ভারতে থাকা হাসিনাসহ ১৭ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
ভারতে আশ্রয় নেওয়া ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত।
দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে রোববার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের অবকাশকালীন বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন এ আদেশ দেন।
দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া অপর ১৬ জন হলেন-আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান, এম এ এন সিদ্দিক, মো. ফারুক জলিল, মোহাম্মদ শফিকুল করিম, মোহা. ফিরোজ ইকবাল, ইবনে আলম হাসান, মো. আফতাব হোসেন খান, মো. আব্দুস সালাম, মনির-উজ-জামান চৌধুরী, সেলিনা চৌধুরী এবং ইকরাম ইকবাল।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা তানজীর আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
দুদকের পক্ষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সংস্থার সহকারী পরিচালক তানজিল হাসান শেখ হাসিনাসহ সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, “একক উৎসভিত্তিক দরপত্র আহবান করে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম লিমিটেড শতকরা ১৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ (ভ্যাট ও আইটি ব্যতীত) ৫ বছর মেয়াদে কার্যাদেশ পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে মোট ৪৮৯ কোটি ৪৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা বিল গ্রহণ করে।
“এতে সরকারের ৩০৯ কোটি ৪২ লাখ ৪৫ হাজার ৮৯০ টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়। যা আসামিরা প্রতারণার মাধ্যমে পরস্পর যোগসাজশে নিজেরা লাভবান হয়ে আত্মসাৎ করেন। তার প্রেক্ষিতে আসামিদের মামলা দায়ের করা হয়।”
দুদক আবেদনে বলেছে, মামলার এজাহারনামীয় আসামিরা দেশত্যাগ করতে পারেন বলে তদন্তে এসেছে। এতে মামলার কার্যক্রম বাধাগ্রস্তই নয়, গুরুত্বপূর্ণ আলামত নষ্ট হওয়ার শঙ্কাও দেখছে দুদক। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামিদের বিদেশ গমন বন্ধ করা প্রয়োজন বলে আবেদনে বলেছে দুদক।
গত ১২ অক্টোবর শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে সংস্থাটির ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১–এ দুদকের সহকারী পরিচালক তানজিল হাসান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় অভিযোগে বলা হয়, “২০১৬ সালে মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল আদায়কারী হিসেবে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম (সিএনএস) লিমিটেডকে নিয়োগ দিতে আগের দরপত্র ‘ইচ্ছাকৃতভাবে বাতিল’ করে একক উৎসভিত্তিক দরপত্র আহ্বান করা হয়।
“অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে বাদ রেখে কেবল সিএনএস লিমিটেডের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ৫ বছরের জন্য টোল আদায়ের চুক্তি করা হয়। এতে সার্ভিস চার্জের সুনির্দিষ্ট পরিমাণ ঠিক না করে হার বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। এই হার ছিল আদায় করা টোলের ১৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ (ভ্যাট ও আয়কর ব্যতীত)।”
দুদক বলছে, এ চুক্তির আওতায় সিএনএস লিমিটেড মোট ৪৮৯ কোটি ৪৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা বিল গ্রহণ করে। অন্যদিকে ২০১০-২০১৫ সাল পর্যন্ত একই সেতুর টোল আদায়ের জন্য এমবিইএল-এটিটি মাত্র ১৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় কাজ করে। পরবর্তীতে ২০২২-২০২৫ মেয়াদে ইউডিসি কনস্ট্রাকশন লিমিটেডকে ৬৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকায় (ভ্যাট ও আয়করসহ) কার্যাদেশ দেওয়া হয়, যা পাঁচ বছরে রূপান্তর করলে দাঁড়ায় প্রায় ১১২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।
দুদকের অনুসন্ধান অনুযায়ী, সিএনএস লিমিটেড কথিত ‘নতুন প্রযুক্তি স্থাপন ও অবকাঠামো ব্যয়’ বাবদ আরও ৬৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা দাবি করে।
তুলনামূলক বিশ্লেষণে দুদক মনে করছে, সিএনএস লিমিটেডকে কার্যাদেশ দেওয়ার ফলে সরকারের মোট আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩০৯ কোটি ৪২ লাখ ৪৫ হাজার ৮৯০ টাকা।
দুদক বলছে, সিএনএস লিমিটেডের পরিচালক, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সদস্যরা পরস্পর যোগসাজশে এ অনিয়ম করেছেন।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। শেখ হাসিনার সঙ্গে তার বোন শেখ রেহানা ভারতে চলে যান। দলের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতারও সেখানে থাকার খবর এসেছে।
ইতোমধ্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দমানোর চেষ্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রাণদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গত ১৭ নভেম্বর শেখ হাসিনার মামলার রায় ঘোষণা করে।
হাসিনা সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালেরও একই সাজা হয়েছে। অভ্যুত্থানের সময় পুলিশ বাহিনীর নেতৃত্বে থাকা চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ায় তাকে দেওয়া হয়েছে ৫ বছরের সাজার লঘুদণ্ড।
মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে ফেরত দিতে ভারতের প্রতি আবারও আহ্বান জানায়।
এখন তাদেরকে দেশে ফেরাতে সরকার আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার কথা ভাবছে অন্তর্বর্তী সরকার।