাব আর অবশিষ্ট নেই? জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ভারত মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী। সেই সময়ে এক কোটি মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে ভারত। ভৌগোলিকভাবেও বাংলাদেশের তিন দিকে ভারত, এক দিকে সাগর। সুতরাং ভারতের প্রভাব বাংলাদেশে থাকবেই। সমস্যা হলো, বাংলাদেশ বলতে শুধু আওয়ামী লীগকে বুঝেছে ভারতের শাসকেরা। আওয়ামী লীগের ভাষ্য মেনে বিএনপি আর জামায়াতকে একই বন্ধনীতে ফেলেছে। জামায়াত আর বিএনপির রাজনীতি তো এক নয়। আমরা অসাম্প্রদায়িক, মধ্যপন্থী একটি গণতান্ত্রিক দল। মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত সংবিধান রক্ষায় আজও আমরা স্বাধীনতা-বিরোধীদের সঙ্গে লড়াই করছি। বামেরা আমাদের সঙ্গে রয়েছে।
২৫ বছর ধরে জামায়াত আপনাদের শরিক। দুটো নাম তাই একসঙ্গে উচ্চারিত হয়- ভারতীয় সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, ভুল। আওয়ামী লীগ এই অপপ্রচারটা ভারতকে বিশ্বাস করিয়েছে। তারা শুধুই নির্বাচনী শরিক। তারা ধর্মীয় রাজনীতি করে, আমরা করি না। আসলে আওয়ামী চশমা দিয়ে ভারত বাংলাদেশকে দেখেই ভুলটা করেছে। বাকিদের সঙ্গে যোগাযোগই রাখেনি। আজ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ক্ষোভের পাহাড় তীব্র ভারত-বিরোধিতায় পর্যবসিত হয়েছে। তবে বিএনপির পক্ষে আমি আশ্বাস দিচ্ছি, জামায়াতকে আর সুবিধা নিতে দেবো না। আমরা চাই, ভারত সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখুক। আমরা কলকাতা যাব, কলেজ স্ট্রিট থেকে কত বই কিনেছি। আবার সেই সুযোগ পাব। সিনেমা, থিয়েটার দেখব। মানুষে মানুষে অবাধ যোগাযোগ হবে। ভিসা প্রক্রিয়া সাবলীল হবে। ভারতীয়রাও বাংলাদেশে স্বাগত। ভুল বোঝাবুঝির অবসান হোক।