শুক্রবার ২১ নভেম্বর ২০২৫, অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩২, ৩০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

ব্রেকিং

গাজায় ৪০ হাজার শিশুকে টিকা দিবে ডব্লিউএইচও গাজায় ইসরাইলের হামলা `বিপজ্জনক উসকানি` : হামাস নেপাল উত্তেজনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী সুশীলার বার্তা রাশিয়া ও টোগো পরস্পরের ভূখণ্ডে দূতাবাস খুলবে রুশ হামলার একদিন পরেও নিখোঁজ ২২ : জেলেনস্কি হাসিনাকে ফেরাতে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার কথা ভাবছে সরকার বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় আরেক ধাপ এগোল এ বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু সাড়ে তিনশ ছাড়াল চট্টগ্রামে এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ছিটকে গাড়ি নিচে পড়ে পথচারীর মৃত্যু আগামী ৩-৪ কর্মদিবসের মধ্যে গণভোট আইন অর্থ আত্মসাৎ মামলা তদন্তে সাকিবসহ ১৫ জনকে দুদকে তলব সিরিয়ায় কুর্দি বাহিনীর গুলিতে ২ সেনা নিহত হাসিনাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধে ভারত ‘সাড়া দেবে না’, বিশ্বাস ছেলের ১৩ লাখ রোহিঙ্গার ভার আর বহন করা সম্ভব নয়: জাতিসংঘে বাংলাদেশ তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায় ছিল কলঙ্কিত: আপিল বিভাগ গণতান্ত্রিক মহাসড়কে চলা শুরু: অ্যাটর্নি জেনারেল সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল, কার্যকর চতুর্দশ সংসদ নির্বাচনে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারে সতর্ক থাকুন: ডিএমপি কমিশনার যুদ্ধবিরতির মধ্যেও ইসরায়েলি হামলায় ২৫ ফিলিস্তিনি নিহত ওয়েস্টার্ন মেরিনের বানানো ৩টি জাহাজ পেল আমিরাতের মারওয়ান

ইসলাম

মাহে রমযানের পর আমাদের জীবনে আসুক আল্লাহর ভয়

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

 আপডেট: ২১:৪০, ১৩ মে ২০২২

মাহে রমযানের পর আমাদের জীবনে আসুক আল্লাহর ভয়

[২০২১ সালের আলকাউসার থেকে সংগৃহিত]

এবারের মাহে রমযান বিভিন্ন দিক থেকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ এবং তজ্জনিত নানা ব্যবস্থা ছিল চোখে পড়ার মতো। আমাদের দেশেও সর্বত্র এখনো একটি ভীতির আবহ বিরাজ করছে। এক আশ্চর্য মৃত্যুভীতিতে যেন কুঁকড়ে গেছে গোটা বিশ্ব। কিন্তু এই ভয়-ভীতির পরিবেশেও মাহে রমযানের জুমা-তারাবীতে মসজিদে মসজিদে বিপুল মুসল্লীর সমাগম ছিল। নিঃসন্দেহে এই দেশের জন্য এটা অত্যন্ত ইতিবাচক ব্যাপার। আল্লাহ তাআলা এই দেশ ও দেশের নাগরিকদের রক্ষা করুন। তিনিই একমাত্র রক্ষাকর্তা।

রমযানের শুরুর দিক থেকেই আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের অবস্থা ছিল খুবই ভয়াবহ। ওখানে মিনিটে মিনিটে মানুষ মারা গেছে। অক্সিজেনের তীব্র সংকটে বহু মানুষকে ধুঁকে ধুঁকে মারা যেতে শোনা গেছে। ভারতের এই ভয়াবহ সংকটের মুহূর্তে মুসলিম দেশগুলোকে দেখা গেছে সাহায্য ও সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিতে। এমনকি ভারতের ‘চির বৈরী’ রাষ্ট্র পাকিস্তানও এই সংকটে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।

মুসলিম-রাষ্ট্রগুলোর এই মানবিক সহমর্মিতার অবস্থান শুধু এই এক ঘটনায় নয়, মানবতা ও সহমর্মিতার অসংখ্য দৃষ্টান্তে মুসলিম জাতির ইতিহাস উজ্জ্বল। এইসকল উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত যখন জাতি হিসেবে আমাদের উদ্দীপ্ত করে একইসাথে তা স্মরণ করিয়ে দেয় মুসলিম জাতির সাথে ঘটে যাওয়া চরম অমানবিক আচরণগুলোও। আরাকানের মজলুম মুসলিমদের ব্যাপারে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের যে ন্যক্কারজনক বিমুখতা ও অমানবিকতা তা মানবতার ইতিহাসের এক কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। একই কথা কাশ্মীরের মুসলমান, চীনের উইঘুর মুসলিম ও পৃথিবীর নানা প্রান্তের মজলুম মুসলমানদের ক্ষেত্রেও সত্য।

বিশ্বব্যাপী দেশে দেশে নিগৃহীত মুসলিম জাতি যখন ধর্ম-বর্ণ বিচার না করে কোনো দেশের দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে সহমর্মিতার পয়গাম নিয়ে দাঁড়ায় তখন তা এই জাতির উদার উন্নত মানবিক চেতনা-বিশ্বাসেরই পরিচয় বহন করে।

করোনা আতঙ্কের মধ্যেও মুসলিম জনগণের মসজিদে যাওয়ার যে আকুতি, কারো কারো কাছে তা যেমনই মনে হোক, এটাই আসলে মানুষের স্বাভাবিকতা। মানুষের অন্তরের গহীনে প্রচ্ছন্ন আছে আল্লাহমুখিতার গভীর  চেতনা । সে কারণেই দেখা যায় চরম বিপদের মুহূর্তে মানুষ এক আল্লাহকেই ডাকে। দেশে দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণজনিত মৃত্যুর হার যখন ভয়াবহ পর্যায়ে গেছে তখন এক আল্লাহকে ডাকার অসংখ্য দৃষ্টান্ত সামনে এসেছে। ভারতের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতেও দেখা গেছে এরকমের বেশ কিছু দৃষ্টান্ত।

আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদের বিভিন্ন জায়গায় এ সত্যের প্রতি মানুষকে সচেতন করেছেন। একমাত্র আল্লাহ তাআলাই পারেন মানুষকে বিপদমুক্ত করতে। তাঁরই ইচ্ছায় বিপদ আসে, তাঁরই ইচ্ছায় তা বিদায় নেয়। মানুষের  কর্তব্য, এইসকল বিপদ থেকে শিক্ষা নেওয়া এবং ভুল স্বীকার করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসা! কিন্তু বঞ্চিত মানুষেরা এই করণীয় সম্পর্কে উদাসীন থাকে। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলার ইরশাদ-

وَ لَوْ رَحِمْنٰهُمْ وَ كَشَفْنَا مَا بِهِمْ مِّنْ ضُرٍّ لَّلَجُّوْا فِیْ طُغْیَانِهِمْ یَعْمَهُوْنَ، وَ لَقَدْ اَخَذْنٰهُمْ بِالْعَذَابِ فَمَا اسْتَكَانُوْا لِرَبِّهِمْ وَ مَا یَتَضَرَّعُوْنَ،  حَتّٰۤی اِذَا فَتَحْنَا عَلَیْهِمْ بَابًا ذَا عَذَابٍ شَدِیْدٍ اِذَا هُمْ فِیْهِ مُبْلِسُوْنَ.

আমি যদি তাদের প্রতি দয়া করি এবং তারা যে কষ্টে আছে তা দূর করে দেই তবে তারা তাদের অবাধ্যতায় গোঁ ধরে উদ্ভ্রান্ত ঘুরে বেড়াবে। আমি তো তাদেরকে শাস্তিতে ধৃত করেছিলাম। তখনও তারা নিজ প্রতিপালকের সামনে নত হয়নি । তারা অনুনয়-বিনয় করে না। অবশেষে যখন আমি তাদের জন্য কঠিন শাস্তির দুয়ার খুলে দেব তখন সহসা তারা তাতে হতাশ হয়ে পড়বে। -সূরা মুমিনূন (২৩) : ৭৫-৭৭

এই পৃথিবী আল্লাহর, এখানে যা কিছু ঘটে তাঁর আদেশেই ঘটে। তাই এইসকল ঘটনা তাঁরই কুদরত ও শক্তিমত্তার এবং অসীম জ্ঞান ও প্রজ্ঞারই একেকটি নিদর্শন।

প্রতিটি ঘটনা মানুষের জন্য বড় গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। যে বার্তা মানুষ ও বিশ্বজগতের সৃষ্টির তাৎপর্যের সাথে  সামঞ্জস্যপূর্ণ। আর তা হচ্ছে আখিরাতের জীবন সম্পর্কে সতর্কতা ও হুঁশিয়ারি। দুনিয়ার ক্ষুদ্র ও ক্ষণস্থায়ী জীবনের আরো ক্ষুদ্র বিপদাপদ দ্বারা আল্লাহ তাআলা সতর্ক করে থাকেন আখিরাতের ভয়াবহ ও চিরস্থায়ী বিপদ সম্পর্কে, দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট আখিরাতের দুঃখ-কষ্টকে কিছুটা হলেও উপলব্ধি করার উপায়। চোখের সামনে অন্যের মৃত্যু জীবিতের পক্ষে নিজ মৃত্যুকে স্মরণ করার উপকরণ। কাজেই এইসব বিপদাপদের বার্তা হচ্ছে ঔদ্ধত্য ও উদাসীনতা ত্যাগ করে আল্লাহর সামনে বিনীত হওয়া। এটিই বুদ্ধিমানের পরিচয়। চূড়ান্ত সময় এসে পড়ার আগেই যে সতর্ক হতে পারে, নিজেকে ঠিকঠাক করে নিতে পারে সেই তো বুদ্ধিমান।

অন্যথায় সেই ভয়াবহ সংকট যখন এসে যাবে, আখিরাতের চিরস্থায়ী জীবন যখন শুরু হয়ে যাবে, তখন আল্লাহ তাআলার চূড়ান্ত আযাব থেকে আত্মরক্ষার আর কোনো উপায় থাকবে না। কোথাও কোনো আশার আলো দেখা যাবে না। চারদিকে শুধু হতাশা আর হতাশাই বিরাজ করবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের হেফাযত করুন।

মাহে রমযানে করোনা-আকারে বিশ্বব্যাপী বিশেষত আমাদের পাশের দেশের যে ভয়াবহ অবস্থা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি তা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা যদি আল্লাহমুখিতার পথ অবলম্বন করতে পারি, সব ধরনের ঔদ্ধত্য ও হঠকারিতা ছেড়ে আল্লাহর সামনে নিজেকে অবনত করতে পারি তাহলে চারপাশের এই ভয়াবহ বিপদও আমাদের জন্য ইতিবাচক হয়ে উঠতে পারে।

আমাদের রমযান-পরবর্তী জীবন তাকওয়ার আলোয় আলোকিত হোক- এই প্রত্যাশা।