গাজায় যুদ্ধবিরতি ভেঙে ইসরায়েলের হামলা, নিহত ১০০

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ‘ব্যাপক হামলা’ চালাচ্ছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এমনটি জানিয়েছে।
সিএনএন লিখেছে, মঙ্গলবার ভোরে এ প্রাণঘাতী হামলা চালানো হয়, যাতে হামাস নেতাদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে বলে ভাষ্য ইসরায়েলের।
যদিও নিহতদের বেশিরভাগই শিশু বলে জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
রয়টার্স লিখেছে, গাজার উত্তরাঞ্চল, গাজা সিটি এবং মধ্য ও দক্ষিণ গাজার দেইর আল-বালাহ, খান ইউনিস ও রাফাহসহ একাধিক স্থানে হামলার খবর পাওয়া গেছে।
গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার মুখপাত্র জানান, হামলায় অন্তত ১০০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আর আহত হয়েছেন অন্তত ৭০ জন।
ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) দাবি, তারা হামাসের ‘সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তু’ হিসেবে চিহ্নিত স্থাপনাগুলোতে হামলা চালাচ্ছে।
১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে গাজায় এটিই সবচেয়ে বড় আকারের বিমান হামলা। ইসরায়েলি বাহিনীর এই হামলা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে।
গাজায় যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে চলমান আলোচনা কোনো চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে নতুন করে সংঘাতের আশঙ্কা বেড়েছে।
চিকিৎসাকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃতি দিয়ে রয়টার্স জানায়, গাজার মধ্যাঞ্চলের দেইর আল-বালাহতে তিনটি বাড়ি, গাজা শহরের একটি ভবন এবং খান ইউনিস ও রাফাহ শহরের কয়েকটি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ মঙ্গলবার সকালে এ হামলার নির্দেশ দেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, হামাস বারবার জিম্মিদের মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এবং মার্কিন প্রেসিডেন্টের দূত স্টিভ উইটকফসহ মধ্যস্থতাকারীদের দেওয়া সব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এই হামলা চালানো হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এখন থেকে ইসরায়েল আরও বেশি সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান চালাবে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সপ্তাহান্তে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হামলার পরিকল্পনা উপস্থাপন করে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব তাতে অনুমোদন দেয়।
হামলা চালানোর আগে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে পরামর্শ করে। হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র ফক্স নিউজকে বিষয়টি জানান।
গত ১ মার্চ অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায় শেষ হওয়ার পর আলোচকরা সমঝোতার নতুন পথ খুঁজছেন।
যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রস্তাবে বলেছিল, অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায় মধ্য এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হোক, যার আওতায় আরও এক দফা বন্দি-জিম্মি বিনিময় করা হবে।
কিন্তু আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান, পরোক্ষ আলোচনায় স্টিভ উইটকফের প্রস্তাবিত চুক্তির মূল বিষয়ের ওপর ইসরায়েল ও হামাস একমত হতে পারেনি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এতে এক হাজার ২০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে গোষ্ঠীটি। জিম্মি করে প্রায় আড়াইশ জনকে।
পরে ইসরায়েল ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধ শুরু করে। হামাস শাসিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গাজায় সেই থেকে এ পর্যন্ত ৪৮ হাজার ৫২০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন, যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক।