বুধবার ২৬ নভেম্বর ২০২৫, অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩২, ০৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

ইসলাম

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের জোর করে বোরকা পরাবে না: শফিকুর রহমান

 প্রকাশিত: ১০:৫৪, ২৬ নভেম্বর ২০২৫

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের জোর করে বোরকা পরাবে না: শফিকুর রহমান

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের জোর করে বোরকা পরতে বাধ্য করা হবে—এমন অভিযোগকে ‘ভয় দেখানোর কৌশল’ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ক্ষমতায় গেলে কাউকে কোনো পোশাক পরতে বাধ্য করা হবে না। নারী–পুরুষ সবার নিরাপত্তা, সম্মান ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাই হবে তাদের অঙ্গীকার।

মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর মিরপুর রূপসী প্রো-অ্যাকটিভ ভিলেজ রোডে আয়োজিত এক নাগরিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ঢাকার মহানগর উত্তর পেশাজীবী পরিষদ।

নারীর অধিকার প্রসঙ্গে জামায়াত আমির বলেন, যোগ্যতা ও প্রয়োজন অনুযায়ী নারীরা দেশগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন। বর্তমানে নারীরা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন—জামায়াত ক্ষমতায় গেলে তাদের মর্যাদা, নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করা হবে।

নারীদের বোরকা নিয়ে ‘আতঙ্ক’ ছড়ানো হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “মায়েদের ভয় দেখানো হয়—জামায়াত ক্ষমতায় এলে সবাইকে কালো চাদর পরাবে, শুধু চোখ খোলা রাখবে। ইসলামের বিধানে চোখ খোলা রাখাও আছে, মুখ খোলা রাখাও আছে। কেউ যদি চোখ বা মুখ না ঢাকেন—জামায়াতে ইসলামী কাউকে জোর করবে না। কল্যাণ রাষ্ট্রের সৌন্দর্য উপলব্ধি করে নারীরাই শালীন পোশাক গ্রহণ করবেন, ইনশা আল্লাহ।”

সুষ্ঠু নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জনগণ যেন বিবেকের প্রতিফলন ঘটিয়ে ভোট দেন। সুষ্ঠু ভোটে যে দল ক্ষমতায় আসবে, জামায়াত তাদের অভিনন্দন জানাবে। আর জনগণ যদি জামায়াতকে নির্বাচিত করে—তাহলে সবাইকে সঙ্গে নিয়েই দেশ পুনর্গঠন করা হবে।

ক্ষমতায় এলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। পাশাপাশি দুর্নীতিবিরোধী অভিযান, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, ভেঙে পড়া অর্থনীতি পুনর্গঠন এবং কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক সংস্কার বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতিও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “দুর্নীতি—তোমাকে লাল কার্ড, সন্ত্রাস—তোমাকে কালো কার্ড।”

রাজনৈতিক নিপীড়নের প্রসঙ্গে তিনি জানান, গত সাড়ে ১৫ বছর ধরে তাকে বাড়ি বাড়ি লুকিয়ে থাকতে হয়েছে। তার ভাষায়, “আমরা ফাঁসির রশি গলায় নিয়েছি, কিন্তু দেশ থেকে পালাইনি।” তিনি অভিযোগ করেন, যারা একসময় ‘পালাই না’ বলেছিলেন, এখন তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না।

নির্বাচন নিয়ে সতর্ক করে তিনি বলেন, পুরোনো ধাঁচের ভোটে দেশের কল্যাণ আসে না। ‘নির্বাচনের মতো নির্বাচন’ ছাড়া জনগণের মুক্তি সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। রাজনৈতিক দলগুলোকে কাদা–ছোড়াছুড়ি পরিহার করে নীতিনিষ্ঠ রাজনীতির আহ্বান জানান।

১৯৭০ সালের নির্বাচন স্মরণ করে তিনি বলেন, “তখন আমরাই বলেছিলাম—ভোট দিন নৌকায়, রাতে দরজা খুলে ঘুমাতে পারবেন।” কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি আজও পূরণ হয়নি। সৎ নেতৃত্বের অভাবেই দেশকে বাগানের মতো সুন্দর করা যায়নি বলে তিনি আক্ষেপ করেন। পাশাপাশি শোষক–শোষিত বিভেদ দূর করার প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন।

জামায়াত আমির আরও বলেন, “আমরা যতবার সংস্কার করতে চেয়েছি, কেউ না কেউ আমাদের পেছনে টেনে রেখেছে—এটা চাই না, ওটা চাই না, শুধু নির্বাচন। নির্বাচন তো আগেও হয়েছে, কিন্তু দেশের মুক্তি আসেনি। নির্বাচন প্রয়োজন, তবে নির্বাচনের মতো নির্বাচন প্রয়োজন। পুরোনো স্টাইলে ভোট দিয়ে দেশের কল্যাণ সম্ভব নয়।”

যুবকদের ‘ফ্যাসিবাদের’ বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর প্রশংসা করে তিনি জানান, তাদের কাঙ্ক্ষিত সংস্কার এখনো বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। ভবিষ্যতে তাদের মেধা, দক্ষতা ও প্রতিভাকে দেশগঠনে কাজে লাগানোর অঙ্গীকারও ব্যক্ত করেন তিনি।