বৃহস্পতিবার ০৩ জুলাই ২০২৫, আষাঢ় ১৯ ১৪৩২, ০৭ মুহররম ১৪৪৭

ব্রেকিং

সংখ্যানুপাতিক ব্যবস্থায়(পিআর) ‘ভবিষ্যৎ বিভক্তি’র শঙ্কা তারেক রহমানের জুলাই বিপ্লব নিয়ে কটূক্তি করায় কুষ্টিয়ায় ট্রাফিক পুলিশ সদস্য ক্লোজড কলেজ প্যাডে ছাত্রদলের প্রচারণা? অধ্যক্ষের ব্যাখ্যা ঘিরে বিতর্ক মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের সংঘাত বিস্তার: বিশ্লেষণ কলম্বিয়ায় পাহাড়ধসে মৃত্যু ১৬, নিখোঁজ অন্তত ৮ “ত্রাণ নিতে এলে গুলি করতাম”—গাজার ঘটনায় মুখ খুললেন ইসরায়েলি সেনারা তেহরানে ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার চলছেই, মৃতের সংখ্যা ছাড়াল ৪৫০ ইরানে বাংলাদেশিদের সহায়তায় হটলাইন চালু উপদেষ্টার গাড়িবহর আটকে বিক্ষোভ: সিলেটে তিনজন কারাগারে ইসরায়েলের টার্গেটে ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার ভবন লন্ডনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক ১৩ জুন তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরবেন: ফখরুল রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হবে কাঁচের মতো স্বচ্ছ ঘর: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নির্বাচনের ঘোষিত সময় মাথায় রেখে যথাসময়ে রোডম্যাপ দেবে ইসি: উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুললেন ছাত্রদল নেতা নাছির উদ্দিন মণিপুরে আবার উত্তেজনা, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের চাপে ঢাকার ৪ থানায় সক্রিয় অর্ধশতাধিক অপরাধী দল জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে: প্রধান উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায় জাতির প্রত্যাশা পূরণ হয়নি: সালাহউদ্দিন আহমদ জুলাই সনদ–ঘোষণাপত্র হলে ঘোষিত সময়ে নির্বাচনে আপত্তি নেই: এনসিপি ২৫ কিলোমিটার যানজট, ২৪ ঘণ্টায় পারাপার ৬৪ হাজার যানবাহন বান্দরবানের রুমা ও থানচি ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আংশিকভাবে প্রত্যাহার গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো, জাতিসংঘ নিরাপত্তা গরম মসলার বাজার শীতল: ক্রেতা কমে যাচ্ছে, দাম কিছুটা স্থিতিশীল ঈদে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দই-মিষ্টি মজুত, রংপুরে হিমাগারে অভিযান ও দুই লাখ টাকা জরিমানা বান্দরবানের লামায় পাহাড় ধসের শঙ্কায় ৬০ রিসোর্ট বন্ধ নির্বাচন নিয়ে তরুণদের প্রতি অসত্য অভিযোগ ও বাস্তবতা ভারতের মুসলমানদের কেন বারবার দেশপ্রেমের প্রমাণ দিতে হয় সংবিধান পরিবর্তন ছাড়া ফ্যাসিবাদ বিলোপ সম্ভব নয়: এনসিপি মুখ্য সমন্বয়ক একুশের বন্ধুত্বে আগামীর পথচলা: বার্ষিক সম্মেলনে ২১তম বিসিএস প্রশাসন ফোরাম বিজিএমইএ`র নতুন নেতৃত্বে আসছেন বাবু, নিরঙ্কুশ জয়ের ইঙ্গিত জিলহজ মাসের আমল ও কোরবানির তাৎপর্য চট্টগ্রামে নারীকে লাথির ঘটনায় ভাইরাল আকাশ চৌধুরী বহিষ্কৃত, জামায়াতের বিবৃতি সংকট নিরসনে উদ্যোগ নেই, আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিল পবিস শ্রমিকরা আনচেলত্তির স্বপ্ন - রিয়াল মাদ্রিদের মতো করে খেলাবেন ব্রাজিলকে ডিমের দাম এখনো চড়া, ডজন ১৩০–১৪০ টাকায় বিক্রি বৈরী আবহাওয়ার কারণে নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপের সঙ্গে সারাদেশের নৌ-যোগাযোগ বন্ধ হারের পর লিটনের মনোভাব - এখনো দুই ম্যাচ বাকি কাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশের সব জুয়েলারি দোকান বন্ধ ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্র চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করবে ডিএনএ টেস্ট করে নামফলক ও মর্যাদা চায় শহীদ পরিবারের সদস্যরা বেতন না পেয়ে ডাকাতি, জাহাজের চিফ ইঞ্জিনিয়ারসহ তিনজন আটক “বাংলাদেশে কৌশলগত স্বার্থ নেই দক্ষিণ কোরিয়ার”—রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং সিক “শাপলার হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই”—হেফাজতের বিবৃতি মির্জা আব্বাস: “করিডর আর স্টারলিংক আনা হচ্ছে আরাকান আর্মির জন্য” জিলহজ মাসের চাঁদ দেখে যে দোয়া পড়বেন নির্বাচনের আগে যতটুকু দরকার, ততটুকুই সংস্কার করতে হবে: মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ‘চিন্তার স্বাধীনতাও হারাচ্ছি?’— নারী কমিশন বিতর্কে গীতিআরার উদ্বেগ ইউক্রেনে রাশিয়ার টানা হামলায় নিহত ১২, কঠোর চাপের আহ্বান জানালেন জেলেনস্কি সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন – তিনটি কঠিন দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট আমরা জুলাই অভ্যুত্থান ক্ষমতার পালাবদল নয়, এটি মৌলিক সংস্কার: নাহিদ হলুদ সাংবাদিকতা’ বিরোধী স্লোগানে উত্তাল শিক্ষক মিছিল ভারতের নিষেধাজ্ঞায় আখাউড়া বন্দর দিয়ে রপ্তানি কমেছে ৪০% বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি চলছে, দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি জাতীয় স্বার্থে অভিমান ভুলে দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান : জামায়াত আমির আন্দোলনের পর অবশেষে নিয়োগ পেলেন ৪৩তম বিসিএসের বাদ পড়া ১৬২ জন নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবিতে ইসির সামনে এনসিপির বিক্ষোভ কাল বাংলাদেশে স্টারলিংকের যাত্রা, স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের নতুন যুগ শুরু নরওয়ের দৃঢ় সমর্থন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি বিগত সরকারের সময় প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসপ্রাপ্ত, এমন অবস্থা ছিল যে খতিবকেও পালাতে হয়েছিল: বাণিজ্য উপদেষ্টা গায়ের জোরে নগর ভবন দখল করে আন্দোলন চালাচ্ছে বিএনপি আবারও রাজপথে নামার ইঙ্গিত আসিফের, সতর্ক করলেন হাসনাত গোপন অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আন্দোলন স্থগিত, ২০ মে আলোচনায় বসবে ঐক্য পরিষদ ভারতের আমদানি নিষেধাজ্ঞা সীমান্ত বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে ভারতের নতুন সিদ্ধান্তে উত্তর-পূর্বাঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশি ভোগ্যপণ্য আমদানি বন্ধ গত ৯ মাসে জুলাই-যোদ্ধাদের ওপর ৩৮টি হামলা জবি’র ৪ দফা দাবি মেনে নেওয়ায় আন্দোলনের সমাপ্তি ঘোষণা ডিবি থেকে মুক্তির পর আন্দোলনে উল্লাস জবি শিক্ষার্থীর গাজা দখলে নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা পুনর্ব্যক্ত করলেন ট্রাম্প শাহরিয়ার হত্যাকাণ্ডে বিচার নিশ্চিতের অঙ্গীকার উপদেষ্টা আসিফের সোনার দাম ভরিতে কমল ৩ হাজার ৪৫২ টাকা, নতুন দর কার্যকর শুক্রবার থেকে ঢাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু: নিরাপত্তা নিশ্চিতে বড় পদক্ষেপ প্রশাসনের আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধে ভারতের উদ্বেগ শ্রীনগরজুড়ে বিস্ফোরণ, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওমর আব্দুল্লাহর উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত: আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ ‘চলবে’, শনিবার গণজমায়েত ড্রোন যুদ্ধ: ভারত-পাকিস্তান বিরোধের নতুন অধ্যায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে সরকার গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আ.লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগ ছাড়বেন না আন্দোলনকারীরা ‘আপ বাংলাদেশ’–এর আত্মপ্রকাশ পূর্বঘোষণা ছাড়া ভারত সফরে সৌদি প্রতিমন্ত্রী, পাকিস্তান-ভারত উত্তেজনায় কূটনৈতিক তৎপরতা তুঙ্গে দ্রুত সিদ্ধান্ত না এলে সারা দেশ থেকে ঢাকা অভিমুখে মার্চের হুঁশিয়ারি নাহিদ ইসলামের দেশীয় ওষুধ কোম্পানি রেনাটাকে ৭০০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে আইএফসি তারেক রহমান: সরকার হয়তো স্বৈরাচারের দোসরদের দেশত্যাগে সহায়তা করছে জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে ভারতের নির্দেশে ৪ বাংলাদেশি টিভি চ্যানেল ইউটিউবে বন্ধ

শিশু

পরকীয়া, পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও নৈতিক অবক্ষয়ে বাড়ছে শিশুহত্যা

আপন মানুষের কাছেও অনিরাপদ শিশুরা

 প্রকাশিত: ১২:১৬, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

আপন মানুষের কাছেও অনিরাপদ শিশুরা

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের ভৈরবে খুন হয় শিশু সাহাল (৩)। কারণ, তার মায়ের পরকীয়ার পথে বাধা ছিল সে। পথের কাঁটা সরাতে প্রেমিক হাছানকে নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন বিলকিস বেগম। অবশ্য তারপর নাটক সাজিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি প্রেমিক জুটির।

হত্যার কারণ খুঁজতে নেমে পুলিশের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে একের পর এক নানা চাঞ্চল্যকর অজানা তথ্য। জানা যায়, তিন বছরের সাহালকে জীবন দিয়ে মায়ের পরকীয়ার মাসুল দিতে হয়েছে।

এর আগে বাদী হয়ে সাহালের দাদী নাসিমা বেগম (৫০) গত ২ জানুয়ারি স্থানীয় থানায় হত্যা দায়ের করেন। ঘাতক বিলকিস ও হাছান এখন জেল-হাজতে। শুধু সাহাল নন; পাঁচ বছরের ফাহিম ও দশ বছরের সানজার পরিণতিও একই।

প্রতিবেশী লাইলি আক্তারের (৩০) সঙ্গে পরকীয়ায় আসক্ত হন ট্রাক্টরচালক আমির হোসেন (২৫)। লাইলি বয়সে বড় হলেও পরকীয়া তাতে বাধা হয়নি। বছরখানেক দু’জনের মধুচন্দ্রিমা চলে। একদিন ঘরে ঢুকেই আপত্তিকর অবস্থায় পিতাকে অন্য নারীর সঙ্গে দেখে ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় ছোট্ট ফাহিম। এ দেখাই তার কাল হয়।

নিজের অপকর্ম আড়াল করতে প্রেমিকার কুমন্ত্রণায় পরিকল্পনা করে নিজ সন্তানকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন আমির। ২০২৪ সালের ৭ নভেম্বর কুমিল্লার দেবিদ্বারে লোমহর্ষক নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে।

এস এম সেলিম (৩৪) ও মাহামুদা হকের (৩৩) সুখের সংসার ছিল। তাদের কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে দুই সন্তান।  বড়জন সানজা মারওয়া ও ছোটজন নিলু মারওয়া। এ নিয়ে ভালোই চলছিল তাদের সবকিছু।

কিন্তু সেলিম অন্য নারীতে আসক্ত হওয়ায় হঠাৎ ১৪ বছরের সংসার এলোমেলো হয়ে যায়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এ নিয়ে প্রায় চলতে থাকে ঝগড়া-ঝাটি। এ ইস্যুতে সেলিম আরও একাধিক নারীতে আসক্ত হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে সন্তান ও স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। সেই অনুযায়ী দুধের সঙ্গে অতিমাত্রায় ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাইয়ে দেন স্ত্রী মাহামুদা ও বড় মেয়ে সানজা মারওয়াকে।

পুলিশের কাছে এ মর্মান্তিক হত্যার বর্ণনা নিজেই দেন সেলিম। ঘটনাটি ছিল ২০২৩ সালের ৩০ জুনের। আগেই ঘুমিয়ে পড়ায় ছোট মেয়ে পিতার পরকীয়ার বলি হওয়া থেকে রক্ষা পেয়ে যান।

এভাবেই পিতা-মাতার পরকীয়া ও অনৈতিক আচরণের বলি হচ্ছে অসংখ্য কোমলমতি নিষ্পাপ শিশু। পরিবারের হাতেই শিশু খুনের ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন মনোবিজ্ঞানীসহ অভিজ্ঞমহল।

মনোবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী, মানবাধিকার কর্মীদের সংঙ্গে আলাপচারিতায় জানা যায়, অসামাজিক এবং অনৈতিক ভাইরাস ‘পরকীয়ার’ থাবায় কেবল সুখের সংসারই নষ্ট হচ্ছে না, নৃশংসভাবে এর বলি হচ্ছে নিষ্পাপ শিশুরা।

কিছু মানুষ বিচ্ছিন্নতাবোধে আক্রান্ত। এই বোধের কারণে সন্তান বা পরিবারের কারও প্রতি তাঁদের মায়া থাকে না। শিশুরাই এই ব্যক্তিদের সহজ শিকারে পরিণত হয়। মানসিক নৈরাজ্য থেকেও স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে ঘায়েল করতে সন্তানকে আঘাত করে থাকেন।

মনোবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী ও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, সামাজিক অদক্ষতা এবং যথাযথ প্রক্রিয়া উপেক্ষা করে এক শ্রেণির পুরুষ ও নারী পরকীয়ার নোংরামিতে লিপ্ত হচ্ছে। দাম্পত্য জীবনে চাহিদার সঙ্কটে সঙ্গী পছন্দ না হলে সামাজিকভাবে, আইনগতভাবে এমনকি ধর্মীয়ভাবে ডিভোর্সের মাধ্যমে স্বামী কিংবা স্ত্রী পরিবর্তন করে সুন্দর জীবন যাপন করার বৈধতা রয়েছে।

তারা বলছেন, আমাদের মধ্যে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ একেবারে শেষ হয়ে গেছে। এ ধরনের অপরাধ রোধ করতে হলে সমাজে বড় ধরনের সচেতনতা তৈরি করতে হবে। আর পরিবার থেকে শুরু করে এ বিষয়ে ভূমিকা পালন করতে হবে সবারই।

২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত প্রকাশিত সন্তানসহ হত্যা ও আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত ২৩টি খবর বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, স্বামী-স্ত্রীর কলহ থেকে নৃশংসভাবে প্রাণ যাচ্ছে সন্তানের। কখনো রাগ-ক্ষোভ-অভিমান, একে অপরকে ‘শিক্ষা দেওয়া’ বা ‘প্রতিশোধ’ নেওয়ার প্রবণতা, কখনো পরকীয়ার জের কিংবা অপরাধমূলক মনোভাব থেকে মা-বাবা নিজ সন্তানকে হত্যা করেছেন।

২০২৩ সালে পুলিশ ব্যুারো ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই) ১৬৫ শিশু হত্যার ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে পিবিআই দেখতে পায়, পারিবারিক বিরোধ ও পূর্বশত্রুতার জেরে শিশুরা বেশি খুন হয়েছে। এর মধ্যে পারিবারিক বিরোধে ৩২ ও পূর্বশত্রুতার জেরে ২২ শিশু খুন হয়েছে।

এছাড়া শিশু হত্যার আরও ২৩টি কারণ খুঁজে পেয়েছে পিবিআই। পিবিআইয়ের সমীক্ষায় দেখা যায়, শিশু হত্যায় পারিবারিক বিরোধ ও পূর্বশত্রুতার পর রয়েছে বিবাহুবহির্ভূত সম্পর্ক ও প্রেমঘটিত কারণ।

গত ৭ বছরে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের কারণে ১০ ও প্রেমঘটিত কারণে ১০ শিশু খুন হয়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহে খুন হয় ৯ শিশু। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ১০ শিশুকে। এ ছাড়া ছিনতাইকারীর হাতে সাত ও অনৈতিক সম্পর্ক দেখে ফেলায় ছয়, প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে পাঁচ, খেলাধুলার জেরে পাঁচ ও কথা কাটাকাটির জেরে পাঁচ শিশুকে হত্যা করা হয়।

এর বাইরে চুরি দেখে ফেলায়, ধর্ষণ ও বলাৎকারে ব্যর্থ হয়ে, কথা না শোনায়, চোর সন্দেহে, মুক্তিপণের জন্য, ছিনতাই করার সময় বাধা, গৃহকর্ত্রী ও মাদ্রাসার শিক্ষকের হাতে এবং সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বে ১১টি শিশু হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, সম্প্রতি নিকটাত্মীয়দের হাতে শিশুহত্যার বিষয়টি উদ্বেগজনক। অপরাধীরা সব সময় দুর্বলকে টার্গেট করে। শিশুরা দুর্বল হওয়ায় লোভ ও স্বার্থের জন্য তাদের হত্যা করা হয়।

আগে মুক্তিপণের জন্য অপহরণ ও প্রতিশোধ নিতে শিশুদের খুন করা হতো। ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনাও ছিল। এটি ঘটতো বেশিরভাগ পরিচিতজন ও স্বজনদের দ্বারা।

কয়েক বছর ধরে পারিবারিক কলহের জেরে স্বামী-স্ত্রীর হাতে সন্তান খুনের ঘটনা বাড়ছে। পুলিশ বলছেন, পারিবারিক অস্থিরতা ও অসততা এর অন্যতম কারণ। তবে এসব ঘটনা গুরুত্ব দিয়ে তদন্তও করা হচ্ছে। গ্রেফতার হচ্ছে অপরাধীরা।

সেভ দ্য চিলড্রেনের পরিচালক রিফাত বিন সাত্তার বলেন, এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনার পেছনে সামাজিক অস্থিরতা একটি বড় কারণ। এ ধরনের পরিবারের সদস্যদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া দরকার।

শহর থেকে প্রান্তিকপর্যায় পর্যন্ত শিশুকেন্দ্রিক বিভিন্ন প্রোগ্রাম বা সেবামূলক কার্যক্রম চালু করতে হবে। শিশু নির্যাতন হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। তবে সবার আগে সমাজটাকে শিশুবান্ধব করতে নতুন করে চিন্তা করাটা বেশি জরুরি।

শিশুদের রক্ষায় সমাজের সবার দায়িত্ববান হতে হবে বলে মনে করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, শিশু সুরক্ষায় ২০১৩ সালের যে আইনটি রয়েছে, সেটি যদি কার্যকরভাবে সব শিশুর জন্য উপযোগী সমাজ বা পরিবার ব্যবস্থা তৈরি করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে না পারি, তাহলে এই আইন অথবা প্রচলিত ব্যবস্থা থেকে কোনো লাভ নেই।

অভিভাবকদের সচেতন করা, রাষ্ট্রের যে শিশু আইন রয়েছে, সেটি আরও কার্যকর করা। শিশুদের নিরাপত্তায় বিদ্যমান আইনের পরিবর্তন দরকার। শিশুদের কীভাবে জীবনমুখী শিক্ষা দিতে হবে, কীভাবে জীবনদক্ষতা শেখাতে হবে, সেগুলো আমরা জানি না। রাষ্ট্রকে শিশু আইনের ব্যাপারে আরও কঠোর হতে হবে।

মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, প্রতিদিন সারাদেশে শিশুনির্যাতন ও মৃত্যুর সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। আমরা আগে জানতাম শিশুরা অপরিচিত লোকের কাছে নিরাপদ নয়। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেখছি ভিন্ন। এখন নিজ ঘরেই শিশুদের নির্যাতন ও হত্যার শিকার হতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের অবনতির কারণে তারা শিশুদের ওপর নির্যাতন বাড়িয়ে দিচ্ছে। আবার মায়েদের নিরাপত্তার কারণে অনেক সময় সন্তানকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটছে। এটি সামাজিক অবক্ষয়।

একইসঙ্গে লোভ আমাদের মধ্যে বেড়ে গেছে। অল্প সময়ে বড় হতে চাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। পরকীয়ার কারণও এর মধ্যে রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, পরকীয়ার সম্পর্কটি বাচ্চাটি দেখে ফেলছে, এজন্যও শিশুকে হত্যা করছে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, পরকীয় একটি ভয়ংকর প্রতারণা। দেশে পরকীয়ার হার আগের তুলনায় বেড়ে গেছে। পরিস্থিতি দিন দিন সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটছে। এ কারণেই কেউ কেউ নিজের সন্তানকে খুন করতেও দ্বিধাবোধ করছে না।

এমন ঘটনা প্রতিরোধে সরকারি-বেসরকারিভাবে সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের উন্নয়নে পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়াও কিছু কিছু পরিবার মেয়েদের বিয়ের ক্ষেত্রে বিত্তশালী কিংবা উচ্চ-বিলাসী ভালো চাকরিজীবী পাত্র খুঁজেন। এমন পাত্রদের অধিকাংশই বয়স্ক হয়ে থাকেন। যে কারণে অভিভাবকরা তুলনামূলক বেশি বয়সী পাত্রের সঙ্গে কম বয়সী মেয়ের বিয়ে দেন।

এক্ষেত্রে বয়সের তুলনামূলক বিষয়টি বিবেচনা করা হয় না, ভেবে দেখা হয় না যে- স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীর ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং’ কেমন হবে। শারীরিক ও মানসিকভাবে দাম্পত্য জীবনে তারা কতোটা সুখী হতে পারবে। পরকীয়া জড়িয়ে যাওয়া স্ত্রীদের কারো কারো স্বামী প্রবাসে থাকায়, দূরত্বের কারণে তাদের একটি অংশ পরপুরুষে আসক্ত হয়ে পড়ে।

এছাড়াও স্বামী তুলনামূলক বেশি বয়সী হলে, ওই স্বামীর সঙ্গে অল্প বয়সী স্ত্রীরা সংসার করলেও অন্য তরুণ বা যুবক বয়সী পুরুষের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে যায় নারীরা। তাই, এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে অভিভাবকদেরই।

এ বিষয়ে আমার দেশের সঙ্গে কথা হয় শিশু, কৈশোর ও পারিবারিক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদের।

তিনি বলেন, আমি বলব যে, মানুষের সামাজিক দক্ষতার অভাব রয়েছে। যেখানে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক নারী-পুরুষের পছন্দের সঙ্গী বেছে নেওয়ার লিগ্যাল পদ্ধতি রয়েছে, সেক্ষেত্রে তারা সামাজিক দক্ষতাকে উপেক্ষা করে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পরকীয়া চালিয়ে যাচ্ছে।

বিয়ে যেরকম সামাজিকভাবে বৈধ, তেমনিই ডিভোর্স বা তালাক সামাজিকভাবে বৈধ। তাহলে কেনো পরকীয়া জড়িয়ে যাচ্ছে মানুষ! পরকীয়া এড়াতে অবশ্যই সামাজিক দক্ষতার প্রয়োগ থাকতে হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে পরকীয়াকে নিরুৎসাহিত করতে বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে পারেন।