যৌথ জীবনযাপনের অন্যতম শর্ত গোপনীয়তা রক্ষা

যৌথ জীবনযাপনের কিছু নিয়মনীতি আছে। আছে কিছু শর্ত। সেগুলো মানতে না পারলে আপনি কখনো কারও সঙ্গী হওয়ার যোগ্য না। কোনো এক কিতাবে সেই শর্ত ১০টি লেখা হয়েছে। তন্মধ্যে অন্যতম হলো পরস্পর গোপনীয়তা রক্ষা করা।
দুজন মানুষের পরস্পর সম্পর্কের কিছু বিষয় থাকে একদম গোপন। কাছের বলেই তাকে জানানো হয়েছে, কিংবা জেনেছে। বিশ্বাস করেই অপর সঙ্গী তাকে সব বলেছে, কিংবা বেপরোয়াভাবে করেছে ও চলেছে। এটি একটি আমানত। উভয় সঙ্গীর দায়িত্ব পরস্পর সেই আমানত রক্ষা করা। যে এই আমানত রক্ষা করতে পারবেনা, সে আসলে সঙ্গী বা বন্ধু হওয়ার যোগ্য নয়।
বিষয়টি একটু খুলে বলি।
এই ধরুন, দুজন মানুষের বন্ধুত্ব হয়েছে। পরে সে বন্ধুত্ব ভেঙে গেছে।দুজন নারী-পুরুষের দাম্পত্য সম্পর্ক হয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত সম্পর্ক ভেঙে গেছে।অথবা বলুন- আপনি কোনো প্রতিষ্ঠানে একসময় কাজ করেছেন। এখন সেখান থেকে চলে এসেছেন।আপনি কোনো মাদরাসার শিক্ষক বা মসজিদের ইমাম ছিলেন। এখন সেখানে নেই।আপনি কোনো দল বা সংগঠন করতেন। এখন সেটা করেন না।
আপনি কোনো হুযুর বা পীর সাহেবের খাদেম ছিলেন। এখন আপনি দূরে।আরও ছোট্ট করে বলি- আপনি কোন বাড়ির ওপর দিয়ে যাওয়া-আসা করেন। তারা আপনাকে সম্মান জানিয়ে এতে বাধা দেয় না।উপরের চরিত্রগুলোতে অপর পক্ষের সকল বিষয়ে গোপনীয়তা রক্ষা করা জরুরি। অকারণে পরস্পর যে গোপন জিনিস করা যাবে না। যে বাড়ির ওপর দিয়ে চলতেন, আসা-যাওয়ায় যা কিছু নজরে পড়েছে, তা আপনি বাইরে প্রকাশ করতে পারবেন না। তদ্রূপ পূর্বমাদরাসা থেকে চলে আসার পরে আকারণে সে মাদরাসা বা মুহতামিমের বদনাম করা যাবে না। পূর্বের মসজিদ এলাকার বদনাম করা শোভনীয় নয়। আগের সংগঠনের দোষগুলো অকারণে প্রকাশ করা শিষ্টাচার নয়।করলে আপনি বিশ্বাস ভঙ্গ করলেন। আপনাকে আর কেউ বিশ্বাস করবে না। কেউ আপনাকে কাছে যেতে দিবে না।হাঁ, যদি কোনো বিষয়ে মাজলুম হন, তখন কেবল উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে কেবল সেই বিষয়টিই তুলে ধরতে পারবেন, অন্য বিষয়গুলি নয়।
কিংবা যদি আপনার ওই সঙ্গী দীনধর্ম বিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত হয়, কিংবা কারও ওপর জুলমে উদ্যত হয়, কিংবা দোষটি প্রকাশ না করলে কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার শঙ্কা আছে, তখনও উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে তার নালিশ করা যেতে পারে। এবং মাজলুমকে সতর্ক করতে পারবেন।
এককথায়, স্বাভাবিক অবস্থায় কেউ কারও দোষ প্রকাশ করতে পারবে না। কিংবা একবিষয়ে ঝগড়া লেগে যাওয়ায় তাকে অপমান করার জন্য এমন সব গোপনীয়তা ফাঁস করে দেওয়া যাবে না, যার সাথে সৃষ্ট জটিলতার কোনো সম্পর্ক নাই, এমন করা জায়েয হবে না।বিয়ের বিচ্ছেদ হতেই পারে। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মনমালিন্য হতেই পারে। এর বহুবিদ কারণ থাকতে পারে। কিন্তু টানাপোড়েন বা বিচ্ছেদের পর স্ত্রী তার স্বামীর বিরুদ্ধে লেগে যাওয়া, কখন কোন দিন কোন নারীকে চোখটিপ দিয়েছে, কাকে দেখে সুবহানাল্লাহ বলেছে, কখন বাচ্চার নুনু ধরে টানাটানি করেছে, কোনদিন টিভি মুভি বা এডল্টপর্ণ দেখেছে, এসব প্রকাশ করে দেওয়া দীন ও ভদ্রতার পরিপন্থী। এ জাতিয় মেয়েরা স্ত্রী হওয়ার অযোগ্য। তদ্রুপ স্বামী তার প্রাক্তন স্ত্রীর সম্মানহানি করে সব গোপনিয়তা নষ্ট করা চরম খেয়ানত।
হাদীস শরীফে গোপনীয়তা রক্ষার বিশেষ তাগিদ রয়েছে। বিশেষকরে স্বামী-স্ত্রীকে বলা হয়েছে, যেন রাতের গোপনিয়তা যেন দিনে প্রকাশ করে না দেয়।
নবীজি সা. ইরশাদ করেছেন, “যেব্যক্তি মুসলমানের গোপনীয়তা রক্ষা করবে, আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তার দোষ গোপন করবেন।”ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয় যারা পাবলিক প্লেসে প্রকাশ করে এবং যারা খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তা বের করে মজা নেয়, এরা দুষ্ট শয়তান।নবীজি সা. একবার হযরত আনাস রাযি. কে একটি গোপন কাজে পাঠিয়েছিলেন। পথিমধ্যে তাঁর মা উম্মে তালহা রাযি. জিজ্ঞাস করলেন, বাছা, কই যাও?
বললেন, একটি গোপন কাজে, নবীজি পাঠিয়েছেন।
মা বললেন : ঠিক আছে যাও। তবে সাবধান, নবীজির কোন গোপন বিষয় কখনো ফাঁস করো না।এই ছিল সোনালী যুগে মায়েদের শিক্ষা। এরা ছিল আদর্শ মা!কয়েক মাস আগে একজন পরিচিত আলেমকে তার স্ত্রী জনসম্মুখে নেংটা করে দিয়েছে। এখন আবার একজন দাঈকে তার স্ত্রী একই কা- করছে। এরা আসলে সঙ্গী হওয়ার যোগ্য না।
যে বিষয়ে সংকট সেটা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে বলতে বাধা নেই। কিন্তু অপ্রাসঙ্গিক বিষয় রাস্তায় বলে বেড়ানো চরম অভদ্রতা ও অযোগ্যতা।দায়িত্বশীল পুরুষ দেখেশুনে কনে বিয়ে করা উচিত। কী দেখবেন, সেটা নবীজির হাদিসে পরিস্কার আছে।হে আল্লাহ, সকল স্বামী-স্ত্রীকে পরস্পর উত্তম সঙ্গী হওয়ার তাওফীক দাও!
লেখক: মাদরাসা শিক্ষক, চিন্তক ও কলামিস্ট।