সংসদ নির্বাচন: কী নিরাপত্তা পরিকল্পনা ইসির

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অপব্যবহার রোধ এবং ড্রোনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সভায় তুলে ধরেছে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচনকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে করছেন এএমএম নাসির উদ্দিন নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। এ সভায় এগুচ্ছ কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে।
রোজার আগে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে সংসদ নির্বাচন হবে। ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করবে ইসি।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম চলছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ভোটার তালিকা হালনাগাদ এবং নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ কার্যক্রম ইতোমধ্যে শেষ করা হয়েছে।
এছাড়া রাজনৈতিক দল নিবন্ধন, ভোটার তালিকার সিডি প্রস্তুত, ভোটকেন্দ্র স্থাপনের নিমিত্ত প্রতিষ্ঠান বাছাইসহ কিছু প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া নির্বাচনের সময়সূচি/তফসিল ঘোষণার আগে ও পরে নির্বাচনি এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাসহ আরও কিছু বিষয়ে প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম নেওয়ার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করছে নির্বাচন কমিশন।
সোমবার সকালে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এ মতবিনিময় সভা শুরু হয়। ভোট প্রস্তুতির মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিদের নিয়ে এএমএম নাসির উদ্দিন নেতৃত্বাধীন ইসির প্রথম বৈঠক এটি।
সংলাপে চার নির্বাচন কমিশার, ইসি সচিব উপস্থিত রয়েছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনিসহ আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর প্রধান ও প্রতিনিধিদের মধ্যে আছেন, পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম, সেনাবাহিনী প্রধানের প্রতিনিধি লেফট্যানেন্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম, বিমানবাহিনীর প্রধানের প্রতিনিধি এয়ার ভাইস মার্শাল রুশাদ দিন আসাদ, নৌবাহিনী প্রধানের প্রতিনিধি রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলী, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান।
আরও আছেন এনএসআইয়ের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবু মোহাম্মদ সরোয়ার ফরিদ, ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, আনসার ভিডিপি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আব্দুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ, কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়াল অ্যাডমিরাল মো. জিয়াউল হক, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল কাইয়ুম মোল্লা, ঢাকার র্যাব হেডকোয়ার্টারের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান, এসবির অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (প্রশাসন ও অর্থ) জি এম আজিজুর রহমান এবং সিআইডির অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. ছিবগাত উল্ল্যাহ।
সভায় আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কাজের বিষয়গুলো কার্যপত্রে তুলে ধরা হয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মূলত তিনটি পর্যায়ে কাজ করে থাকে।
তফসিল ঘোষণার আগে, ভোটের সময় ও ভোটের পরে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা কাঠামোর বিষয়ে বলা হয়েছে-
>> তফসিল ঘোষণার পূর্বে আইনশৃঙ্খলা কার্যক্রম: আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য চিহ্নিত অপরাধী ও সন্ত্রাসী এবং নির্বাচনে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে এমন দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া আবশ্যক।
>> তফসিল ঘোষণা হতে নির্বাচন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা কার্যক্রম: অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্যতম পূর্বশর্ত হল নির্বাচনকালীন সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও শান্তিপূর্ণ রাখা। সকল প্রার্থী যাতে বিধিসম্মতভাবে নির্বাচনি কার্যক্রম ও প্রচার প্রচারণা চালাতে পারে এবং ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে তার ব্যবস্থা নেওয়া।
নির্বাচনি এলাকায় সন্দেহভাজন/বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী রোধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসন যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করে। ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
এছাড়াও নির্বাচনি এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে র্যাব, পুলিশ, বিজিবি, আমর্ড পুলিশ, ব্যাটালিয়ন আনসার ও কোস্টগার্ড নিয়োজিত থাকে। এছাড়াও ম্যাজিস্ট্রেরিয়াল ক্ষমতাসহ স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সশস্ত্র বাহিনী নিয়োজিত থাকে।
>> নির্বাচন পরবর্তী আইনশৃঙ্খলা কার্যক্রম: নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা রোধে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সাধারণত নির্বাচনের পরবর্তী দিন থেকে ৪৮ ঘন্টা বা ২ দিন স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োজিত থাকে। এ সংক্রান্ত কাজে আইনগত নির্দেশনা দেওয়ার জন্য এক্সিকিউটিভম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বপালন করেন।
এছাড়াও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ইলেক্ট্রোরাল ইনকোয়ারি কমিটি ভোটের পরবর্তী দুই দিন পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত বিচার কাজ পরিচালনা করেন।
কখন কিভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করবে
এবার আইন শৃঙ্খলা সভায় অন্তত ১৩টি বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তাব রেখেছে ইসি সচিবালয়।
>>ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও নির্বাচনি এলাকা তথা সমগ্র দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন: এতে বলা হয়েছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোট গ্রহণের পর পর্যন্ত নির্বাচনি এলাকায় প্রচলিত আইন, নির্বাচনি বিধি-বিধান ও পদ্ধতিগতভাবে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। নির্বাচনের কয়েক দিন আগে থেকে নির্বাচনের কয়েক দিন পর পর্যন্ত প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও ভোটকেন্দ্রের বাইরে সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের আলোকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে নির্দেশনা জারির মাধ্যমে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ লক্ষ্যে নির্ধারিত দিনের জন্য বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন ও আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়াও নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুসারে ভোটগ্রহণের কয়েক দিন পর পর্যন্ত নির্বাচনি এলাকা অর্থাৎ সমগ্র দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন হতে পারে।
>> আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর কার্যক্রমে সমন্বয় সাধন ও সুসংহতকরণ নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে নির্বাচন কমিশন থেকে সম্ভাব্য সকল ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এ লক্ষ্যে সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয়সাধন করে একটি ফলপ্রসূ পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছে ইসি।
তাছাড়া নির্বাচনি এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে বিভিন্ন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সহায়তা প্রয়োজন হবে।
বিশেষ করে পল্লী এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার্থে গ্রাম পুলিশ/চৌকিদার/দফাদার নিয়োগের পাশাপাশি এ ধরণের কাজে ইউনিয়ন পরিষদের সচিবগণকে সম্পৃক্ত করার প্রয়োজন হবে। তাই আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সার্বিক কার্যক্রম সমন্বয়ের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ স্থানীয় গোয়ন্দা সংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্বিতভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা যেতে পারে এবং স্থানীয় সরকারের আওতাধীন ইউপি সচিব/গ্রাম পুলিশদের এ কাজে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
>>সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা ও সংখ্যালঘুসহ সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ: সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করার লক্ষ্যে সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন, যা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পূর্বশর্ত।
এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ আবশ্যক। কেউ যাতে অন্তর্ঘাতমূলক বা অন্য কোন নাশকতামূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে এ সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে না পারে সে দিকে সবার সতর্ক দৃষ্টি রাখতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে বলবে নির্বাচন কমিশন।
>>অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার রোধ/নিয়ন্ত্রণ: সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচনি এলাকায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও ব্যবহারকারীগণকে দমন এবং অনুরূপ কার্যক্রম জোরদার করার জন্য যৌথ অভিযান অথবা অনুরূপ ব্যবস্থা নিতে বলবে ইসি।
তাছাড়া তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রাখার জন্য বৈধ অস্ত্র প্রদর্শনের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবেন। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে পৃথক নির্দেশনা জারি করার বিষয়টি সভায় তুলে ধরা হবে।
>> এআই অপব্যবহার রোধ: এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুল ও মিথ্যা তথ্যের প্রচারণা রোধের কৌশল নির্ধারণে ইসি কথা বলবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে বা অন্য কোনভাবে বিভ্রান্তিকর ও মানহানিকর তথ্য প্রচার করে যাতে কারো সম্মানহানি ও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গণতান্ত্রিক মত প্রকাশের একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম হলেও অতীতে এটি বারবার সহিংসতা উসকে দেওয়া, জনগণের আস্থা বিনষ্ট করা ও ব্যক্তির চরিত্র হননের কাজে ব্যবহৃত হয়েছে, যা বর্তমানে আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। ফলে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুল ও মিথ্যা তথ্যের প্রচারনা রোধের কৌশল নির্ধারণের প্রয়োজন হবে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সকলের এ বিষয়ে কর্মকৌশল গ্রহণ করে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দেবে কমিশন।
>> নির্বাচনে বিদেশি সাংবাদিক ও প্রাক-পর্যবেক্ষকদের নিরাপত্তা/সহযোগিতা: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য বিদেশ হতে আসা প্রাক পর্যবেক্ষক প্রতিনিধি, পর্যবেক্ষক ও সাংবাদকগণ যাতে নিরাপত্তার সাথে দায়িত্ব পালন করতে পারেন তার জন্য সকল প্রকার আইনানুগ সহযোগিতা প্রদান করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করার জন্য বলছে ইসি।
>> পোস্টাল ভোটিং ব্যবস্থাপনা: প্রবাসী ভোটার এবং দেশে পোষ্টাল ব্যালটে ভোটদানে যোগ্য ভোটারের ভোটদানের জন্য পোস্টাল ব্যালট পেপার নিরাপত্তার সাথে ডাকবিভাগ হতে বিমান বন্দর হয়ে সংশ্লিষ্ট দেশে প্রেরণ এবং একইভাবে উক্ত ব্যালট পেপার ফেরত আসার সময় নিরবিচ্ছিন্ন নিরাপত্তার সাথে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে প্রেরণ নিশ্চিত করতে হবে।
তাছাড়া রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে পোস্টাল ব্যালট পেপার গণনার সময়ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
>> নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদেরকে মোতায়েন পরিকল্পনা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ভোটকেন্দ্রে পুলিশ, আনসার ও ক্ষেত্র বিশেষ গ্রাম পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। তাছাড়া নির্বাচনি এলাকায় বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হতে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছিল। তাছাড়া িইন এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার অনুযায়ী দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে সশস্ত্র বাহিনী হতে স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছিল। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুসারে ভোটকেন্দ্রে ও নির্বাচনি এলাকায় ফোর্স মোতায়েনসহ এ বিষয়ক পরিকল্পনা প্রণয়ন করার প্রয়োজন হবে।
>> অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ন্ত্রণ: নির্বাচনপূর্ব ও নির্বাচন পরবর্তীতে বহিরাগত প্রভাবশালী ও অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের দমনের লক্ষ্যে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে।
>> অঞ্চল, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নির্বাচন অফিসের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ: বর্তমানে নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ সংক্রান্ত কার্যক্রম শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্নের লক্ষ্যে অঞ্চল, জেলা ও থানা/উপজেলা পর্যায়ে নির্বাচন অফিসে নিরাপত্তা বিধান অত্যন্ত জরুরি। এছাড়াও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়সহ মাঠ পর্যায়ের নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের নিরাপত্তা বিধান করা প্রয়োজন। স্থানীয়ভাবে পুলিশ বাহিনী কর্তৃক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে দিক-নির্দেশনা ও তদারকি প্রয়োজন।
>> পার্বত্য/দুর্গম এলাকায় নির্বাচনি দ্রব্যাদি পরিবহণ এবং ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের জন্য হেলিকপ্টার সহায়তা : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ অন্যান্য নির্বাচনে পার্বত্য জেলার ০৩টি নির্বাচনি এলাকার কতিপয় ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনি দ্রব্যাদি পরিবহণ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের আনা-নেয়ার কাজে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের হেলিকপ্টার ব্যবহৃত হয়েছে। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে রাঙ্গামাটি, বান্দারবান ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার নির্ধারিত ভোটকেন্দ্রসমূহে উক্তরূপ কাজে হেলিকপ্টার ব্যবহারের প্রয়োজন হবে।
তাছাড়া যেসকল এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক নাই, সেই সকল এলাকায় যোগাযোগের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অথবা বিজিবি এর ওয়্যারলেস ব্যবহারের প্রয়োজন
সবশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ ধরনের ভোটকেন্দ্রে যোগাযোগের জন্য রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় পুলিশের ওয়্যারলেস ব্যবহার করা হয়।
>> গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের মতামত/পরামর্শের আলোকে শান্তিশৃঙ্খলা বিষয়ক কার্যক্রম গ্রহণ: তফসিল পূর্ব ও নির্বাচনপূর্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নির্বাচনি এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখাসহ সার্বিক নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়নে গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের মতামত ও পরামর্শের আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন হবে।
>> ড্রোন ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ: ড্রোন আধুনিক প্রযুক্তি হলেও বেশ কিছু অসুবিধা থাকায় এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করার প্রয়োজন হবে। ড্রোন ব্যবহার নিষিদ্ধকরণের কারণ হল-
(ক) গোপনীয়তা লঙ্ঘন: ড্রোন ব্যক্তিগত স্থান, অফিস, ভোটকক্ষ নজরদারি করতে পারে যা ভোটারের
গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার লঙ্ঘন হতে পারে।
(খ) নিরাপত্তার ঝুঁকি: অননুমোদিত ড্রোনগুলি বিপজ্জনক বস্তু বা বিস্ফোরক বহন করতে পারে এবং ভোটকেন্দ্রের
ভিতরে বা জনসমাগমের উপর হামলা চালাতে পারে।
(গ) আইন ও বিধি লঙ্ঘনের ঝুঁকি: ড্রোন ব্যবহারের জন্য কিছু নিয়ম ও বিধি রয়েছে, যা অনেকেই অনুসরণ করে না। ফলে ভোটকেন্দ্রে ড্রোন উড্ডয়ন একটি নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
(ঘ) ব্যক্তিগত তথ্য চুরি: ড্রোন ব্যবহারের মাধ্যমে ভোটারের ভোটদানের ছবি বা ভিডিও ধারণ করে তা অপব্যবহার করতে পারে।
এসব প্রস্তাব, সুপারিশ ও পরামর্শের আলোকে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা করবে নির্বাচন কমিশন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ন্ত্রণালয়/বিভাগ/অধিদপ্তর/দপ্তর/সংস্থাসমূহ কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে নির্বাচন কমিশন প্রত্যাশা করে আইন শৃঙ্খলা সভায়।