উমায়ের ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) সবচেয়ে অল্প বয়সে শহীদ সাহাবি
উমায়ের বিন আবি ওয়াক্কাস (রা.) ইসলামের ইতিহাসে প্রথম কিশোর শহীদ এবং নবীজি (সা.)-এর সাহাবিদের ভেতর সবচেয়ে কম বয়সে শাহাদাতবরণকারী। তিনি মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং বীরত্ব ও সাহসিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে শহীদ হন। উমায়ের বিন আবি ওয়াক্কাস (রা.) মাত্র ১৬ বছর বয়সে শহীদ হন। কিশোর বয়সে তাঁর এই অসীম বীরত্ব, সাহসিকতা ও শাহাদতবরণ উম্মতের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা ও অনুসরণীয় হয়ে আছে।
কিশোর সাহাবি উমায়ের (রা.) ছিলেন নবীজি (সা.)-এর মাতৃকূল বনু জাহরার সন্তান এবং বিখ্যাত মুসলিম সেনাপতি সাআদ বিন আবি ওয়াক্কাস (রা.)-এর সহোদর ভাই। তিনি সর্বাগ্রে ইসলাম গ্রহণকারী সাহাবিদের অন্যতম। ভাই সাআদ বিন আবি ওয়াক্কাস (রা.) ইসলাম গ্রহণের কিছুদিনের মধ্যেই তিনি আবু বকর (রা.)-এর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি মক্কাবাসীর নির্যাতনের শিকার হন। তবুও ইসলামের ওপর অটুট থাকেন। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি উমায়ের (রা.)-এর ভালোবাসা ছিল অগাধ। মহানবী (সা.) হিজরতের নির্দেশ দিলে ভাইয়ের সঙ্গে তিনিও মদিনায় হিজরত করেন। মাতৃভূমি ছেড়ে মদিনায় হিজরত করার ক্ষেত্রেও তাঁরা ছিলেন অগ্রগামী। হিজরতের পর মহানবী (সা.) তাঁকে আমর ইবনে মুয়াজ (রা.)-এর ভ্রাতৃবন্ধনে আবদ্ধ করেন। আমর ইবনে মুয়াজ (রা.) ছিলেন বিখ্যাত আনসারি সাহাবি সাআদ ইবনে মুয়াজ (রা.)-এর ভাই।
বীর সাহাবি উমায়ের (রা.) শৈশব থেকে আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করার এবং শহীদ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করতেন। বদর যুদ্ধের সময় নবীজি (সা.) যখন সাহাবিদের নির্বাচন করছিলেন তখন তিনিও তাদের কাতারে দাঁড়িয়ে যান। তখন তাঁর বয়স ১৬ বছরও অতিক্রম করেনি। বয়সে ছোট হওয়ায় নবীজি (সা.) তাঁকে নাকচ করে দিতে পারেন—এই ভয়ে তিনি অন্যদের ভিড়ে আত্মগোপন করে ছিলেন। সাআদ বিন আবি ওয়াক্কাস (রা.) তাঁকে দেখে বলেন, হে ভাই, তুমি আত্মগোপন করে আছো কেন? উমায়ের (রা.) উত্তর দিলেন, আমি ভয় পাচ্ছি যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে দেখে ফেলবেন এবং আমাকে ছোট মনে করে যুদ্ধের অনুমতি দেবেন না। আমি যুদ্ধে অংশ নিতে চাই। আল্লাহ হয়ত আমাকে শাহাদাত দান করবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) উমায়ের (রা.)-কে দেখে ফেললেন এবং বয়স অল্প হওয়ায় ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। তখন উমায়ের (রা.) কাঁদতে আরম্ভ করলেন। ফলে নবীজি (সা.) তাঁকে যুদ্ধে অংশ নেওয়ার অনুমতি দিলেন।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর উমায়ের (রা.) বীরবিক্রমে মুশরিকদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। সাআদ বিন আবি ওয়াক্কাস (রা.) ভাইয়ের নিরাপত্তার কথা ভেবে পাশে পাশে থাকার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু উমায়ের (রা.) ছিলেন অকুতোভয়। তিনি সর্বাত্মক যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং এমন বীরত্ব প্রদর্শন করেন যা অনেক সাহসী যোদ্ধাও দেখাতে পারেনি। যুদ্ধ যুদ্ধ করতে এই কিশোর সাহাবি শহীদ হয়ে যান। সাহাবিদের ভেতর তিনিই সবচেয়ে অল্প বয়সে শাহাদাতবরণ করেন। কুরাইশ সরদার আমর ইবনে আবদুল ওয়াদ আমেরি তাঁকে শহীদ করে। খন্দকের যুদ্ধে আলী (রা.) এই অভিশপ্তকে হত্যা করেন। বয়সে কিশোর হলেও উমায়ের (রা.) ইসলাম গ্রহণ, হিজরত, যুদ্ধে অংশগ্রহণ ও শাহাদাত বরণে ছিলেন অগ্রগামী। তাঁর এই আত্মত্যাগ ও সাহসিকতা ইতিহাসের এক সোনালি অধ্যায় হয়ে আছে।
তথ্যঋণ: আল মাগাজি : ১/২১; তাবাকাতুল কাবির, হাদিস : ৩২৭৫ ও আল জমহুরিয়্যাত ডটকম