শেখ হাসিনার দুর্নীতি মামলার রায়ের অপেক্ষা
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সর্বোচ্চ সাজার পর এবার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলার রায় হতে যাচ্ছে।
ঢাকার পূর্বাচলে নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠা আকারের তিনটি প্লট বরাদ্দ পাওয়ার ক্ষেত্রে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল দুর্নীতি করেছিলেন কি না—সেই সিদ্ধান্ত দেবে আদালত।
ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন বৃহস্পতিবার ওই তিন মামলার রায় ঘোষণা করবেন।
হাসিনা পরিবারের তিনজন ছাড়াও এ তিন মামলায় আরো ২০ জন আসামি রয়েছেন, যাদের মধ্যে গ্রেপ্তার রয়েছেন কেবল একজন। কারাগারে থাকা রাজউকের সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলমকে রায় ঘোষণার সময় আদালতে হাজির করা হবে।
শেখ পরিবার ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন— সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার ও কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মো. নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য (উন্নয়ন) অবসরপ্রাপ্ত মেজর প্রকৌশলী সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, সাবেক সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) শফি উল হক, পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম, রাজউকের উপপরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) হাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান ও নায়েব আলী শরীফ, সাবেক উপপরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) কামরুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) মাজহারুল ইসলাম।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান দমানোর চেষ্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে গত ১৭ নভেম্বর ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনাকে সর্বোচ্চ সাজা প্রাণদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
গত বছরের ৫ অগাস্ট ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগ আমলের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসতে থাকে। এর মধ্যে শেখ হাসিনার প্রথম দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা হতে যাচ্ছে বৃহস্পতিবার।
আসামিদের বিরুদ্ধে যে ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে, সেই ধারার অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ সাজা হতে পারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
দুদকের কৌঁসুলি খান মো. মাইনুল হাসান লিপন বলেন, “আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আশা করছি, তাদের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে।”
গ্রেপ্তার একমাত্র আসামি খুরশীদ আলমের আইনজীবী শাহীনুর রহমান বলেন, “দুদক আমার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়নি। কাজেই আশা করছি, তিনি খালাস পাবেন।”
শেখ হাসিনা, তার ছেলে, মেয়েসহ বাকি আসামিদের পলাতক দেখিয়ে এ মামলার বিচার কাজ চলে। ফলে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ তারা পাননি। তাদের পক্ষে কোনো আইনজীবী শুনানিতে অংশ নিতে পারেননি।
‘ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের মাধ্যমে’ রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ৬০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে গত জানুয়ারিতে ছয়টি মামলা করে দুদক। এসব মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, ভাগ্নি ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী ও ভাগ্নে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিকে আসামি করা হয়।
ছয় মামলাতেই হাসিনাকে আসামি করা হয়েছে। তার পরিবারের তিনটি মামলার বিচার চলছে একসঙ্গে; আলাদা আদালতে রেহানা পরিবারের তিন মামলারও বিচার চলছে একসঙ্গে।
গত ৩১ জুলাই এসব মামলায় হাসিনা ও রেহেনা পরিবারের সাত সদস্যসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে (বেশিরভাগই একাধিক মামলায় অভিযুক্ত) অভিযোগ গঠন করে আদালত।
গত ২৩ নভেম্বর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে হাসিনা পরিবারের মামলার রায়ের দিন ঠিক করা হয়। আর ২৫ নভেম্বর রেহানার পরিবারের এক মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ১ ডিসেম্বর রায়ের দিন রেখেছে আদালত।
মামলা থেকে যেভাবে রায়ের পর্যায়ে
গণঅভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয় শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেদিনই ভারতে পালিয়ে যান তিনি। তার পরিবারের অন্যরাও দেশের বাইরে।
ওই সময় থেকেই একের পর এক মামলা হতে থাকে থানা ও আদালতে। ২৬ ডিসেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের পাঁচ সদস্যের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ছয়টি প্লট বরাদ্দে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
পূর্বাচলের ২৭ নম্বর সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নম্বর সড়কের আশপাশের এলাকায় শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ছোট বোন শেখ রেহানা এবং তার ছেলে-মেয়ে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিকের নামে প্লটগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা ১০ কাঠার প্লট (প্লট নম্বর ৯) বরাদ্দ পেয়েছেন। ২০২২ সালের ৩ অগাস্ট তার নামে রাজউক প্লটের বরাদ্দপত্র দেয়। সজীব ওয়াজেদ জয় (প্লট নম্বর ১৫) এবং মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলও (প্লট নম্বর ১৭) ১০ কাঠা করে প্লট পেয়েছেন। জয়ের বরাদ্দপত্র ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর দেওয়া হয় এবং ১০ নভেম্বর মালিকানা সংক্রান্ত রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়। পুতুলের বরাদ্দপত্র দেওয়া হয় ওই বছরের ২ নভেম্বর।
শেখ রেহানাও ১০ কাঠার প্লট (প্লট নম্বর ১৩) বরাদ্দ পেয়েছেন। তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির (প্লট নম্বর ১১) এবং মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর (প্লট নম্বর ১৯) নামেও একই পরিমাণের প্লট বরাদ্দ হয়েছে।
তার আগে অক্টোবর মাসে শেখ হাসিনার পরিবারের ছয় সদস্যের নামে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়ম নিয়ে সংবাদমাধ্যমে আসা অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দেয় হাই কোর্ট। একইসঙ্গে এ কমিটিকে আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫ বছরে (২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে) রাজউকের প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগও তদন্ত করতে বলা হয়।
১৪ জানুয়ারি শেখ হাসিনাসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন দুদকের উপ পরিচালক সালাহউদ্দিন। তদন্তে পাওয়া আরো চারজনসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ১০ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া।
মামলার অপর আসামিরা হলেন—সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার ও কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য (উন্নয়ন) অবসরপ্রাপ্ত মেজর প্রকৌশলী সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, সাবেক সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) শফি উল হক, রাজউকের উপপরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) নায়েব আলী শরীফ।
আর পুতুলের প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে তিনি ও তার মা শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে ১২ জানুয়ারি মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া।
মামলার এজাহারে বলা হয়, পুতুলের নিজের বা তার পরিবারের অন্য সদস্যদের মালিকানায় ঢাকা শহরে রাজউকের এলাকায় বাড়ি বা ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা রয়েছে। এ তথ্য ‘গোপন’ করে রাজউকের আরেক প্রকল্প পূর্বাচল নতুন শহরে প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন পুতুল। সরকারের সর্বোচ্চ পদে থাকাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের ‘প্রভাবিত ও ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন’।
এজাহারে বলা হয়, আসামিরা একে অন্যের সঙ্গে ‘যোগসাজশ করে নিজেরা লাভবান হয়ে ও অন্যকে লাভবান করার জন্য’ পুতুলের নামে প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। এক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগও আনা হয়েছে।
তদন্তে পাওয়া আরো দুই আসামিসহ মোট ১৮ জনের বিরুদ্ধে ১০ মার্চ অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা আফনান জান্নাত কেয়া।
পুতুল ও তার মা ছাড়া অভিযুক্ত অন্যরা হলেন—সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার ও কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মো. নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য (উন্নয়ন) অবসরপ্রাপ্ত মেজর প্রকৌশলী সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম, রাজউকের উপপরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) হাফিজুর রহমান ও হাবিবুর রহমান।
জয়ের প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে তিনি এবং তার মা শেখ হাসিনাসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে ১৪ জানুয়ারি মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুল হাসান। তদন্তে নাম আসা আরো দুজনসহ মোট ১৭ জনের বিরুদ্ধে ২৪ মার্চ অভিযোগপত্র দাখিল করেন রাশেদুল হাসান।
মামলার অপর আসামিরা হলেন—সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার ও কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মো. নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য (উন্নয়ন) অবসরপ্রাপ্ত মেজর প্রকৌশলী সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, রাজউকের উপপরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) নায়েব আলী শরীফ, সাবেক উপপরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) কামরুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) মাজহারুল ইসলাম।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সরকারের সর্বোচ্চ পদে দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ছেলের নামে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দ দিয়েছেন। অথচ জয় প্লট বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য ছিলেন না।
চলতি বছর এপ্রিলে আদালত মামলার অভিযোগপত্রগুলো গ্রহণ করে শেখ হাসিনা, জয়, পুতুলসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। তাদের গ্রেপ্তার করা গেল কি না, সেই সংক্রান্ত প্রতিবেদন পুলিশকে জমা দিতে বলা হয়। তবে তাদের গ্রেপ্তার করা যায়নি জানিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ।
তাদের আদালতে হাজির হতে গেজেট প্রকাশ করা হয়। তবুও তারা আদালতে হাজির হননি। আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শেষে গত ৩১ জুলাই তিন মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন। গত ১১ অগাস্ট মামলা তিনটিতে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়।
ওইদিন সাক্ষ্য দেন শেখ হাসিনার প্লট দুর্নীতি মামলার বাদী দুদকের উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন, পুতুলের প্লট মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া এবং জয়ের প্লট মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুল হাসান।
এরপর ২৬ অগাস্ট ১৭ জন সাক্ষ্য দেন। তারা হলেন- রাজউকের উপপরিচালক মো. মাহবুবুর রহমান, সহকারী পরিচালক অসীম শীল, সহকারী পরিচালক উল্লাস চৌধুরী, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আক্তার জাহান, দুদকের সহকারী পরিচালক ধীরাজ চন্দ্র বর্মন, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের অফিস সহকারী শফিকুল ইসলাম ও দুদকের সহকারী পরিচালক সৌরভ দাস। তাদের মধ্যে শেখ হাসিনা ও পুতুলের দুই মামলায় ছয়জন করে ১২ জন এবং জয়ের মামলায় পাঁচজন সাক্ষ্য দেন।
গত ২ সেপ্টেম্বর তিন মামলায় ৬ জন করে ১৮ জন সাক্ষ্য দেন। তারা হলেন—সোনালী ব্যাংকের গণভবন শাখার সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার গৌতম কুমার সিকদার, প্রিন্সিপাল অফিসার শরিফুল ইসলাম, কর অঞ্চল -৬ এর সাট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার রেজাউল হক, নোটিশ সার্ভার আবু তাহের, কর অঞ্চল খুলনা কর পরিদর্শক লুৎফর রহমান এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অফিস সহায়ক দেলোয়ার হোসেন।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর তিন মামলায় সাক্ষ্য দেন ১০ জন। তারা হলেন—ঢাকার তৎকালীন মহানগর হাকিম মো. জাকির হোসেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একান্ত সহকারীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওসমান গনি, সোনালী ব্যাংকের গণভবন শাখার প্রধান ক্যাশিয়ার রিয়াদ মাহমুদ, ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের রেজিস্ট্রার মিঠুন চন্দ্র বালা ও নাহিদ হোসেন।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা ও জয়ের মামলায় নয়জন সাক্ষ্য দেন। তবে পুতুলের মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। ওইদিন যারা সাক্ষ্য দেন, তারা হলেন—প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের মটর ক্লিনার মোহাম্মদ উজ্জ্বল হোসেন, গাজীপুরের কালীগঞ্জের সাব রেজিষ্ট্রার জাহিদুর রহমান, সদর রেকর্ডরুমের সাব রেজিস্ট্রার মাহবুবুর রহমান, ঢাকার তৎকালীন মহানগর হাকিম এম মেজবাহউর রহমান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উচ্চমান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক তৈয়বা রহিম, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মুদ্রাক্ষরিক কামরুন্নাহার, ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সেফাতুল্লাহ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কম্পিউটার অপারেটর মুক্তি তরফদার। শেখ হাসিনার মামলায় চারজন এবং জয়ের মামলায় সাক্ষ্য দেন পাঁচজন।
গত ১৫ অক্টোবর তিন মামলায় সাক্ষ্য দেন ১২ জন। তারা হলেন- প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের পরিচালক-২ আল মামুন মিয়া, রাজউকের উপসচিব তানজিল্লুর রহমান, সাঁট মুদ্রাক্ষরিক জাকির হোসেন এবং সাব-রেজিস্টার মাহবুবুর রহমান ও জাহিদুর রহমান। তাদের মধ্যে শেখ হাসিনার মামলায় পাঁচজন, পুতুলের মামলায় পাঁচজন এবং জয়ের মামলায় দুজন সাক্ষ্য দেন।
এরপর ২৯ অক্টোবর তিন মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন রাজউকের সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) খুরশীদ আলম। তবে আদালত জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। ওইদিন ৮ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন।
সাক্ষীরা হলেন—গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব জহিরুল ইসলাম খান, অগ্রণী ব্যাংকের রাজউক ভবন শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক লায়লা নূর বেগম ও সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মোহাম্মদ মনির হোসেন, দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর সহকারী পরিচালক ধীরাজ চন্দ্র বর্মন ও আফনান জান্নাত কেয়া এবং দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোরের উপপরিচালক সালাউদ্দিন।
তিন মামলায় সব আসামি পলাতক থাকায় একতরফাভাবে বিচার চলছিল। তবে খুরশীদ আলম আত্মসমর্পণের পর থেকে সাক্ষীদের জেরা শুরু হয়। আগে শুধু সাক্ষীরা আদালতে জবানবন্দি দিতেন।
গত ৩ নভেম্বর শেখ হাসিনার মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া, জয়ের মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক এসএম রাশেদুল হাসান এবং রাজউক কর্মকর্তা তানজিলুর রহমান সাক্ষ্য দেন। তবে ওইদিন দুই তদন্ত কর্মকর্তার জেরা শেষ হয়নি। ৬ নভেম্বর শেখ হাসিনার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাক্ষ্য দেন।
খুরশীদ আলমের পক্ষে বাদীকে জেরার আবেদন করলে তা মঞ্জুর হয়। ১০ নভেম্বর শেখ হাসিনার মামলায় সাক্ষ্য শেষ হয়। তবে জয় ও পুতুলের মামলায় তদন্ত কর্মকর্তার জেরা অব্যাহত থাকে।
শেখ হাসিনার মামলায় ১৭ খুরশীদ আলম আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানিতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। অপর আসামিরা পলাতক থাকায় নিজেদের নির্দোষ দাবি করতে পারেননি। ২৩ নভেম্বর যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিন ঠিক করা হয়। একইদিনে জয় ও পুতুলের মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনের দিন ঠিক করে আদালত।
২৩ নভেম্বর হাসিনার মামলা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয় এবং জয় ও পুতুলের মামলায় আত্মপক্ষ শুনানি ও যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায়ের দিন বৃহস্পতিবার ঠিক করা হয়।
তিন মামলায় কার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ
তিন মামলাতেই এজাহারে থাকা নামের সঙ্গে তদন্তে নতুন নাম এসেছে। আসামিদের কার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ তার বিস্তারিত অভিযোগপত্রে তুলে ধরেছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
হাসিনার প্লট মামলা
শেখ হাসিনা: প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে শেখ হাসিনা নিজের মালিকানায় ও তার ছেলে, মেয়ে, বোন এবং বোনের দুই ছেলে-মেয়ের নামে ঢাকা শহরে বাড়ি বা ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা থাকার পরেও সেই তথ্য গোপন করে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পের প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। এতে বরাদ্দ সংক্রান্ত আইন ও নীতিমালা লঙ্ঘন হয়েছে।
শরীফ আহমেদ: এই সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী ‘ক্ষমতার অপব্যবহার করে’ শেখ হাসিনার নামে প্লট বরাদ্দ দেন। অপর আসামিদের সঙ্গে যোগসাজশ করে এ অনুমোদন দেন।
পূরবী গোলদার: গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে আইন-কানুন ও বিধি-বিধানের তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে প্লট বরাদ্দে সহায়তা করেন।
কাজী ওয়াছি উদ্দিন: সচিব হিসেবে গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালনকালে আইন কানুন ও বিধি-বিধানের তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে প্লট বরাদ্দের সহায়তা করেন।
শহীদ উল্লা খন্দকার: সচিব হিসেবে গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে প্লট বরাদ্দ অনুমোদন ও হস্তান্তরে সহায়তা করেন।
রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) খুরশীদ আলম, সাবেক সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) শফি উল হক, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন ও সাবেক সদস্য (উন্নয়ন) অবসরপ্রাপ্ত মেজর প্রকৌশলী সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী রাজউকের নীতিমালা লঙ্ঘন করে এক সভায় শেখ হাসিনার অনুকূলে প্লট বরাদ্দ অনুমোদন করেন। নিজেরা লাভবান হয়ে এবং অন্যকে লাভবান করার উদ্দেশ্যে প্লটটি শেখ হাসিনার নামে হস্তান্তর করে অপরাধে সহায়তা করেন।
নায়েব আলী শরীফ: আইন অনুযায়ী শেখ হাসিনা প্লট বরাদ্দের জন্য যোগ্য না হলেও অসৎ উদ্দেশ্যে সেই কাজে সহায়তা করেন রাজউকের সাবেক এ উপপরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩)।
আর গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকারের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে প্লট বরাদ্দে সহায়তার কথা বলা হয়েছে।
জয়ের প্লট মামলা
সজীব ওয়াজেদ জয়: রাজউক এলাকায় আবাসন সুবিধা থাকার পরও তা হলফনামায় গোপন করে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত আইন, বিধি-বিধান লঙ্ঘন করে মা শেখ হাসিনাকে প্রভাবিত করে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেন।
শেখ হাসিনা: তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ করে ছেলেকে প্লট বরাদ্দের ব্যবস্থা করে দেন। এর মাধ্যমে পরিবারকে আর্থিকভাবে লাভবান করেছেন।
মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন: প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি সংরক্ষিত কোটায় জয়ের নামে ১০ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দের বিষয়ে গৃহায়ন সচিবকে চিঠি দেন। তিনি ও শেখ হাসিনা যোগসাজশ করে নিজে ও অপরকে শাস্তি থেকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে সরকারপ্রধানের দপ্তরের একটি নথি বিনষ্ট করেছেন অথবা গায়েব করেছেন।
সাইফুল ইসলাম সরকার: গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ের এ প্রশাসনিক কর্মকর্তা আইন ও বিধি-বিধানের তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত নথিতে সই করেন।
পূরবী গোলদার: গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় তিনি আইন ও বিধি-বিধানকে পাশ কাটিয়ে প্লট বরাদ্দের প্রস্তাব ও হস্তান্তরে সহায়তা করেন।
কাজী ওয়াছি উদ্দিন: গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ে সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে অবৈধভাবে জয়ের নামে প্লট বরাদ্দে সহায়তা করেন।
শহীদ উল্লা খন্দকার: নিজে লাভবান হতে এবং অন্যকে লাভবান করতে তিনি অবৈধভাবে জয়ের নামে প্লট বরাদ্দে সম্পৃক্ত ছিলেন।
শরীফ আহমেদ: এই সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ করে জয়ের নামে প্লট বরাদ্দ ও হস্তান্তর করেন।
রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) খুরশীদ আলম, সাবেক সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন ও সাবেক সদস্য (উন্নয়ন) অবসরপ্রাপ্ত মেজর প্রকৌশলী সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী যোগসাজশ করে অবৈধভাবে জয়ের নামে এক সভায় প্লট বরাদ্দ অনুমোদন করেন।
রাজউকের সহকারী পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) মাজহারুল ইসলাম, রাজউকের সাবেক উপপরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) নায়েব আলী শরীফ, রাজউকের সাবেক উপপরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) কামরুল ইসলাম, রাজউক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম অবৈধভাবে প্লট বরাদ্দের নথিতে সিই করেন।
পুতুলের প্লট মামলা
সায়মা ওয়াজেদ পুতুল: রাজউক এলাকায় আবাসন সুবিধা থাকার পরও তা হলফনামায় গোপন করে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত আইন, বিধি-বিধান লঙ্ঘন করে মা শেখ হাসিনাকে প্রভাবিত করে রাজউকে কোনো আবেদন না করেই ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেন।
শেখ হাসিনা: তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ করে ছেলেকে প্লট বরাদ্দের ব্যবস্থা করে দেন। এর মাধ্যমে পরিবারকে আর্থিকভাবে লাভবান করেছেন। সরকারপ্রধানের দায়িত্ব থাকা অবস্থায় তার দপ্তরের কর্মকর্তা মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনের সঙ্গে যোগসাজস করে কার্যালয়ের একটি নথি নষ্ট করেছেন অথবা গায়েব করেছেন।
মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন: প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি সংরক্ষিত কোটায় জয়ের নামে ১০ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দের বিষয়ে গৃহায়ন সচিবকে চিঠি দেন। তিনি ও শেখ হাসিনা যোগসাজশ করে নিজে ও অপরকে শাস্তি থেকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে সরকারপ্রধানের দপ্তরের একটি নথি বিনষ্ট করেছেন অথবা গায়েব করেছেন।
সাইফুল ইসলাম সরকার: গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ের এ প্রশাসনিক কর্মকর্তা বিধি-বিধানের তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত নথিতে সই এবং অপরাধ কর্মে সহায়তা করেন।
প্রবীর গোলদার: গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ের এই সিনিয়র সহকারী সচিব সরকারি দায়িত্ব অমান্য করে অবৈধভাবে পুতুলকে প্লট বরাদ্দে সহায়তা করেন।
কাজী ওয়াছি উদ্দিন: গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ে সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বিধি-বিধানের তোয়াক্কা না করে পুতুলের নামে প্লট বরাদ্দে নথিতে সই করেন এবং প্লট হস্তান্তর কাজে অন্যদের সহায়তা করেন।
শহীদ উল্লা খন্দকার: সচিব হিসেবে গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে প্লট বরাদ্দ অনুমোদন ও হস্তান্তরে সহায়তা করেন।
শরীফ আহমেদ: এই সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ করে পুতুলের নামে প্লট বরাদ্দ ও হস্তান্তর করেন।
রাজউকের উপপরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) হাফিজুর রহমান ও হাবিবুর রহমান, পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম ও রাজউকের সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) নুরুল ইসলাম অবৈধভাবে প্লট বরাদ্দে নথিতে সই করেন।
এছাড়া অন্য আসামিরা অবৈধভাবে প্লট বরাদ্দ দিয়ে ‘নিজে লাভবান হয়েছেন এবং অন্যকে লাভবান করেছেন’ বলে অভিযোপত্রে বলা হয়।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তিনি হবেন দ্বিতীয় সাবেক সরকারপ্রধান, যিনি দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত।
এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছিল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আপিলে তিনি দুই মামলাতেই খালাস পান।
তার আগে সাবেক সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এক ডজনের বেশি দুর্নীতির মামলার আসামি হন। তার মধ্যে জনতা টাওয়ারসহ একাধিক মামলায় তিনি হন দণ্ডিত।






