বুধবার ০৫ নভেম্বর ২০২৫, কার্তিক ২১ ১৪৩২, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

টাইফুন কালমায়েগির তাণ্ডব, ফিলিপিন্সে অর্ধ শতাধিক মৃত্যু

 প্রকাশিত: ১১:২৭, ৫ নভেম্বর ২০২৫

টাইফুন কালমায়েগির তাণ্ডব, ফিলিপিন্সে অর্ধ শতাধিক মৃত্যু

চলতি বছরের অন্যতম শক্তিশালী টাইফুন কালমায়েগি মধ্য ফিলিপিন্সে তাণ্ডব চালিয়ে অন্তত ৬৬ জনের প্রাণ কেড়েছে; বাস্তুচ্যুত হয়েছে লক্ষাধিক মানুষ।

বিবিসি লিখেছে, টাইফুন কালমায়েগি দেশটির বিশাল এলাকা প্লাবিত করেছে, যার মধ্যে বৃহত্তম জনবসতিপূর্ণ দ্বীপ সেবুতে সবচেয়ে বেশি ৪৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। নিখোঁজ রয়েছেন ২৬ জন।

ভিডিওতে দেখা গেছে, অনেকে ছাদের উপর আশ্রয় নিচ্ছেন, গাড়ি ও কনটেইনারগুলো পানির স্রোতে ভেসে যাচ্ছে।

সরকারি নিহতের তালিকায় মিন্দানাও দ্বীপে বিধ্বস্ত একটি সামরিক উড়োজাহাজের ৬ জন আরোহীর তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ত্রাণ কার্যক্রমে যাওয়া চার উড়োজাহাজের একটি মঙ্গলবার আগুসান দেল সুর এলাকায় বিধ্বস্ত হয়।

ফিলিপিন্স বিমানবাহিনী বলছে, “উড়োজাহাজের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরপরই অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান শুরু হয়।”

পরে এক মুখপাত্র জানান, ছয়টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, যেগুলো পাইলট ও ক্রুদের বলে ধারণা করা হচ্ছে।

স্থানীয়ভাবে ‘টিনো’ নামে পরিচিত টাইফুনটি মঙ্গলবার সকালে স্থলভাগে আঘাত হানার পর কিছুটা দুর্বল হয়েছে, তবে এখনও ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যাচ্ছে।

আবহাওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী, এটি ভিসায়েস অঞ্চলের উপর দিয়ে বুধবারের মধ্যে দক্ষিণ চীন সাগরে প্রবেশ করবে।

সেবু প্রদেশের গভর্নর পামেলা বারিকুয়াত্রো বলেন, “সেবুর পরিস্থিতি সত্যিই নজিরবিহীন। আমরা ভেবেছিলাম বাতাসই হবে সবচেয়ে বিপজ্জনক, কিন্তু পানিই মানুষকে সবচেয়ে বেশি বিপদের মুখে ফেলেছে। বন্যার পানি ভয়াবহ।”

ত্রাণ কার্যক্রম দ্রুত পরিচালনা করতে মেয়র মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সেবুতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন।

বিবিসি লিখেছে, বেশিরভাগ মৃত্যু ডুবে যাওয়ার কারণে হয়েছে বলে জানা গেছে। পাহাড় থেকে নেমে আসা কাদামাটির স্রোত ঘরবাড়ি ও শহর ডুবিয়ে দিয়েছে। অনেক ঘরবাড়ি ভেসে গেছে, রাস্তাঘাটে কাদা ও ধ্বংসাবশেষ জমে আছে। উদ্ধারকর্মীরা নৌকা ব্যবহার করে আটকে পড়া মানুষদের বের করে আনছেন।

সেবু সিটির বাসিন্দা ২৮ বছর বয়সী ডন ডেল রোসারিও বলেন, “আমি ২৮ বছর ধরে এখানে আছি, কিন্তু এমন ভয়াবহ কিছু কখনও দেখিনি।”

সিভিল ডিফেন্স দপ্তরের উপ-প্রশাসক রাফায়েলিতো আলেহান্দ্রো জানান, ঝড়ের পথ থেকে প্রায় ৪ লাখ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

ফিলিপিন্সে প্রতি বছর গড়ে ২০টি ঝড় ও টাইফুন আঘাত হানে। গত এক মাসের মধ্যে দুটি টাইফুনে এক ডজনের বেশি প্রাণহানি এবং অবকাঠামো ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি ডেকে আনে।

স্থানীয়ভাবে ন্যান্ডো নামে পরিচিত সুপার টাইফুন রাগাসা আঘাত হানে সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে। এর কিছুদিন পর আঘাত হানে টাইফুন বুয়ালয়, যার স্থানীয় নাম ওপং।

এর আগে বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টিতে ব্যাপক বন্যা দেখা দেয়, যা দুর্বল ও অসম্পূর্ণ বন্যা-নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের বিরুদ্ধে জনরোষ তৈরি করে। এসব প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগও ওঠে।

বিবিসি লিখেছে, এর আগে কয়েক মাসের অস্বাভাবিক ভারি বৃষ্টিতে ব্যাপক বন্যা সৃষ্টি হয়েছিল। দুর্বল বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিয়ে জনরোষ ও ক্ষোভ দেখা দেয়, দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে জোরেশোরে।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর মধ্য ফিলিপিন্সে ৬.৯ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে, যার ফলে কয়েক ডজন মানুষ হতাহত হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় সেবুতে।

টাইফুন কালমায়েগি এখন ভিয়েতনামের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, যেখানে ইতোমধ্যে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি ঝরেছে।