ইন্টারফেইথ: ধর্মীয় ঐক্যের নামে ঈমানহানির গোপন জাল

অমুসলিমদের আচার-আচরণ ও কালচার Vs ইসলামী সভ্যতার মূলনীতি। পর্ব ৪
আজকের পৃথিবীতে “ধর্মীয় সম্প্রীতি” বা Interfaith Dialogue কথাটি এমনভাবে প্রচারিত হচ্ছে যেন এটি মানবতার এক মহান শিক্ষা। “Inter” মানে পারস্পরিক, আর “Faith” মানে ধর্ম বা বিশ্বাস অর্থাৎ Interfaith মানে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে বোঝাপড়া, সহযোগিতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রচেষ্টা। বাহ্যিকভাবে এটি খুব আকর্ষণীয় ও মানবিক মনে হলেও, বাস্তবতা অনেক ভিন্ন। মুসলিম উম্মাহকে আকীদাগতভাবে দুর্বল করার জন্য আধুনিক যুগের এক সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্রের নাম হচ্ছে ইন্টারফেইথ ফিতনা। এটি এমন এক মতবাদ, যার উদ্দেশ্য মুসলমানদের ঈমান, আত্মপরিচয় ও আল্লাহর একত্ববাদের বিশ্বাসকে ধীরে ধীরে নরম ও আপসকামী করে তোলা।
সুন্দর নামের আড়ালে ভয়ংকর উদ্দেশ্য
“ইন্টারফেইথ ডায়ালগ”, “ইন্টারফেইথ হারমোনি”, “ইন্টারফেইথ অ্যালায়েন্স”এসব নাম শুনতে যেমন শান্তি ও সম্প্রীতির কথা মনে হয়, আসলে এগুলোর পেছনে কাজ করছে এমন কিছু চিন্তাধারা যেগুলোর লক্ষ্য মুসলমানদের মনে এই ধারণা তৈরি করা যে, সব ধর্মই সমান ও সত্য। অথচ এটি সরাসরি কুরআনের মূল আকীদার বিরোধী।
ইতিহাসে যেমন বাদশাহ আকবর “দ্বীন-ই-ইলাহী” নামে সব ধর্মের মিশ্রণে এক কুফরি ধর্ম তৈরি করতে চেয়েছিল, আজকের “ইন্টারফেইথ” আন্দোলনও তেমনই এক আধুনিক রূপ। যেখানে ইসলামকে অন্য ধর্মের সঙ্গে এক কাতারে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
কুরআনের স্পষ্ট ঘোষণা
১. ইসলামই একমাত্র গ্রহণযোগ্য দ্বীন:
إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللَّهِ الإِسْلاَمُ
নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট (গ্রহণযোগ্য) দীন কেবল ইসলামই। সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৯
তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন:
‘ইসলাম’ শব্দের অর্থ আত্মসমর্পণ। আল্লাহপ্রদত্ত ধর্মকে এ নামে অভিহিত করার কারণ, এ ধর্মের অনুসারী ব্যক্তি নিজেকে সম্পূর্ণরূপে আল্লাহ তা‘আলার হাতে সমর্পণ করে ও তাঁর যাবতীয় আদেশ শিরোধার্য করে। সে কারণেই এর অনুসারীকে মুসলিম অর্থাৎ আত্মসমর্পণকারী বলে। এমনিতে তো সকল আসমানী ধর্মই ইসলাম। কিন্তু প্রাচীন ধর্মগুলোকে যেহেতু তাদের অনুসারীগণ যথাযথভাবে সংরক্ষণ করেনি, বরং ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় তা বিকৃত করে ফেলেছে, অবশেষে শেষ নবীর আবির্ভাবের পর তার শরীআত দ্বারা সেগুলোর অনেক বিধান রহিতও হয়ে গেছে, তাই সেগুলো আর ইসলাম নামে অভিহিত হওয়ার উপযুক্ত থাকেনি। এখন ইসলাম হল সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তাফা (সা.) কর্তৃক আনীত ও প্রচারিত দীন ও শরীআত, যা এক পরিপূর্ণ, সার্বজনীন ও কিয়ামতকাল পর্যন্ত স্থায়ী ধর্ম।
২. ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্ম গ্রহণযোগ্য নয়:
وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الإِسْلاَمِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ
যে ব্যক্তিই ইসলাম ছাড়া অন্য কোনও দীন অবলম্বন করতে চাবে, তার থেকে সে দীন কবুল করা হবে না এবং আখিরাতে সে মহা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৮৫
নোট: এটি ইন্টারফেইথ মতবাদের মূল দাবিকে সরাসরি খণ্ডন করে।
৩. তাওহীদের আহ্বান: একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করো:
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ وَالَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ইবাদত কর, যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্বে যারা গত হয়েছে তাদেরকে, যাতে তোমরা মুত্তাকী হয়ে যাও।
সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২১
নোট: এই আয়াত মানবজাতিকে একমাত্র আল্লাহর ইবাদত /উপাসনার দিকে আহ্বান করে, কোনো ধর্মীয় মিশ্রণের দিকে নয়।
৪. আল্লাহ ছাড়া কারো উপাসনা শিরক
وَمَن يَدْعُ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آخَرَ لَا بُرْهَانَ لَهُ بِهِ فَإِنَّمَا حِسَابُهُ عِندَ رَبِّهِ ۚ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الْكَافِرُونَ
যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন মাবুদকে ডাকে, যে সম্পর্কে তার কাছে কোন রকম দলীল-প্রমাণ নেই, তার হিসাব তার প্রতিপালকের নিকট আছে। জেনে রেখ, কাফেরগণ সফলকাম হতে পারে না।
সূরা আল-মু’মিনূন, আয়াত ১১৭
নোট: ইন্টারফেইথের নামে সকল ধর্মকে সত্য বলা শিরকের দরজা খুলে দেয়।
৫. মুমিনদের জন্য স্পষ্ট নির্দেশ
قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ. لَا أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَ. وَلَا أَنتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ. لَكُمْ دِينُكُمْ وَلِيَ دِينِ
বলো: হে কাফেরগণ! আমি তোমাদের উপাস্যদের ইবাদত করি না, এবং তোমরাও আমার উপাস্যের ইবাদত করো না... তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্ম, আর আমার জন্য আমার ধর্ম।
সূরা আল-কাফিরুন, আয়াত ১–৬
নোট: এই সূরাটি ইন্টারফেইথের ধারণার সরাসরি প্রতিবাদ। ইসলাম স্পষ্টভাবে বিশ্বাসের সীমারেখা নির্ধারণ করেছে।
৬. যারা আল্লাহর নির্দেশ বাদ দিয়ে চলে
وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ
যারা আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা অনুযায়ী বিচার করে না, তারাই কাফের।
সূরা আল-মায়িদাহ, আয়াত ৪৪
নোট: আল্লাহর বিধান বাদ দিয়ে মানবতাবাদ বা ধর্মীয় সমঝোতার নামে নতুন নীতি প্রণয়ন করা ঈমানের পরিপন্থী।
৭. আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা সবচেয়ে বড় জুলুম
إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ
নিশ্চয়ই শিরক এক মহা জুলুম।
সূরা লুকমান, আয়াত ১৩
নোট: ইন্টারফেইথ মতবাদে সব ধর্মকে “সত্য” বলা মানে আল্লাহর সঙ্গে অন্যকে শরীক করা।
৮. মুমিনদের পৃথক পরিচয় বজায় রাখো
وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ
তোমাদের মধ্যে যে কেউ তাদের (অবিশ্বাসীদের) সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।
সূরা আল-মায়িদাহ, আয়াত ৫১
নোট: ইসলাম সম্মান শেখায়, কিন্তু বিশ্বাসে আপস করতে বলে না।
৯. ইসলামই শান্তির পথ
وَاللَّهُ يَدْعُو إِلَىٰ دَارِ السَّلَامِ
আল্লাহ আহ্বান করেন শান্তির ঘরের দিকে (অর্থাৎ ইসলামের দিকে)।
সূরা ইউনুস, আয়াত ২৫
নোট: প্রকৃত শান্তি আসে আল্লাহর আনুগত্যে, সব ধর্ম মিশিয়ে নয়।
১০. আকীদাতে কোন অংশিদারিত্ব নেই:
قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ. لَا شَرِيكَ لَهُ
বলুন: নিশ্চয়ই আমার নামায, কোরবানি, জীবন ও মৃত্যু সবই আল্লাহর জন্য, যিনি বিশ্বজগতের রব। তাঁর কোনো শরীক নেই।
সূরা আল-আন’আম, আয়াত ১৬২–১৬৩
নোট: ইসলাম একটি পূর্ণ জীবনব্যবস্থা এখানে অন্য ধর্মের সাথে আপসের কোনো স্থান নেই।
ইন্টারফেইথ: সেক্যুলারিজমের ধর্মীয় সংস্করণ
বাস্তবিক অর্থে ইন্টারফেইথ এবং সেক্যুলারিজম একই মতবাদের দুই নাম। পার্থক্য শুধু বাহ্যিক উপস্থাপনায়। সেক্যুলারিজম চালানো হয় দাড়ি-টুপি বিহীন লোকদের মাধ্যমে, আর ইন্টারফেইথ প্রচারিত হচ্ছে ধর্মীয় পোশাকে, বক্তা ও আলেমদের মাধ্যম দিয়ে যেন মুসলিম সমাজের ভিতর থেকেই বিশ্বাসের ভিত্তি নষ্ট করা যায়।
কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা ও এনজিও এখন মুসলিম দেশগুলো, বিশেষ করে মাদরাসা ও ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে “ইন্টারফেইথ শিক্ষা” প্রচলনের চেষ্টা করছে। প্রশিক্ষণের নামে তরুণ প্রজন্মকে এমন এক ভাবনায় অভ্যস্ত করা হচ্ছে যেখানে ইসলামকে অন্যান্য ধর্মের মতোই একটি বিকল্প হিসেবে দেখা হয় আল্লাহর একমাত্র মনোনীত দ্বীন হিসেবে নয়।
বিশ্বে সক্রিয় ইন্টারফেইথ সংগঠনসমূহ
বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এমন বহু সংগঠন কাজ করছে যারা “ইন্টারফেইথ” ধারণাকে প্রচার করছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
১️। Muslim Christian Dialogue Forum (পাকিস্তান)
এই ফোরামটি মূলত পাকিস্তানি রাজনীতিক ও সুফিবাদপন্থী চিন্তাবিদ তাহিরুল কাদরীর নেতৃত্বে পরিচালিত। সংগঠনটি মুসলিম ও খ্রিষ্টানদের মধ্যে ধর্মীয় আলোচনার মাধ্যমে পারস্পরিক সহনশীলতা প্রচারের দাবি করে।
২️। Interfaith Encounter Association (IEA) – মধ্যপ্রাচ্য
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক এ সংগঠনটি “Middle East Abrahamic Forum” নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছে। তাদের উদ্দেশ্য ইহুদি, খ্রিষ্টান ও মুসলিম সমাজের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন ও ‘আব্রাহামিক ঐক্য’ প্রতিষ্ঠা।
৩️। Messiah Foundation International (যুক্তরাজ্য/পাকিস্তান)
রিয়াজ আহমদ গোহার শাহী নামের এক বিতর্কিত ব্যক্তি এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি নিজেকে মাহদি ও মসীহ দাবি করেন। সংগঠনটি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ভারত, পাকিস্তানসহ নানা দেশে সক্রিয়।
৪️। Project Interfaith (যুক্তরাষ্ট্র)
নেব্রাস্কাভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান, যার প্রতিষ্ঠাতা বেথ কাটজ। তারা নানা কর্মশালা, সেমিনার ও শিক্ষামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে ভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া গড়ে তোলার কাজ করে।
৫️। The Insight Film Festival (যুক্তরাজ্য)
এই সংস্থাটি মূলত চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ‘ধর্মীয় সহনশীলতা’ ও ‘বহুত্ববাদ’ প্রচার করে। তারা বিভিন্ন দেশে ফিল্ম প্রতিযোগিতা আয়োজনের মাধ্যমে তরুণদের ইন্টারফেইথ ধারণায় উদ্বুদ্ধ করে।
৬️। United Religions Initiative (URI) – যুক্তরাষ্ট্র
এটি বিশ্বের অন্যতম বড় ইন্টারফেইথ নেটওয়ার্ক। বর্তমানে ৮০টিরও বেশি দেশে এর কার্যক্রম রয়েছে। তাদের লক্ষ্য “সব ধর্মের মানুষ যেন একে অপরকে ভাই-বোন হিসেবে মেনে নেয়।”
৭️। Jordanian Interfaith Coexistence Research Center (জর্ডান)
জর্ডান সরকারের আংশিক সহায়তায় পরিচালিত এ কেন্দ্রটি ইসলামী ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে সহাবস্থান নিয়ে গবেষণা করে এবং নীতিমালা প্রণয়ন করে।
৮️। Global Peace Pioneers (GPP) – পাকিস্তান
একটি এনজিও হিসেবে পরিচিত এই সংগঠনটি দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম সমাজে ‘শান্তি ও ঐক্য’র নামে ইন্টারফেইথ প্রচার করে।
৯️। OSIS (Organization for Spiritual Interfaith Studies) – নিউইয়র্ক
নিউইয়র্ক সিটি ভিত্তিক এই সংগঠনটি পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ধর্মীয় একাডেমিক বিনিময় ও সম্মেলনের আয়োজন করে থাকে।
১০। Religions for Peace (RFP) – আন্তর্জাতিক
এটি বিশ্বের প্রাচীনতম ও বৃহত্তম আন্তঃধর্মীয় সংস্থা। প্রায় ১০০টিরও বেশি দেশে তাদের শাখা রয়েছে। জাতিসংঘ ও বিভিন্ন সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্বে তারা “ধর্মীয় শান্তি উদ্যোগ” পরিচালনা করে।
১১️। International Association for Religious Freedom (IARF) – যুক্তরাজ্য
এই সংস্থা ১৯০০ সালের দিকে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনকে এক ছাতার নিচে এনে “বিশ্বাসের স্বাধীনতা” ও “ধর্মীয় বহুত্ববাদ” প্রচার করে।
১২️। Interfaith America (যুক্তরাষ্ট্র)
আগে এর নাম ছিল “Interfaith Youth Core (IFYC)”। এটি তরুণ প্রজন্মকে ধর্মীয় বিভেদ ভুলে সহযোগিতা ও সহনশীলতার পথে আহ্বান জানায়।
১৩️। KAICIID – King Abdullah Bin Abdulaziz International Centre for Interreligious and Intercultural Dialogue (অস্ট্রিয়া/সৌদি আরব)
সৌদি সরকারের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত এই কেন্দ্রটি ভিয়েনায় অবস্থিত। তারা “ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সংলাপ” প্রচারের জন্য বিশ্বব্যাপী সম্মেলন আয়োজন করে।
২০২২ সালে অস্ট্রিয়ার সরকার ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর চাপে KAICIID তার সদর দপ্তর ভিয়েনা থেকে লিসবন, পর্তুগাল-এ স্থানান্তর করেছে। এখন এটি “KAICIID Global Centre for Dialogue” নামে কার্যক্রম চালাচ্ছে।
১৪️। World Council of Churches (WCC) – সুইজারল্যান্ড
খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের একটি বৈশ্বিক জোট, যারা বিভিন্ন ধর্মের সঙ্গে সংলাপ ও যৌথ কর্মসূচি পরিচালনা করে “বিশ্বশান্তি” প্রচার করে।
১৫️। Parliament of the World’s Religions (যুক্তরাষ্ট্র)
এটি সবচেয়ে পুরনো ইন্টারফেইথ প্ল্যাটফর্মগুলোর একটি, যা ১৮৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর লক্ষ্য সব ধর্মকে একত্র করে মানবতার একটি “সাধারণ নৈতিক ভিত্তি” তৈরি করা।
ইসলামের অবস্থান
ইসলাম মানবিক সহাবস্থান ও ন্যায়বিচারের শিক্ষা দেয়, কিন্তু কখনোই অন্য ধর্মের বিশ্বাসকে “সত্য” হিসেবে স্বীকার করে না। ইসলামী দৃষ্টিতে শান্তি মানে আল্লাহর নির্দেশিত নিয়মে আত্মসমর্পণ, অন্য ধর্মের সাথে আপস নয়। তাই মুসলিমদের দায়িত্ব হলো ইন্টারফেইথের বাহ্যিক সৌন্দর্যে বিভ্রান্ত না হয়ে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে নিজেদের ঈমানকে রক্ষা করা।
শেষ কথা হচ্ছে,
ইন্টারফেইথ কোনো নিরীহ সামাজিক উদ্যোগ নয়; এটি আধুনিক যুগের এক বুদ্ধিবৃত্তিক ফিতনা। মুসলিমদের উচিত এই ফিতনা থেকে সতর্ক থাকা, কারণ একবার আকীদার ভিত দুর্বল হয়ে গেলে ঈমান অটুট রাখা সম্ভব নয়।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এমন সব চিন্তা ও আন্দোলন থেকে রক্ষা করুন, যা ইসলামি আকীদা ও তাওহীদের বিরুদ্ধে যায়। আল্লাহ একমাত্র সত্য ইলাহ, ইসলামই তাঁর মনোনীত দ্বীন।
মুসলিম বাংলা