শুক্রবার ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, অগ্রাহায়ণ ২৯ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

৫ তারিখের আগে কি আমরা এই বাংলাদেশকে চিনতাম: ফখরুল

 প্রকাশিত: ১৮:২৯, ২৭ নভেম্বর ২০২৪

৫ তারিখের আগে কি আমরা এই বাংলাদেশকে চিনতাম: ফখরুল

দেশে যা যা হচ্ছে, তা দেখে আঁৎকে উঠেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রশ্ন রেখেছেন, ‘এটা কোন বাংলাদেশ?’

৫ আগস্টের আগে এই বাংলাদেশকে চিনতেন না মন্তব্য করে তিনি এও জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশকে ‘কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে’ সেটা মানুষ বুঝতে পারছে কি না।

পরে নিজেই বলেন, “বুঝি না, বুঝলে আজকের এই সমস্ত দায়িত্বহীন কথাবার্তা আমাদের মুখ দিয়ে বেরুত না।”

বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনায় বিএনপি নেতা এসব কথা বলেন।

১৯৯০ সালে সেনা শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদবিরোধী আন্দোলনে প্রাণ হারানো চিকিৎসক শামসুল আলম মিলনের মৃত্যুবার্ষিকীতে তার স্মরণে এই আলোচনার আয়োজন করে বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাব।

গণতন্ত্রের জন্য মিলনের আত্মত্যাগের পরও কেন লড়াই করতে হচ্ছে, সেই প্রশ্ন এনে দেশের সাস্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, “আমি গত কয়েকটা দিনে চিন্তিত, উদ্বিগ্ন; ভয়াবহ অবস্থা চার দিকে। আপনি চিন্তা করতে পারেন কি উন্মাদনা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে? ধর্মকে কেন্দ্র করে মারামারি শুরু হয়েছে! আমরা এই বাংলাদেশ দেখতে চাই না। আপনি চিন্তা করতে পারেন, মুক্ত স্বধীন মিডিয়ার জন্য এতদিন লড়াই করলাম, তার অফিস পুড়িয়ে দিচ্ছে! আমরা এই বাংলাদেশ দেশকে চাই না, আমি অন্তত দেখতে চাই না।

“আমি প্রথম আলো, ডেইলি স্টারসহ অন্যান্য সমস্ত পত্রিকাগুলোতে যে আক্রমণ শুরু হয়েছে, তার তীব্র নিন্দা জানাই।”

‘আমরা কি এটাই চেয়েছি?’

সরকার পতনের পর যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এমন বাংলাদেশ কাম্য ছিল কি না, সেই প্রশ্নও রাখেন বিএনপি নেতা।

তিনি বলেন, “প্রাণ যে দিল এত মানুষ তার ফলশ্রুতি কি এই বাংলাদেশ? আমরা কি এটাই চেয়েছি? এখনও তিন মাস হয়নি, এখনই রাস্তায় রাস্তায় লড়াই শুরু হয়েছে। তিন মাসও যায়নি, এখনই একজন আরেকজনের বুকে রক্ত ঝরাচ্ছে।

“তিন মাসও যায়নি এখন পত্রিকা অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা কোন বাংলাদেশ? আমরা কি ৫ (অগাস্ট) তারিখের আগে এই বাংলাদেশকে চিনতাম? আজকে কেন এই ভয়াবহ বিভাজন? আজকে কেন এই ভয়াবহ হিংসা, আজকে কেন এই ভয়াবহ অস্থিরতা? কোথায় সমস্যা কোথায়?”

বিএনপি নেতা বলেন, “কিছু সংখ্যক মানুষ আছে সোশাল মিডিয়ায়, আমি যখন দেখি আতঙ্কিত হই, ‘কি উন্মাদনা, পুড়িয়ে দাও, জ্বালিয়ে দাও’, এই ধরনের কথাবার্তা। চিন্তা করতে পারেন কোন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশকে?

“আমরা কি বুঝি আমাদের ভয়টা কোথায়, আমরা কি বুঝি আমাদের আতঙ্কটা কোথায়? আমরা কি বুঝি আততায়ী কোথায় ছুরি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের পেছনে?”

‘আসল চেহারা’ বের হয়ে আসছে

ফখরুল বলেন, “এবার সুযোগ এসেছিল সবাই এক সাথে একজোট হয়ে পরিবর্তন নিয়ে আসি। তিনটা মাস হয়নি। এর মাধ্যমেই আমাদের ‘আসল চেহারা’ বের হয়ে এসেছে।

“এই রকম ‘চেহারা’ নিয়ে কোনো দিল সফল হওয়া যায় না। যতই বড় বড় কথা বলি, যতই লম্বা লম্বা বক্তৃতা করি, বিশ্বকে এক করার চেষ্টা করি, হয় না। আমার নিজের ঘরেই যদি বিভাজন বিভেদ থেকে যায়, আমরা কোনোদিন ঠিক করতে পারব না।”

কিছু সংখ্যক মানুষ নিজেদের ‘অত্যন্ত জনপ্রিয়’, ‘সবচেয়ে দেশপ্রেমিক’ মনে করে গোটা জাতিকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিয়ে, উসকে নিয়ে একটা অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা।

তিনি বলেন, “আমি কারও নাম বলব না, বলতে চাই না তবে আপনারা (চিকিৎসক) সমাজের শিক্ষিত মানুষ, গভীরভাবে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করবেন যে, যারা বিভাজনের দিকে ঠেলছে, অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলছে, তারা আমাদের আসলে শত্রু না মিত্র… এই জিনিসগুলো বুঝতে হবে।”

‘বিভাজন ছেড়ে এক হতে হবে’

দেশ রক্ষার সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘আমরা একেবারে জীবন সায়াহ্নে। আপনাদের বলতে চাই, যদি আপনারা দেশকে রক্ষা করতে চান, আপনারা স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে চান, আপনাদের অধিকারকে রক্ষা করতে চান তাহলে আপনারা সবাই ঐক্যবদ্ধ হোন।

“বিভাজনের কাছে আপনারা কখনো মাথা নোয়াবেন না, অন্যায়ের কাছে মাথা নোয়াবেন না, অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবেন না।”

তার মতে এই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার’ জন্য। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই ছাত্র-জনতার রক্তের ওপর দিয়ে তৈরি হওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি নেতা।

“আরেকটা কথা পরিষ্কার করে বলতে চাই, যারা অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বে রয়েছেন, তারা এমন কোনো কথা বলবেন না দয়া করে তা জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে।”

ড্যাবের সভাপতি হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, ফরহাদ হালিম ডোনার, একেএম আজিজুল হক, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, ড্যাবের মহাসচিব আব্দুস সালামও বক্তব্য রাখেন।

কথা বলেন আবদুস সেলিম, মোসাদ্দেক হোসেন বিশ্বাস ডাম্বেল, জহিরুল ইসলাম শাকিল, শহিদুর রহমান, শহীদুল আলম, সিরাজুল ইসলাম, মোস্তাক রহিম স্বপন ও মেহেদী হাসান।

ডা. মিলনের প্রতি শ্রদ্ধা

১৯৯০ সালের এই দিনে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সেনাশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদবিরোধী গণঅভ্যুত্থানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সামনে গুলিতে নিহত হন ডা. মিলন।

তার এই মৃত্যু আন্দোলনে নতুন গতি সঞ্চারিত হয় এবং ৬ ডিসেম্বর এরশাদ সরকারের পতন ঘটে। সেই থেকে প্রতি বছর দেশের বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনীতিক দল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনটি শহীদ ডা. মিলন দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।

সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গণে মিলনের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধে নব্বইয়ের ছাত্রঐক্যের নেতারা আমান উল্লাহ আমানের নেতৃত্বে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।

সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরীর নেতৃত্বে চিকিৎসকরাও মিলনের স্মৃতি সৌধে শ্রদ্ধা জানায়।