শনিবার ১৮ অক্টোবর ২০২৫, কার্তিক ৩ ১৪৩২, ২৫ রবিউস সানি ১৪৪৭

রাজনীতি

রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সড়কে নয়, সংসদে হতে হবে: ফখরুল

 আপডেট: ১৮:৩০, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সড়কে নয়, সংসদে হতে হবে: ফখরুল

স্বাধীনতার পাঁচ দশকেও দেশের রাজনীতি জাতীয় সংসদকেন্দ্রিক হয়নি বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেছেন, “আওয়ামী লীগ ১৫ বছরে যে গার্বেজ তৈরি করে গেছে, যে জঞ্জাল সৃষ্টি করে গেছে, সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে; সেগুলোকে এক বছরের মধ্যে সব ঠিক করে ফেলা এটা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়।

“রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্ব নিয়ে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে একটা অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে পার্লামেন্ট আসবে, সেই পার্লামেন্টারি ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য সেদিকে আমাদেরকে নজর দিতে হবে। সমস্ত কর্মকাণ্ডকে পার্লামেন্টকেন্দ্রিক করতে হবে।

“এটা না করলে পার্লামেন্টারি ডেমোক্রেসি ফাংশন করবে না; এ কথাগুলো আমাদের বুঝতে হবে। পৃথিবীর যেসব দেশে পার্লামেন্ট ডেমোক্রেসি সফল হয়েছে, সবগুলোতে কিন্তু পার্লামেন্ট হচ্ছে রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু; সেখানে (সংসদ) করতে হবে।”

শনিবার দুপুরে ঢাকার গ্রিন রোডের পানি ভবনে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছিলেন ফখরুল।

তিনি বলেন, “রাস্তা থেকে উঠে চলে আসতে হবে পার্লামেন্টে। আর কতদিন রাস্তায় থাকবেন? ৫০ বছর তো আমরা রাস্তায় চলছি।

“এগুলোকে ঠিক করে এই জাতীয় সনদের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে যদি আমরা একটা কালচারে পরিণত করতে পারি, সেই চেষ্টা আমাদের করতে হবে।”

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, “এই নির্বাচনে সবাই যেন অংশগ্রহণ করে; রাজনৈতিক দলগুলোকে আহ্বান জানাব—আসুন, আমরা সবাই যেভাবে ছোটখাট আমাদের ভিন্নতা, যে দূরত্ব আছে— সেগুলোকে দূর করে যেভাবে আমরা আপনার সনদ স্বাক্ষর করতে পেরেছি; আসুন, আগামী নির্বাচনে আমরা সেভাবে আমাদের দূরত্বকে দূর করে আমরা আমাদের নির্বাচনটাকে একটা সত্যিকার অর্থেই একটা অর্থপূর্ণ নির্বাচনে পরিণত করি।

“অর্থাৎ, একটা অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক, সকলের কাছে নির্বাচন হোক এবং সেই নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে যারা নির্বাচিত হবেন, তারা আমাদের পার্লামেন্টকে সত্যিকার অর্থে প্রাণবন্ত করে গড়ে তুলবেন, অর্থবহ করবেন এবং সেই পার্লামেন্ট হবে আমাদের রাজনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু; এভাবে আমরা যেন সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারি।

“গণতন্ত্রকে যদি আমরা সত্যিকার অর্থে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হই; তাহলে আমার ধারণা, আমার বিশ্বাস, সেখানে সকল শ্রেণি, শ্রমিক শ্রেণির দাবি-দাওয়া সেখানে পূরণ হবে, স্বীকৃত হবে।”

পানি ভবনের মাল্টিপারপাস হলে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুকে পুনরায় সভাপতি এবং হুমায়ুন কবিরকে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশনার আনোয়ার হোসাইন।

‘জুলাই সনদ গণতন্ত্রের জন্য অনন্য’

মির্জা ফখরুল বলেন, “গতকাল একটা ঐতিহাসিক বলতে গেলে পলিটিকাল ইভেন্ট হয়েছে। আমরা বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ঐতিহাসিক জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছি এবং এটা সত্যি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অনন্য ঘটনা যে- রাষ্ট্র কাঠামো পরিবর্তন, মূলনীতির সংশোধন এবং একই সঙ্গে আমাদের রাজনীতিকে আরো স্বচ্ছ করা, জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া, গণতন্ত্রকে সত্যিকার অর্থেই যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে; সেগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আরো বেশি উন্নত করা, গণতন্ত্রকে গণতন্ত্রের মতো চলতে দেওয়া এবং গণতান্ত্রিক কৃষ্টি অর্থাৎ ডেমোক্রেটিক কালচার পুরোটা এই ব্যাপারগুলো সমাজের মধ্যে সবগুলো নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। প্রায় দীর্ঘ সাত-আট মাস কাজ করে তারা এটা নিয়ে এসেছে।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “একটা আনফরচুনেট ইনসিডেন্ট ঘটেছে যে, কালকে ছেলেরা একটা গ্রুপ তারা এখানে (সংসদ ভবনের অনুষ্ঠানের সামনে) এসে বসে যায়। তারপরে একটা আনফরচুনেট ঘটনা ঘটে। পুলিশ এবং ছাত্রদের মধ্যে একটা আপনার বলা যেতে পারে যে একটা ভায়লেন্সের ঘটনা ঘটেছে।

“এই সময়ে এই ধরনের ঘটনাগুলো গণতন্ত্রকে সাহায্য করবে না। আমার মনে হয় যে, সকলের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিত; কারণ এটা কি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার? এই সরকার এখন পর্যন্ত যতগুলো কাজ করছে, তারা ভালো কাজ করার চেষ্টা করেছে। আমরা যে যতই বলি, এক বছরের মধ্যে সমস্ত জঞ্জালগুলো শেষ করে ফেলা সম্ভব নয়।”

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন শ্রমিক দলের প্রধান সমন্বয়কারী শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমদ, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নাসিম, পানি উন্নয়ন বোর্ড জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের মোস্তফা খান, আইয়ুব আলী, আবু সালেহ মো. তোফায়েল চৌধুরী, ফরিদ উদ্দিন খান, মাহমুদুল করীম, মাহবুবুল হক রিপন, বিদ্যুৎ শ্রমিক ইউনিয়নের আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শ্রমিক দলের সুমন ভূঁইয়া, উত্তরের কামরুজ্জামান।