শুক্রবার ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, অগ্রাহায়ণ ২১ ১৪৩২, ১৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

ব্রেকিং

ইসরাইলি হামলায় গাজায় দুই শিশুসহ নিহত ৫ ইউরোপের ‘আত্মবিশ্বাস’ ফেরানোর আহ্বান জার্মান প্রেসিডেন্টের অস্ট্রেলিয়ার কাছে সাবমেরিন বিক্রি নিশ্চিত পেন্টাগনের খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ এসএসএফ নিরাপত্তা পাবেন না: রিজওয়ানা খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিতে ঢাকায় আসছেন জোবাইদা রহমান নির্বাচনের ‘নতুন মানদণ্ড’ তৈরি করতে হবে: এসপিদের প্রধান উপদেষ্টা নতুন বাংলাদেশ গড়ার ‘বিল্ডিং কোড’ গণভোট: প্রধান উপদেষ্টা আরও ৩৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইজিপিকে অপসারণে আইনি নোটিশ খালেদা জিয়াকে নেওয়া হবে লন্ডনে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি তেলের দাম বাড়ানো ব্যবসায়ীদের ‘কারণ দর্শাও’ নোটিস দিয়ে বৈঠকে ডেকেছে সরকার তফসিলের আগে ১০ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসির সাক্ষাৎ লিভ টু আপিল খারিজ, অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ বৈধ খালেদা জিয়ার জন্য শুক্রবার দোয়া ও প্রার্থনার আহ্বান সরকারের গাজায় ইসরায়েলি হামলায় দুই শিশুসহ ৭ ফিলিস্তিনি নিহত আমরা সোমালি অভিবাসীদের চাই না`: ট্রাম্প

স্বাস্থ্য

জটিল অস্ত্রোপচারের ১৫ মাস পর কেমন আছে রাবেয়া-রোকেয়া?

 প্রকাশিত: ২৩:৩১, ১১ নভেম্বর ২০২০

জটিল অস্ত্রোপচারের ১৫ মাস পর কেমন আছে রাবেয়া-রোকেয়া?

ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ২০১৯ সালের ১ থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ৩৩ ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে তিন বছর বয়সী জমজ রাবেয়া ও রোকেয়ার খুলি ও মস্তিষ্ক আলাদা করা হয়। অস্ত্রোপচারের ১৫ মাস পরও সুস্থ জীবনযাপন করছে তারা।
সে সময় হাঙ্গেরি থেকে আসা ৪ জন চিকিৎসকের উপস্থিতিতে দেশের সামরিক ও অসামরিক চিকিৎসকদের সমন্বয়ে শিশু রাবেয়া ও রোকেয়ার অস্ত্রোপচার কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

জটিল এ অপারেশনের মধ্য দিয়ে হাঙ্গেরি থেকে নিয়ে আসা একটি কোমল টিস্যু দিয়ে মাথার ক্ষতস্থান ঢেকে দেয়া হয়। এ ধরনের অস্ত্রোপচার বিশ্বের বিরল ঘটনা। উপ-মহাদেশে এ রকম অস্ত্রোপচার এটিই প্রথম। তবে অস্ত্রোপচার শেষে ডাক্তাররা চিন্তিত ছিলেন তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, গত ৬ দিন ধরে শিশু রাবেয়া সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে। রাবেয়া ভালো আছে এবং প্রায় স্বাভাবিক কথা-বার্তা বলছে। এমনকি খেলাধুলাও করতে চাচ্ছে সে। তার হাসির ঝিলিক ছড়িয়ে যাচ্ছে সব পর্যায়ের চিকিৎসক থেকে শুরু করে পরিবার পর্যন্ত।

তবে অস্ত্রোপচারের পর থেকেই বেশ কয়েকবার ভেন্টিলেটরের সাপোর্টে ছিল রোকেয়া। তার এখনো স্নায়ুগত কিছু দুর্বলতা আছে। যার কারণে সে এখনও পরিপূর্ণ কথা বলতে বা হাঁটতে পারছে না। তবে নিজে-নিজে খাবার গ্রহণ করতে পারছে এবং কথা বুঝতে পারছে। 

রাবেয়া-রোকেয়ার বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, অপারেশনের পর দ্রুত সুস্থ ও স্বাভাবিক হয়ে উঠতে শুরু করে রাবেয়া। কিন্তু এখন কিছুটা শঙ্কা ও উদ্বেগ রয়েছে রোকেয়াকে নিয়ে। ডাক্তাররা যেভাবে সেবা-যত্ন করছেন, আশা করি রোকেয়াও সুস্থ হয়ে যাবে।


২০১৬ সালের ১৬ জুলাই জোড়া মাথা নিয়ে জন্ম নেয় পাবনার চাটমোহরের আটলংকা গ্রামের রফিকুল ইসলাম ও তাসলিমা খাতুন দম্পতির সন্তান রাবেয়া-রোকেয়া। এ দুই শিশু যে বিরল রোগে ভুগছিল তা প্রতি পাঁচ থেকে ছয় মিলিয়ন শিশুর মধ্যে একজনের হয়।

বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় খবর প্রকাশের পর জোড়া মাথার শিশু দুটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আসে। প্রধানমন্ত্রী একেবারেই আপনজনের মতো শিশু দুটির সার্বিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার তদারকি শুরু করেন। তাদের চিকিৎসার প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব অর্পণ করেন।

প্রথম ধাপে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে প্রায় তিন বছর বিভিন্নভাবে প্রথম পর্যায়ের চিকিৎসা চলে। সেই ধারাবাহিকতায় গত বছরের জানুয়ারিতে তাদের নেয়া হয় হাঙ্গেরিতে। সেখানে পর্যায়ক্রমে ৪৮টি ছোট-বড় প্রস্তুতিমূলক সার্জারি হয়। এরপর ২০১৯ সালের ২২ জুলাই তাদের ঢাকা সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। সেনাবাহিনী প্রধানের নির্দেশনায় সামরিক চিকিৎসা সার্ভিস মহাপরিদফতরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও পরিকল্পনায় ঢাকা সিএমএইচ-এ হাঙ্গেরি থেকে আসা চিকিৎসক দল এবং বাংলাদেশের সামরিক ও অসামরিক চিকিৎসকসহ মোট ৩৪ জন ১ থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ৩৩ ঘণ্টা এই বিযুক্তকরণ অপারেশন সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করে। এর নাম দেয়া হয় ‘অপারেশন ফ্রিডম’।

রাবেয়া-রোকেয়ার অস্ত্রোপচার পুরো বিশ্বে ১৭ নম্বর ঘটনা। তাদের মতো জোড়া মাথা যমজ শিশুর অস্ত্রোপচার এর আগে বিশ্বে ১৬টি হয়েছে। এ রকম জোড়া মাথার শিশুর বিযুক্তকরণ কার্যক্রমে সফলতা অর্জনের উদাহরণ অত্যন্ত কম। প্রথম সাফল্য এসেছিল ১২ নম্বর অস্ত্রোপচার থেকে।

রাবেয়া-রোকেয়ার সফল অপারেশন বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার একটি মাইলফলক। এ অপারেশন পরিচালনার মাধ্যমে সামরিক বাহিনীর চিকিৎসা ব্যবস্থা তথা রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি জাতির অবিচল আস্থা অর্জন ও আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন হয়েছে। বাংলাদেশ-হাঙ্গেরির মধ্যে সৌহার্দ্যতা বৃদ্ধি পয়েছে, যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতার পরিচায়ক।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল