সোমবার ১৬ জুন ২০২৫, আষাঢ় ২ ১৪৩২, ১৯ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

ব্রেকিং

লন্ডনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক ১৩ জুন তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরবেন: ফখরুল রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হবে কাঁচের মতো স্বচ্ছ ঘর: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নির্বাচনের ঘোষিত সময় মাথায় রেখে যথাসময়ে রোডম্যাপ দেবে ইসি: উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুললেন ছাত্রদল নেতা নাছির উদ্দিন মণিপুরে আবার উত্তেজনা, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের চাপে ঢাকার ৪ থানায় সক্রিয় অর্ধশতাধিক অপরাধী দল জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে: প্রধান উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায় জাতির প্রত্যাশা পূরণ হয়নি: সালাহউদ্দিন আহমদ জুলাই সনদ–ঘোষণাপত্র হলে ঘোষিত সময়ে নির্বাচনে আপত্তি নেই: এনসিপি ২৫ কিলোমিটার যানজট, ২৪ ঘণ্টায় পারাপার ৬৪ হাজার যানবাহন বান্দরবানের রুমা ও থানচি ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আংশিকভাবে প্রত্যাহার গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো, জাতিসংঘ নিরাপত্তা গরম মসলার বাজার শীতল: ক্রেতা কমে যাচ্ছে, দাম কিছুটা স্থিতিশীল ঈদে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দই-মিষ্টি মজুত, রংপুরে হিমাগারে অভিযান ও দুই লাখ টাকা জরিমানা বান্দরবানের লামায় পাহাড় ধসের শঙ্কায় ৬০ রিসোর্ট বন্ধ নির্বাচন নিয়ে তরুণদের প্রতি অসত্য অভিযোগ ও বাস্তবতা ভারতের মুসলমানদের কেন বারবার দেশপ্রেমের প্রমাণ দিতে হয় সংবিধান পরিবর্তন ছাড়া ফ্যাসিবাদ বিলোপ সম্ভব নয়: এনসিপি মুখ্য সমন্বয়ক একুশের বন্ধুত্বে আগামীর পথচলা: বার্ষিক সম্মেলনে ২১তম বিসিএস প্রশাসন ফোরাম বিজিএমইএ`র নতুন নেতৃত্বে আসছেন বাবু, নিরঙ্কুশ জয়ের ইঙ্গিত জিলহজ মাসের আমল ও কোরবানির তাৎপর্য চট্টগ্রামে নারীকে লাথির ঘটনায় ভাইরাল আকাশ চৌধুরী বহিষ্কৃত, জামায়াতের বিবৃতি সংকট নিরসনে উদ্যোগ নেই, আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিল পবিস শ্রমিকরা আনচেলত্তির স্বপ্ন - রিয়াল মাদ্রিদের মতো করে খেলাবেন ব্রাজিলকে ডিমের দাম এখনো চড়া, ডজন ১৩০–১৪০ টাকায় বিক্রি বৈরী আবহাওয়ার কারণে নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপের সঙ্গে সারাদেশের নৌ-যোগাযোগ বন্ধ হারের পর লিটনের মনোভাব - এখনো দুই ম্যাচ বাকি কাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশের সব জুয়েলারি দোকান বন্ধ ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্র চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করবে ডিএনএ টেস্ট করে নামফলক ও মর্যাদা চায় শহীদ পরিবারের সদস্যরা বেতন না পেয়ে ডাকাতি, জাহাজের চিফ ইঞ্জিনিয়ারসহ তিনজন আটক “বাংলাদেশে কৌশলগত স্বার্থ নেই দক্ষিণ কোরিয়ার”—রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং সিক “শাপলার হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই”—হেফাজতের বিবৃতি মির্জা আব্বাস: “করিডর আর স্টারলিংক আনা হচ্ছে আরাকান আর্মির জন্য” জিলহজ মাসের চাঁদ দেখে যে দোয়া পড়বেন নির্বাচনের আগে যতটুকু দরকার, ততটুকুই সংস্কার করতে হবে: মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ‘চিন্তার স্বাধীনতাও হারাচ্ছি?’— নারী কমিশন বিতর্কে গীতিআরার উদ্বেগ ইউক্রেনে রাশিয়ার টানা হামলায় নিহত ১২, কঠোর চাপের আহ্বান জানালেন জেলেনস্কি সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন – তিনটি কঠিন দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট আমরা জুলাই অভ্যুত্থান ক্ষমতার পালাবদল নয়, এটি মৌলিক সংস্কার: নাহিদ হলুদ সাংবাদিকতা’ বিরোধী স্লোগানে উত্তাল শিক্ষক মিছিল ভারতের নিষেধাজ্ঞায় আখাউড়া বন্দর দিয়ে রপ্তানি কমেছে ৪০% বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি চলছে, দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি জাতীয় স্বার্থে অভিমান ভুলে দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান : জামায়াত আমির আন্দোলনের পর অবশেষে নিয়োগ পেলেন ৪৩তম বিসিএসের বাদ পড়া ১৬২ জন নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবিতে ইসির সামনে এনসিপির বিক্ষোভ কাল বাংলাদেশে স্টারলিংকের যাত্রা, স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের নতুন যুগ শুরু নরওয়ের দৃঢ় সমর্থন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি বিগত সরকারের সময় প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসপ্রাপ্ত, এমন অবস্থা ছিল যে খতিবকেও পালাতে হয়েছিল: বাণিজ্য উপদেষ্টা গায়ের জোরে নগর ভবন দখল করে আন্দোলন চালাচ্ছে বিএনপি আবারও রাজপথে নামার ইঙ্গিত আসিফের, সতর্ক করলেন হাসনাত গোপন অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আন্দোলন স্থগিত, ২০ মে আলোচনায় বসবে ঐক্য পরিষদ ভারতের আমদানি নিষেধাজ্ঞা সীমান্ত বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে ভারতের নতুন সিদ্ধান্তে উত্তর-পূর্বাঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশি ভোগ্যপণ্য আমদানি বন্ধ গত ৯ মাসে জুলাই-যোদ্ধাদের ওপর ৩৮টি হামলা জবি’র ৪ দফা দাবি মেনে নেওয়ায় আন্দোলনের সমাপ্তি ঘোষণা ডিবি থেকে মুক্তির পর আন্দোলনে উল্লাস জবি শিক্ষার্থীর গাজা দখলে নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা পুনর্ব্যক্ত করলেন ট্রাম্প শাহরিয়ার হত্যাকাণ্ডে বিচার নিশ্চিতের অঙ্গীকার উপদেষ্টা আসিফের সোনার দাম ভরিতে কমল ৩ হাজার ৪৫২ টাকা, নতুন দর কার্যকর শুক্রবার থেকে ঢাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু: নিরাপত্তা নিশ্চিতে বড় পদক্ষেপ প্রশাসনের আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধে ভারতের উদ্বেগ শ্রীনগরজুড়ে বিস্ফোরণ, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওমর আব্দুল্লাহর উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত: আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ ‘চলবে’, শনিবার গণজমায়েত ড্রোন যুদ্ধ: ভারত-পাকিস্তান বিরোধের নতুন অধ্যায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে সরকার গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আ.লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগ ছাড়বেন না আন্দোলনকারীরা ‘আপ বাংলাদেশ’–এর আত্মপ্রকাশ পূর্বঘোষণা ছাড়া ভারত সফরে সৌদি প্রতিমন্ত্রী, পাকিস্তান-ভারত উত্তেজনায় কূটনৈতিক তৎপরতা তুঙ্গে দ্রুত সিদ্ধান্ত না এলে সারা দেশ থেকে ঢাকা অভিমুখে মার্চের হুঁশিয়ারি নাহিদ ইসলামের দেশীয় ওষুধ কোম্পানি রেনাটাকে ৭০০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে আইএফসি তারেক রহমান: সরকার হয়তো স্বৈরাচারের দোসরদের দেশত্যাগে সহায়তা করছে জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে ভারতের নির্দেশে ৪ বাংলাদেশি টিভি চ্যানেল ইউটিউবে বন্ধ

এডিটর`স চয়েস

দ্বিতীয় স্বাধীনতা ॥ এটিকে সুসংহত করতে হবে

 আপডেট: ২২:১৫, ২ অক্টোবর ২০২৪

দ্বিতীয় স্বাধীনতা ॥ এটিকে সুসংহত করতে হবে

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য শুভ কামনা

দীর্ঘ স্বৈরশাসনগুম-খুন-হত্যাজুলুম-নির্যাতনের পরদেশকে শিক্ষাসংস্কৃতিঅর্থনীতি সকল ক্ষেত্রে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেওয়ার পর অবশেষে বিদায় নিয়েছেন শেখ হাসিনা ও তার আওয়ামী লীগ সরকার। ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লব ও অভ্যুত্থানে পালাতে বাধ্য হয়েছেন তারা। এরপর গঠিত হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়েছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর সাথে উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দিয়েছেন আরো কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তি। বলার অপেক্ষা রাখে না যেআওয়ামী সরকারের পতনের মাধ্যমে একটি দীর্ঘ দম বন্ধকরা পরিস্থিতি থেকে মানুষ নাজাত পেয়েছে। তাই অনেকে এটিকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলেছেন। খোদ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাও একে নতুন বিজয় আখ্যা দিয়েছেন। স্বাধীনতা বা বিজয় যা-ই বলা হোকযদি বিগত দিনগুলোর জুলুম-নির্যাতনের অবস্থাগণমানুষকে গলাটিপে ধরার অবস্থা বিবেচনায় আনা হয়তাহলে তো বিষয়টি বাস্তবসম্মতই মনে হবে। সে অর্থে নতুন বিজয়নতুন স্বাধীনতাসহ এধরনের যেকোনো বিশেষণেই ৫ আগস্ট ২০২৪-কে আখ্যায়িত করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু যদি একটু গভীরে প্রবেশ করা হয় এবং পেছনের ইতিহাস দেখা হয়তাহলে এটিকে চূড়ান্ত বিজয় বা স্বাধীনতা আখ্যা না দিয়ে স্বাধীনতা ও বিজয়ের সুযোগ বললেই বেশি বাস্তবসম্মত হবে।

বাংলাদেশ তো ১৯৭১ সালেও স্বাধীন হয়েছে। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর অর্জিত হয়েছিল সে স্বাধীনতা। হাজার হাজার মানুষের জান-মাল-ইযযত লুণ্ঠিত হয়েছিল তা অর্জনে। কিন্তু বাঙালি জাতি কি স্বাধীন হয়েছেশুধু তাই নয়এর আগেও ১৯৪৭ সালে আগ্রাসী ব্রিটিশ সরকারকে বিদায় করে স্বাধীন রাষ্ট্র পাকিস্তানের অভ্যুদয় হয়েছিল। যার জন্য আমাদের পূর্বসূরিরা সংগ্রাম করে গেছেন প্রায় দুই শত বছর। সেই পাকিস্তানের জনসংখ্যার দিক থেকে বৃহত্তর অংশ ছিল আমাদের এই অঞ্চল। তখন এর নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান। সেই পাকিস্তান আন্দোলনেও এ অঞ্চলের নেতারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। কিন্তু বড় বড় মহৎ আশা নিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্র হলেও বাস্তবে সেগুলোর কম জিনিসই আলোর মুখ দেখেছে। ১৯৪৭-১৯৭১-এর বেশির ভাগ সময়ই দেশটি শাসন করেছে সশস্ত্র বাহিনীর লোকেরা। তাদের কর্তৃক ইনসাফ প্রতিষ্ঠার বদলে জুলুমই হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে। এছাড়া এ অঞ্চলের লোককে শাসনের অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। যার ফলে ১৯৭১ সালের যুদ্ধ এবং দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন।

লক্ষ করার বিষয় হচ্ছেস্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুই হয়েছিল নির্বাচনে বিজয় অর্জনের পরও আওয়ামী লীগ ও শেখ মুজিবুর রহমানকে সরকার গঠন করতে না দেওয়ার কারণে। অর্থাৎ জনগণের ভোটের অধিকার। এর পরে স্বাধীনতার চেতনার সাথে যোগ হয়েছে সাম্যভ্রাতৃত্ব ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা এবং সকল প্রকারের বৈষম্য ও জুলুম-নির্যাতন প্রতিহত করার মতো বিষয়গুলো। গণতন্ত্র মানবাধিকার জাতীয়তাবাদ- এসবের কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার পর কী দেখা গেলখোদ শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবই সংবিধানে চতুর্থ সংশোধনী এনে একদলীয় ব্যবস্থা চালু করলেন। ক্ষমতা কুক্ষিগত করে নিয়ে নিলেন নিজের নিয়ন্ত্রণে। এরপর দুই দুইটি সামরিক শাসন এবং দু-তিনবার ক্ষমতার পালাবদল। মাঝে বহু আন্দোলন। বহু খুন-খারাবি। এরপর ২০০৯ সালের দিকে শেখ সাহেবের কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় বসে মানুষের ভোটাধিকারকথা বলার অধিকারধর্মীয় অধিকার সবই কেড়ে নিলেন। অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করা তো অনেক পরের বিষয়উল্টো দেশের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা তার দলীয় নিকটস্থ লোকজনকে লুটপাট ও পাচার করার সুযোগ করে দিলেন।

অতএব বিজয় তো বাঙালি জাতি আগেও অর্জন করেছেকিন্তু বিজয়ের স্বাদ কি পেয়েছেবহু রক্তের বিনিময়ে বারবারই বিজয়ের সূচনা হয়কিন্তু পরবর্তীতে আবার যেই লাউ সেই কদু হয়ে যায়। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের কাঁধে অনেক দায়িত্ব। আওয়ামী লীগ যেভাবে রাষ্ট্রের সকল স্তরকে ধ্বংস করে গেছেসেগুলো মেরামত করাও অতীব জরুরি এবং কিছুটা সময়সাপেক্ষও। সাথে বৈষম্যহীন ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রসর হলেই কেবল চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়েছে বলে বোঝা যাবে।

পুরো জাতি এখন চেয়ে থাকবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দিকে। সন্দেহ নেইতাদের কাছে প্রত্যাশা এবং তাদের ওপর চাপ থাকবে অনেক বেশি। প্রশাসনআইন-শৃঙ্খলা বাহিনীআদালত পাড়ানির্বাচন কমিশনপিএসসিসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরগুলোকে আওয়ামী লীগের দোসরমুক্ত করাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য কামনা করছি। যদিও দায়িত্ব নেওয়া উপদেষ্টাদের কারো কারো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে যোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়ে নানা ধরনের নানা কথা রয়েছে। তবুও দেশের স্বার্থে জনগণ তাদেরকে সফলকাম দেখতে চায়। আর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যক্তিত্ব তো সর্বজনবিদিত এবং বিগত সরকার কর্তৃক জুলুম-নিগ্রহের শিকার হলেও তিনি এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিশোধ বা প্রতিহিংসামূলক কোনো কিছুই তাদের বিরুদ্ধে করেননি। এটিও তাঁর বিচক্ষণতার পরিচায়ক হিসেবে দেখা হচ্ছে।

আমরা অত্যন্ত বিনয়ের সাথে শুধু একটি কথা আরয করতে চাইযেহেতু ইউনূস সাহেব আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমাদৃত ব্যক্তিত্ববিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সাথে ব্যক্তিগত সুসম্পর্কও রয়েছে তাঁরতাই দেশের অনেকের মনে  এমন আশঙ্কাও কাজ করে যেএ সুযোগ নিয়ে পশ্চিমা বিশেষ গোষ্ঠীগুলো এদেশে তাদের একতরফা কোনো মতলব হাসিল করতে চায় কি নাবড় বড় অর্থনীতির ক্ষেত্র অথবা শিক্ষা-সংস্কৃতির ক্ষেত্র- যাতে আগের থেকেই কুরুচিপূর্ণ লোকেরা এদেশের কৃষ্টি-কালচার পরিপন্থী অশ্লীলতাপূর্ণ বিষয়াদি প্রবেশ করাতে শুরু করেছে। এলজিবিটির মতো বিষয়গুলো এদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার পাঁয়তারাও করেছে তারা।আমরা আশা করবএমন আশঙ্কা যেন অমূলক হয়।

 এছাড়া ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এতদিনের মূল কাজের ক্ষেত্র ছিল ক্ষুদ্র ঋণের কারবারযা সুদভিত্তিক হওয়ায় সেটি এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের বিশ্বাস-বিরোধী। তাঁর কর্মের এরিয়া এনজিও হওয়ায় দেশের অন্যান্য এনজিওরাও এসময়ে অধিক সুযোগ-সুবিধা নিতে চাইতে পারে। একথা তো সবারই জানা যেএনজিওদের মধ্যে অনেকগুলোই এমন আছেযারা মানুষের উপকারের বদলে শোষণ বেশি করে থাকে। আবার অনেকে কাজ করতে গিয়ে এদেশের এবং এ অঞ্চলের মানুষের সভ্যতা-সংস্কৃতির বিপরীতে ভিনদেশী কৃষ্টি-কালচারকে প্রতিষ্ঠার পেছনে লেগে যায়। তারা যেন অন্তর্বর্তী সরকার থেকে কোনো বাড়তি সুবিধা অর্জন করতে না পারে- সে বিষয়েও প্রধান উপদেষ্টা ও তার সহকর্মীগণ সচেতন থাকবেন বলে জনগণ আশা রাখে।

আল্লাহ তাআলা অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকারকে দেশ ও জনগণের উপকারে কাজ করার তাওফীক দান করুন। যেকোনো ষড়যন্ত্র ও ক্ষয়ক্ষতি থেকে তাদেরকে রক্ষা করুন এবং তাদেরকে সফলকাম করুন।

ধর্ম উপদেষ্টাকে মোবারকবাদ!

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে ধর্ম উপদেষ্টার দায়িত্ব পেয়েছেন ড. মাওলানা আ ফ ম খালিদ হোসেন। একজন বিজ্ঞ আলেম হিসেবে যার সুখ্যাতি রয়েছে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশের কিংবদন্তী ব্যক্তিত্ব ছিলেন খতীবে আজম আল্লামা সিদ্দীক আহমদ রাহ.। যিনি একাধারে শাইখুল হাদীসবিতার্কিকযুক্তিভিত্তিক আলোচকদার্শনিক এবং বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ ছিলেন। তাঁরই জামাতা হচ্ছেন জনাব খালিদ হোসেন। এদেশের দ্বীনদার শ্রেণি আশা করেতাঁর শ্বশুরের মতো তিনিও প্রজ্ঞা ও দক্ষতা দিয়ে ইসলাম ও মুসলমানদের খেদমত করে যাবেন। আমরা মাসিক আলকাউসার ও মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকার পক্ষ থেকে তাঁকে মোবারকবাদ জানাচ্ছি। অর্পিত দায়িত্ব পালনে তাঁর সফলতা ও কামিয়াবীর জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার দরবারে দুআ করছি।

 

বন্যার্তদের পাশে দেশবাসী

এ কাক্সিক্ষত উদ্যোগ আরো বেগবান করতে হবে

এবারও ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত হল দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ফেনীনোয়াখালীলক্ষীপুরকুমিল্লাসহ অনেকগুলো জেলা এখনো পানির নিচে। লক্ষ লক্ষ বন্যার্ত মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেকের প্রাণহানিও ঘটেছে। অতি বৃষ্টিখাল বিলের অবকাঠামোগত ত্রুটির পাশাপাশি বন্যায় সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়ে যাওয়া ঘটনাগুলোর জন্য উজানে ভারতের বাঁধ খুলে দেওয়াকে দায়ী করা হচ্ছে। এ কথাগুলো যখন লেখা হচ্ছে তখন খবর এল ফারাক্কা বাঁধের ১০৯টি গেটও ভারত খুলে দিয়েছে। ভারতের কথা আর বলে লাভ কীতাদেরকে একতরফাভাবে সবকিছু করার লাইসেন্স তো বিগত সরকার দিয়ে গেছে।

আমাদের প্রিয় ধর্ম ইসলাম মুসলমানদেরকে দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়াতে নির্দেশ করে। উদ্বুদ্ধ করে অন্যের দুঃখে দুঃখী হতে। বিপদগ্রস্তের কষ্ট লাঘবে এগিয়ে আসতে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

 مَثَلُ الْمُؤْمِنِينَ فِي تَوَادِّهِمْ، وَتَرَاحُمِهِمْ، وَتَعَاطُفِهِمْ مَثَلُ الْجَسَدِ، إِذَا اشْتَكَى مِنْهُ عُضْوٌ تَدَاعَى لَه  سَائِرُ الْجَسَدِ بِالسَّهَرِ وَالْحُمَّى.

সম্প্রীতিসৌহার্দ ও সহানুভূতির ক্ষেত্রে মুমিনের দৃষ্টান্ত এক দেহের ন্যায়যার একটি অঙ্গ অসুস্থ হলে গোটা দেহ জ্বর ও নিদ্রাহীনতায় ভুগতে থাকে। -সহীহ মুসলিমহদীস ২৫৮৬

প্রাচ্যের কবি ইকবালের ভাষায়-

قوم گویا جسم ہے،  افراد ہیں اعضائے قوم + منزلِ صنعت کے رہ پیما ہیں دست و پائے قوم

مبتلائے درد کوئی عُضو ہو روتی ہے آنکھ + کس قدر ہمدرد سارے جسم کی ہوتی ہے آنکھ

[জাতি যেন একটি দেহের মতোপ্রতিটি সদস্য জাতির অঙ্গ/যারা শিল্পের পথে হাঁটেন তারা জাতির হাত পা।

কোনো অঙ্গ ব্যথিত হলে কান্না করে চোখ/সারা দেহের প্রতি কতটা সমব্যথী চোখ।]

বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র বাংলাদেশের জনগণও বিভিন্ন বড় বড় বিপর্যয়ে দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আসছে যুগ যুগ থেকে। আর এবারের বন্যায় তো মানুষের সাহায্য তৎপরতা অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি এবং স্বতঃস্ফূর্ত মনে হচ্ছে। বয়সশ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে গণমানুষ যার যার সাধ্য অনুযায়ী একক কিংবা দলবদ্ধ হয়ে ছুটে যাচ্ছেন বা প্রতিনিধি পাঠাচ্ছেন আক্রান্ত এলাকায়। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার হাতেও তুলে দিচ্ছেন হরেক রকমের সাহায্য উপকরণ। এটিই কাক্সিক্ষত বাংলাদেশ। এটিই তো প্রকৃত মুসলিম সমাজ। এসব আমাদের আশাবাদী করে তোলে। বিশেষত যুবক ও তরুণ প্রজন্মের এসকল কাজে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ সত্যিই অনুপ্রাণিত হওয়ার মতো বিষয়।

অন্যবারের মতো এবারও উলামায়ে কেরামআইম্মায়ে মাসাজিদ এবং মাদরাসা ছাত্ররাও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বিপদগ্রস্ত মানুষের প্রতি। বিশেষত তৃণমূল পর্যায়ের ও দুর্গম এলাকাগুলোর উপযুক্ত লোকদের হাতে প্রয়োজনীয় খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে স্থানীয় উলামায়ে কেরামের ভূমিকা ছিল খুবই ইতিবাচক। বড় বড় অনেক মাদরাসাকে রূপান্তর করা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে। বিগত দিনের মতো মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকার সেবামূলক প্রতিষ্ঠান দাওয়াহ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ-এর অধীনেও কয়েকটি জেলায় বন্যার্ত ভাইবোনদেরকে হাদিয়া পৌঁছে দেওয়া হয়েছে এবং এখনও সে তৎপরতা চলমান আছে। যার খরচাদিতে অংশগ্রহণ করেছেন মারকাযের ছাত্রশিক্ষক ও খাস শুভানুধ্যায়ীগণ। অংশগ্রহণ করেছেন দেশের বিভিন্ন এলাকার তালীমুদ্দীন একাডেমিগুলোর শিক্ষার্থীগণও।

 সাহায্যের দ্বিতীয় ধাপ শুরু করতে হবে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর। তখন ঘর-বাড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়া বা ছোটখাটো আয়ের লোকযাদের সামান্য ফসল বা আয়ের উৎস ধ্বংস হয়ে গিয়েছে তাদের পুনর্বাসনের দিকে নজর দিতে হবে আমাদের।

আল্লাহ তাআলা বন্যাদুর্গত ভাইবোনদের এ মসিবত থেকে দ্রুত পরিত্রাণ দিন এবং অন্যদের তাদের উপকারে আরো এগিয়ে আসার তাওফীক দিন- আমীন। 

আলকাউসার