সন্তানের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে নবী-রাসুলদের দোয়া
ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে নবী-রাসুলদের দোয়া-
মানুষের জীবনযাত্রায় দোয়া এক অনন্য অবলম্বন, বিশেষ করে পিতা-মাতার দোয়া সন্তানের জন্য আল্লাহর নিকট সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য। বিশ্বের সম্পর্কগুলোর মধ্যে পিতা-মাতা ও সন্তানের সম্পর্ক সবচেয়ে নির্মল, স্বার্থহীন ও হূদয়াবদ্ধ। তাই পিতা-মাতার হূদয়ের গভীর থেকে উচ্চারিত দোয়ায় থাকে আন্তরিকতা, মমতা ও শুভকামনার মিশ্রণ। পিতা-মাতার দোয়া আল্লাহ তাআলার দরবারে অনিবার্যভাবে কবুল হয়। ইবরাহিম (আ.)-এর জীবনে সর্বোত্তমভাবে ফুটে উঠেছে দোয়ার মহত্ব ও প্রজন্ম নির্মাণে তার ভূমিকা। তিনি নির্জন মরুপ্রান্তরে স্ত্রী হাজেরা ও শিশুপুত্র ইসমাঈল (আ.)-কে রেখে আল্লাহর নির্দেশ মান্যকালে বহু হূদয়গ্রাহী দোয়া করেন। সেই দোয়াতেই লুকিয়ে ছিল ভবিষ্যৎ মক্কানগরীর নিরাপত্তা, সমৃদ্ধি এবং শেষ নবী মুহাম্মাদ (সা.)—এর আগমনের সুসংবাদ। কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা এ দোয়াগুলো উল্লেখ করে মানবজাতিকে শিক্ষা দিয়েছেন—প্রজন্মের কল্যাণ, ঈমান, নেক আমল ও নেতৃত্বের জন্য দোয়া করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দোয়া : সন্তানের মঙ্গলের জন্য পিতা-মাতার দোয়া আল্লাহর কাছে সব সময়ই গৃহীত হয়। কারণ পিতা-মাতা সন্তানের জন্য আন্তরিকতার সাথে প্রাণ খুলে উদার চিত্তে স্নেহ ও দয়া নিয়ে দোয়া করে থাকে। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, তিন ব্যক্তির দোয়া নিঃসন্দেহে কবুল হয়। (এক) পিতা-মাতার দোয়া, (দুই) মুসাফিরের দোয়া, (তিন) মজলুমের দোয়া। (আবু দাউদ, অধ্যায়: নামাজ, অনুচ্ছেদ : কারো অনুপস্থিতিতে তার জন্য দোয়া, হাদিস : ১৫৩৬; তিরমিজি, হাদিস : ১৯০৫, ইবনু মাজাহ, হাদিস : ৩৮৬২)
প্রজন্মের জন্য ইবরাহিম (আ.)-এর দোয়া : ইবরাহিম (আ.) স্ত্রী হাজেরা ও শিশু ইসমাঈল (আ.)—কে আল্লাহর নির্দেশে এক জনমানবহীন প্রান্তরে রেখে যান। সেখানেই মহান আল্লাহ তার ঘর বাইতুল্লাহ নির্মাণ ও মক্কানগরী প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন। ইবরাহিম (আ.) তাদের রেখে সিরিয়ার দিকে রওয়ানা হওয়ার সময় বেশ কিছু দোয়া করেছিলেন। তিনি এই জনমানবহীন প্রান্তরকে শান্তিপূর্ণ শহর বানিয়ে দেওয়া, জীবন ধারণের প্রয়োজনীয় জিনিস-পত্র সহজলভ্য করা এবং এ শহরের অধিবাসীদের উপজীবিকা হিসেবে ফলমূল দান করার দোয়াসহ আরো দোয়া করেন। মহান আল্লাহ ইবরাহিম (আ.)-এর এসব দোয়া কবুল করেন। এই শহরকে নিরাপত্তার কেন্দ্র এবং অনাবাদ ভূমি হওয়া সত্ত্বেও সারা পৃথিবীর ফলমূল এবং সব রকমের শস্যাদি এমন পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়, যা দেখে মানুষ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায়। আল্লাহ বলেন, ‘স্মরণ কর, যখন ইবরাহিম বলেছিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! এ (মক্কা)-কে নিরাপদ শহর করো, আর এর অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করবে, তাদের রিজিক হিসেবে ফলমূল দান করো।’ তিনি বললেন, ‘যে কেউ অবিশ্বাস করবে, তাকেও আমি কিছুকালের জন্য জীবনোপভোগ করতে দেবো, অতঃপর তাকে দোজখের শাস্তি ভোগ করতে বাধ্য করবো। আর তা কত নিকৃষ্ট পরিণাম (বাসস্থান)। (সুরা বাকারা, আয়াত : ১২৬)
ইবরাহিম (আ.)-এর দোয়ার ফসল রাসুলুল্লাহ (সা.) : ইবরাহিম (আ.) তাঁর প্রজন্মে এক মহা মানবের আগমনের জন্য দোয়া করেছিলেন। তাঁর দোয়ার ফসল হলেন—শেষ নবী মুহাম্মাদ (সা.)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমি আমার সূচনা বলে দিচ্ছি, আমার পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর দোয়া, ঈসা (আ.)-এর সুসংবাদ এবং আমার মা স্বপ্নে দেখেছিলেন যে, তার থেকে একটি আলো বের হলো, যে আলোতে সিরিয়ার প্রাসাদ আলোকিত হয়েছে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৬২)