দেশের ভবিষ্যৎ গড়তে শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করা প্রয়োজন

ঢাকা, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : প্রতিটি শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য তাদের পুষ্টিমান উন্নয়ন অপরিহার্য। সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করা গেলে শিশুদের বয়স অনুযায়ী উচ্চতা ও ওজন ঠিক থাকবে। তাদের শেখার সক্ষমতা ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়বে। এ কারণে বলা যায়, শিশু পুষ্টির উন্নয়ন দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গঠনের অন্যতম ভিত্তি।
প্রতিটি শিশুর জীবনের প্রথম ২৪ মাসে পুষ্টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিশু প্রথমত মায়ের বুকের দুধের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে পুষ্টি পায়। শিশুর বয়স ছয়মাস হলে মায়ের দুধের পাশাপাশি পরিপুরক খাদ্য দিতে হয়। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পুর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় অপুষ্টির কারণে অনেক শিশু খর্বকায় ও কৃশকায় হচ্ছে। এ ধরণের শিশুর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা অপেক্ষাকৃত কম থাকে। ফলে মৃত্যুঝুঁকি বেশী থাকে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সবার আগে মা ও শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে। বিশুদ্ধ পানি ও উন্নত পয়:নিষ্কাশন নিশ্চিত করতে হবে। মাতৃদুগ্ধ পানে জোর দিতে হবে। শিশুর স্বাভাবিক বিকাশের জন্য মায়ের বুকের দুধ পান করানো অপরিহার্য এবং এর কোনো বিকল্প নেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মানবদেহের সকল উপাদান সচল রাখার জন্য পুষ্টির প্রয়োজন রয়েছে। এক্ষেত্রে দুধ হলো অন্যতম একটি খাবার, যার কোন বিকল্প নেই। দেহ গঠনের প্রয়োজনীয় সকল প্রোটিন দুধে পাওয়া যায়। শিশু, বাড়ন্ত বয়সী, অন্ত:সত্ত্বা ও স্তন্যদানকারী মায়ের জন্য প্রতিদিন দুধ অপরিহার্য। শিশু ও বাড়ন্ত বয়সে হাড়, দাঁতের গঠন ও মজবুতের জন্য এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের হাড়ের ভঙ্গুরতা রোধ করার জন্য দুধ খুবই প্রয়োজনীয় একটি খাবার।
পাঁচ বছরের নীচে শিশুদের পুষ্টি নিশ্চিত করা প্রয়োজন সবার আগে। কেননা, এই বয়সী শিশুদের পুষ্টি নিশ্চিত করা গেলে তারা পড়ালেখা ভালো করে। খর্বাকৃতি ও ওজন স্বল্পতার মতো শারীরিক জটিলতাও কমে আসে। আমাদের দেশে অপুষ্টির প্রধান কারণ হচ্ছে, অধিক জনসংখ্যা, দরিদ্রতা, পুষ্টি সম্পর্কে অজ্ঞতা ও অসচেতনতা। অধিক জনসংখ্যার কারণে খাদ্যদ্রব্যের সহজলভ্যতা কমে যায়। ফলে শিশু, কিশোর-কিশোরীরা স্বাভাবিক পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয়। আর্থিক কারণে প্রয়োজনীয় খাবার খেতে না পারায় অপুষ্টির শিকার হয় অনেকে। আবার যে পরিবারে অর্থের সমস্যা নেই, সেই পরিবারের ছেলেমেয়েরাও অতিরিক্ত পরিমানে জাঙ্কফুড খাওয়ায় অপুষ্টির শিকার হতে পারে।
পুষ্টিকর খাবার শুধু খাদ্যই নয়, ওষুধ হিসেবেও কাজ করে। খাদ্য নিরাপদ হওয়া জরুরি। কিন্তু বর্তমানে ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে নানা ধরনের কীটনাশক ও রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করায় এবং খাবার তৈরিতে ভেজাল দেওয়ায় খাদ্য দূষিত হচ্ছে। দূষিত খাদ্য গ্রহণের কারণে এখন রোগের ঝুঁকিও বাড়ছে।
এক্ষেত্রে দেশের মানুষের পুষ্টি ও খাদ্য নিয়ে জ্ঞানের অভাবই মূলত দায়ী, অর্থনৈতিক কারণ নয়। অনেকেরই ধারণা বেশী বেশী দুধ ও মাংস খেলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে। কিন্তু প্রতিটি মানুষেরই সুষম খাবার খাওয়া উচিত। সুষম খাবার হচ্ছে এমন একটি খাবার যে খাবারের মধ্যে খাদ্যের সবকয়টি উপাদানের উপস্থিতি রয়েছে। সে জন্য মাংস ও দুধের পাশাপাশি মাছ, ডিম, ডাল, ভাত, রুটি, সবজি, ফলমূল সবই খেতে হবে।
সার্বিকভাবে দেশে শিশু, কিশোর-কিশোরী ও নারীদের অপুষ্টি দূর করতে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। শিশুদের মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো, উপযুক্ত সম্পুরক খাবার খাওয়ানো, ছয় মাস অন্তর ভিটামিন ‘এ’ খাওয়ানো। এ ধরনের কার্যক্রম বাড়াতে হবে, তাহলে শিশুদেরকে অপুষ্টির হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে এবং কিশোর বয়সে অপুষ্টির শিকার কম হবে। ভাতের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমানে ডাল, শাকসবজি, দেশীয় ফলের চাষ ও উৎপাদন বাড়াতে হবে। দেশের পুষ্টিমান উন্নয়নের জন্য সরকারের সাথে নাগরিক সমাজ ও বেসরকারি খাত সমন্বিতভাবে কাজ করলে এক্ষেত্রে ভালো ফল পাওয়া যাবে।