আগুন নিভতে দেরি কেন: খবর আসে বিলম্বে, সঙ্গে ‘রাসায়নিকের ভয়’

কোথাও আগুন লাগলে বেশির ভাগ সময়ই ফায়ার সার্ভিসের কাছে খবরটা তাৎক্ষণিক পৌঁছায় না। আবার খবর পাওয়ার পর পর ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো ব্যস্ত শহরের যানজট পেরিয়ে ঘটনাস্থলে যেতেও খানিকটা সময় চলে যায়।
দেশে বড় ধরনের আগুন নেভাতে দীর্ঘ সময় চলে যাওয়ার পেছনে এসব কারণের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ‘রাসায়নিকের ভয়’।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বলছেন, অনুমোদনহীন ‘গোপন’ রাসায়নিকের উপস্থিতির কারণে গত কয়েক বছরে তাদের অনেক সহকর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে। এজন্য এখন ঘটনাস্থলে গিয়ে তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে কিছুটা সময় নিচ্ছেন।
আগুন নেভানোর কাজে বিলম্ব ঘটালেও এই পর্যক্ষেণকে ফায়ার সার্ভিসের ‘বিচক্ষণতা’ হিসেবে দেখছেন কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ।
‘সময়ক্ষেপণ’ হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে ফায়ার সার্ভিস বলছে, রাসায়নিকের আগুন নেভানোর মতো প্রশিক্ষিত জনবল এবং ‘অপর্যাপ্ত’ সরঞ্জামের ঘাটতি রয়েছে।
পাঁচ দিনের ব্যবধানে দেশে বড় ধরনের তিনটি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে, যার প্রত্যেকটি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের।
গেল মঙ্গলবার ঢাকার মিরপুরের রূপনগর এলাকায় একটি রাসায়নিক গুদাম ও পোশাক কারখানায় লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে প্রায় ১৯ ঘণ্টা পর, যেটি এখনও পুরোপুরি নেভানোর কথা জানায়নি ফায়ার সার্ভিস। যে আগুনে ১৬ জনের প্রাণহানি ঘটে।
বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল-সিইপিজেড এলাকায় কারখানা ভবনে লাগা আগুন প্রায় ১৭ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে আসে। পুরোপুরি নেভে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর।
চট্টগ্রামের এই ভয়াবহ আগুন নির্বাপণের খবর দেওয়ার পরপরই শনিবার দুপুর সোয়া ২টার দিকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন লাগে।
ওই আগুন সাত ঘণ্টায় নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেও পুরোপুরি নেভে ২৭ ঘণ্টা পর; রোববার বিকাল ৫টার দিকে।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহম্মেদ খান আগুন নিয়ন্ত্রণে সময় লাগার প্রধান কারণ হিসেবে ‘সময়মতো রেসপন্স না করাকে’ দুষছেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যেখানে আগুন লাগছে, প্রাথমিকভাবে তাদের তো নিজস্ব ফায়ার ফাইটিংয়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে। ফায়ার সার্ভিস যেতে যে ১৫-২০ মিনিট সময়টা লাগছে, ততক্ষণে আগুন বড় হয়ে যাচ্ছে; পরে সেটা সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।”
কেন সময় লাগছে নিয়ন্ত্রণে?
চট্টগ্রামের সিইপিজেড এলাকার কারখানায় আগুন লাগে বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে, যা শনিবার বেলা ২টা ১০ মিনিটে নির্বাপণের কথা জানায় ফায়ার সার্ভিস। কিন্তু রোববার দুপুর পর্যন্ত ওই কারখানায় আগুন নেভানোর কাজ করার কথা জানিয়েছেন সেখানে কর্মরত একজন ফায়ার ফাইটার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগুন নিভে গেছে, কিন্তু হঠাৎ হঠাৎ কোথাও আগুন জ্বলে ওঠে, ধোঁয়া শুরু হয়। আমরা আবার সেখানে পানি দিই, এই করেছি আজকে দুপুর পর্যন্ত।”
আগুন নেভাতে দেরি হওয়ার কারণ হিসেবে তার ভাষ্য, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা ‘কল পান’ দেরিতে।
সিইপিজেডের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রথমে নিকটবর্তী ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা গিয়ে দেখেন, আগুন ষষ্ঠ তলার ওপরে এবং অনেকটা ছড়িয়ে পড়েছে। বহুতল ভবনে কাজ করার জন্য টার্ন টেবিল লেডার ও টিটিএল গাড়িসহ বাড়তি সহায়তা চাওয়া হয় সদর দপ্তরে। এর মধ্যে তারাও নিচ থেকে পানি দিয়ে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাতে থাকেন।
তিনি বলেন, সদর দপ্তর থেকে আশপাশের ফায়ার স্টেশনগুলোকে ডেকে পাঠানো হয়। টিটিএল থাকা কালুরঘাট ও কর্ণফুলি ফায়ার স্টেশন খানিকটা দূরে, যানজট ঠেলে যেতে এবং টিটিএল ব্যবস্থা প্রস্তুত করে কাজ শুরু করতে কিছুটা সময় লেগে যায়। ততক্ষণে আগুন আরও ওপরের দিকে ছড়িয়ে পড়েছে।
এ ফায়ার ফাইটার বলেন, বিপুল পরিমাণে দাহ্য বস্তু থাকায়, কাচ ফেটে ফেটে আগুনের ফুলকি পড়ে নিচের তলাগুলোতেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পুরো ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লাগাটাই ‘স্বাভাবিক’। পর্যাপ্ত ‘আধুনিক’ যন্ত্রপাতি না থাকার কথাও বলেন তিনি।
অগ্নি নির্বাপনে বেশি সময় লাগার কারণ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মো. জিল্লুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে জায়গাগুলোতে আগুন লাগছে সেখানে বিপুল পরিমাণ দাহ্য বস্তু রয়েছে। মিরপুরের আগুনটা রাসায়নিকের গুদামের ছিল। ফলে আগুনের তীব্রতাটা বহুগুণ বেড়ে গেছে।
“ওই গুদামের পাশেই কিন্তু অন্য ভবন ছিল, সেসবে কিন্তু আগুনটা ছড়ায়নি। যেদিক দিয়ে আগুনটা বের হতে পেরেছে, সেখান দিয়েই কিন্তু গার্মেন্টটাতে আগুন লেগেছে। আর চট্টগ্রামের কারখানায় অনেক দাহ্য বস্তু ছিল, বিমানবন্দরের আগুনেও অনেক রাসায়নিক থাকার কথা বলেছেন।”
তবে তিনি ফায়ার সার্ভিসকে ‘দোষ দিতে’ নারাজ। তিনি বলেন, “ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের ডেডিকেশন নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। তাদের যন্ত্রপাতিও এখন অনেক বেড়েছে। তবে যেহেতু এমন ঘটনা বাড়ছে, তাই লোকবল আরও বাড়াতে হবে।”
ফার্স্ট রেসপন্ডারদের মধ্যে ভয় থাকে?
চট্টগ্রামের ওই কারখানায় রাসায়নিকের মজুত থাকার তথ্য দিয়ে ওই ফায়ার ফাইটার বলেন, “কোথাও অনুমোদন নিয়ে রাসায়নিকের মজুত থাকলে সেসব সম্পর্কে ফায়ার সার্ভিস অবগত থাকে। কিন্তু এসব পোশাক কারখানার মালিকরা যাতায়াতের ব্যয় কমানোর জন্য অনুমোদিত জায়গায় রাসায়নিক না রেখে কারখানার ভেতরেই মজুত করেন। অনুমোদন না থাকায় সেসব আমাদের কাছে গোপনও করা হয়।”
সেজন্য এমন কোনো জায়গায় আগুন লাগলে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ‘লুকাতে চান’। এমন কারণে ঘটনাস্থলে গিয়ে ‘সঙ্গে সঙ্গে’ ঝাপিয়ে না পড়ে পর্যবেক্ষণের কথা স্বীকার করেন এই ফায়ার ফাইটার। কারণ কিছু কিছু রাসায়নিকে পানি লাগলে ‘পাল্টা বিক্রিয়া’ হয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা রাসায়নিকের আগুন নেভাতে খুব বেশি ‘অভিজ্ঞ নয়’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “অনেককে বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ করিয়ে আনা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রোটেকশন ‘ড্রেসগুলোও’ আস্তে আস্তে বাড়ানো হচ্ছে।”
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাসায়নিকের আগুন নেভানোর মতো প্রশিক্ষিত জনবল ও সরঞ্জাম পর্যাপ্ত নেই। আমরা যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করছি। প্রশিক্ষিত সদস্য বাড়ানোর কার্যক্রমও চলছে।”
গত ২২ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের টঙ্গীতে একটি রাসায়নিকের গুদামে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের চার কর্মী দগ্ধ হন, যাদের মধ্যে তিনজন মারা গেছেন।
স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি ১৩ জন ফায়ার ফাইটারের মৃত্যু হয় ২০২২ সালে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায়। দুটি আগুনেই রাসায়নিকের খবর ‘গোপন করায়’ মৃত্যু হয় বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস।
ফায়ার সার্ভিসের আরেক সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু নাঈম মো. শহিদউল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অগ্নিসেনা হিসেবে তারা আগুনে ঝাপিয়ে পড়ে, কিন্তু ঝাপ দিয়ে জীবন চলে গেলে লাভ কী!
“এটা তো (পরিস্থিতি বুঝে কাজ শুরু করা) তাদের বোকামি বা দুর্বলতা নয়। এটা বুদ্ধিমানের কাজ, কারণ নিরাপত্তাই প্রথম। যাচাই-বাছাই না করে যদি যায়, এরপর যদি মরে যায়! এজন্য তাদের দোষ দিব না। আমি বলব, তাদের বিচক্ষণতা বেড়েছে।”
বিমানবন্দরেও কেন ২৭ ঘণ্টা
ফায়ার সার্ভিসের অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “কার্গো ভিলেজের যেই অংশে আগুন লেগেছিল, প্রতিটা জায়গাতেই আসলে খোপ খোপ করে ভাগ করা ছিল এবং ভেতরে অনেকগুলো অংশ স্টিলের তৈরি।
“স্টিলের স্ট্রাকচার দিয়ে একতলা থেকে দোতলা পর্যন্ত আছে; যেটার জন্য আমাদের আগুন নেভাতে এত সময় লেগেছে।”
তার ভাষ্য, “এখানে যদি আমাদের যেকোনো ধরনের ‘ডিটেকশন’ ব্যবস্থা যদি থাকত এবং তার সঙ্গে ‘প্রোটেকশন’ ব্যবস্থা থাকত, তাহলে হয়ত এতটা দুর্ঘটনা ঘটতই না। আমাদেরও তদন্ত করে বের করতে হবে, আসলে কখন কীভাবে এ আগুনটা ধরে।”
ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক আবু নাঈম মো. শহিদউল্লাহ বিমানবন্দরের আগুন নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, “যে আগুনটা লাগল, একটা স্টোর থেকে, সেখান থেকে সবখানে আগুনটা ছড়িয়ে পড়ল। কিন্তু এমন তো হওয়ার কথা ছিল না। একটার আগুন আরেকটায় যাবে কেন? ফায়ার প্রুফ দরজা থাকবে, একটা থেকে আরেকটাতে ছড়াবে না, কনস্ট্রাকশনটা এমন হওয়ার কথা ছিল।”
বিমানবন্দরের অগ্নি প্রতিরোধ এবং নির্বাপণ ব্যবস্থা ‘খুবই দুর্বল’ বলে মন্তব্য করেছেন ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগের সাবেক উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধন।
তিনি দায়িত্বরত অবস্থায় বিমানবন্দর পরিদর্শন করেছেন এবং ‘মক ড্রিল’ করেছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, “ফায়ার মেজারমেন্ট খুব দুর্বল প্রতীয়মান হইছিল। পানির অভাব ছিল, হাইড্রেন্টগুলো কাজ করছিল না। এবারের আগুনেও দেখবেন ওয়াসার ট্রাকে করে পানি সরবরাহ করা হয়েছিল। কেপিআইভুক্ত একটা এলাকায় অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা এমন কেন হবে?
কার্গো কমপ্লেক্সে ‘অপরিকল্পিতভাবে জিনিসপত্র’ রাখাকে দায় দিয়ে তিনি বলেন, “সেখানে কোনোকিছু স্টোরিং বিধিমালা অনুযায়ী রাখা হয় না। কেমিকেল থেকে শুরু করে সবকিছু যত্রতত্র ফেলে রাখা হয়। এর আগে যত আগুন লাগছিল, আমাদের গাড়ি প্রথমে ঢুকতে দেয় নাই। এবারও এমন কথা শোনা গেছে।”
বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এস এম রাগীব সামাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অগ্নিকাণ্ডের পর একটি বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ায় যে, বিমানবন্দরের পার্কিং এলাকার একজন সুপারভাইজার এসে বলেছে, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এটা বিভ্রান্তিকর তথ্য।”
রাগীব সামাদের ভাষ্য, বিমানবন্দরে থাকা ফায়ার ইউনিটের গাড়িগুলোও সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ শুরু করে।
তিনি বলেন, “আমাদের গাড়িগুলোও ওখানে গেছে, ওদেরকে কোনো বাধা দেওয়া হয়নি। বাইরের ফায়ারের গাড়িগুলোকেও বিমানবন্দরে প্রবেশে কোনো বাধা দেওয়া হয়নি।”
কেন এত ঘন ঘন আগুন?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মো. জিল্লুর রহমান এত ঘন ঘন অগ্নিকাণ্ডের কারণ হিসেবে আমাদের ‘কাঠামোগত দুর্বলতা’ এবং ঝুঁকি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ‘না থাকাকে’ দুষেছেন।
তিনি বলেন, “আমাদের যেসব অবকাঠামো বানানো হয়, সেগুলোতে অনেক দুর্বলতা রয়েছে। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, তার কোনো প্রস্তুতি নেই। আগুন এখন একটা ভয়াবহ দুর্যোগ, কিন্তু সে রকম রিস্ক রিডাকশনের কোনো ব্যবস্থা নেই।
“ভবনগুলোতে ফায়ার ডিটেকশান থেকে শুরু করে কোনো ইমার্জেন্সি ট্যুল নেই। কিন্তু ভবনে এসি আছে, ওভেন আছে, ফ্যান আছে, যেগুলোর সবই ফায়ার হ্যাজার্ড ইক্যুইপমেন্ট। রিস্ক রিডাকশন করা যাবে, সেটার কোনো ব্যবস্থা নেই।”
তার মতে, বর্তমানে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা ‘অনেক বেড়েছে’। কিন্তু সেটি হলেই হবে না। রিস্ক রিডাকশনের ব্যবস্থা না থাকলে এটি ঘটবেই।
“আগুন উন্নত দেশেও লাগে, কিন্তু ক্ষয়ক্ষতি কম হয়। আমাদের এখানে বেশি লাগে, আবার ক্ষতিও বেশি হয়।”
ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক জেনারেল আলী আহম্মেদ খান ‘প্রিভেনশনের’ দিকে নজর দিতে বলেন।
তার ভাষ্য, যারা ফ্যাক্টরি করছেন, বড় বড় ভবন করছেন, সেখানে নিজস্ব ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম নাই।
“আগুনটা লাগলে ফায়ার সার্ভিস পৌঁছানো পর্যন্ত নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ফাইটিংয়ের ব্যবস্থাটা থাকতে হবে। নয়তো আগুন বড় হয়ে যাবে এবং সেটাই হচ্ছে।
তিনি বলেন, “আমাদের মধ্যে কারো আইন মানার প্রবণতা নাই। ফায়ার সেফটি কোড কেউ মানেন না।”
নেই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা
ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক জেনারেল আলী আহম্মেদ খান বলেন, “ফায়ার ফাইটারদের সবসময়ই ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়। সাম্প্রতিক কয়েকটা ঘটনায় তাদের মধ্যে হয়ত একটা ভয় কাজ করছে। এজন্য সবচেয়ে জরুরি, তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া। আমাদের ফায়ার ফাইটারদের প্রশিক্ষণের ঘাটতি রয়েছে।”
ফায়ার ফাইটারদের প্রশিক্ষণের জন্য বিশেষ কোনো অবকাঠামো নেই দাবি করে তিনি বলেন, “কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নাই। যতটুকু শিখছে, তারা দেখে এবং ঠেকে শিখছে। যন্ত্রপাতিও বাড়াতে হবে, কিন্তু যন্ত্রপাতি দিয়ে কী হবে, যদি কর্মীরা প্রশিক্ষিত না হয়। এজন্য দেশ-বিদেশে তাদেরকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।”
ঘটনা পরিকল্পিত কিনা, সে প্রশ্নও উঠেছে
একের পর এক বড় আগুনের পেছনে ‘অন্য কোনো’ ইঙ্গিত রয়েছে কিনা, জানতে চাইলে আলী আহম্মেদ খান বলেন, “অব্যবস্থাপনার একটা বিষয় থাকতে পারে। এয়ারপোর্ট একটা কেপিআইভুক্ত এলাকা। সেখানে আগুনের রেসপন্স করতে এত সময় লাগল কেন? কারও গাফিলতি রয়েছে কিনা, তদন্ত করে দেখা উচিত। সিসি ক্যামেরা দেখে বিষয়টি বের করা সম্ভব।”
আরেক সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু নাঈম মো. শহিদউল্লাহ বলেন, “পরপর তিনটা অগ্নিকাণ্ডে অর্থনৈতিক যে ক্ষতি হয়েছে, এটা অপূরণীয়। তাই এগুলোকে নাশকতা চিন্তা করেই এগোতে হবে, নয়তো আলামতগুলো হারিয়ে যাবে। নাশকতা ভেবে তদন্ত এগিয়ে নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।”