সোমবার ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, পৌষ ৮ ১৪৩২, ০২ রজব ১৪৪৭

ব্রেকিং

আন্তর্জাতিক

থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সংঘাত থামাতে আসিয়ান বৈঠক

 প্রকাশিত: ১৩:১৮, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫

থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সংঘাত থামাতে আসিয়ান বৈঠক

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে চলমান প্রাণঘাতী সীমান্ত সংঘাত নিরসনে জরুরি বৈঠকে বসছেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। 

আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নানা কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও লড়াই থামছে না। এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের লক্ষ্য নিয়ে সোমবার মালয়েশিয়ায় এই সংকটকালীন বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

কুয়ালালামপুর থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।

সরকারি তথ্যমতে, চলতি মাসে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে নতুন করে শুরু হওয়া এই লড়াইয়ে থাইল্যান্ডে অন্তত ২২ জন এবং কম্বোডিয়ায় ১৯ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া সীমান্তের উভয় পাশের ৯ লাখেরও বেশি মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ান-এর বর্তমান সভাপতি মালয়েশিয়া। কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠেয় এই আলোচনার মাধ্যমে জোটের সদস্য দেশ দু’টির মধ্যে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে বলে আশা করছে দেশটি।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম গত সপ্তাহে বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব হলো প্রকৃত তথ্য তুলে ধরা। 

তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো তাদেরকে শান্তি বজায় রাখার গুরুত্ব বোঝানো।’ বৈঠক নিয়ে তিনি ‘সতর্ক আশাবাদী’।

এর আগে গত জুলাইয়ে পাঁচ দিনের লড়াই শেষে আমেরিকা, চীন ও মালয়েশিয়ার মধ্যস্থতায় একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি হয়েছিল। সাম্প্রতিক সহিংসতায় সেই চুক্তি ভেঙে পড়েছে।

গত অক্টোবরে কুয়ালালামপুরে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে দেশ দু’টি রাজি হওয়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন বাণিজ্য চুক্তির আশ্বাস দিয়ে একটি যৌথ ঘোষণাকে সমর্থন জানিয়েছিলেন।

চলমান এই সংঘাতের জন্য দুই দেশই একে অপরকে দায়ী করছে। আত্মরক্ষার খাতিরে লড়াই করার পাশাপাশি তারা বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলেছে।

রোববার থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া উভয় দেশই জানিয়েছে যে সোমবারের এই বৈঠক উত্তেজনা প্রশমনে সহায়তা করতে পারে। দুই দেশের সরকারই তাদের শীর্ষ কূটনীতিকদের এই বৈঠকে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

থাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারাতী নলিতা আন্দামো একে ‘উভয় পক্ষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। 

অন্যদিকে কম্বোডিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই আলোচনার লক্ষ্য হলো ‘শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সুপ্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক’ পুনরুদ্ধার করা।

কম্বোডিয়া বলেছে, ‘যেকোনো মতভেদ ও বিরোধ শান্তিপূর্ণ উপায়ে এবং সংলাপ ও কূটনীতির মাধ্যমে সমাধানে তাদের অনড় অবস্থানের কথা তারা পুনর্ব্যক্ত করবে।’

অন্যদিকে মারাতী থাইল্যান্ডের আগের শর্তগুলো আবারও মনে করিয়ে দেন। যার মধ্যে রয়েছে— কম্বোডিয়াকে আগে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করতে হবে এবং সীমান্তে মাইন অপসারণে সহযোগিতা করতে হবে। 

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘কুয়ালালামপুরের আলোচনায় এই শর্তগুলোই আমাদের অবস্থান নির্ধারণ করবে।’

তবে বৈঠকের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত হবে কি না, তার কোনো গ্যারান্টি দেয়নি থাই সরকার। এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, ‘মাঠ পর্যায়ে থাই সামরিক বাহিনীর পর্যালোচনার ওপর ভিত্তি করেই কেবল যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে পারে।’

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও গত সপ্তাহে আশা প্রকাশ করেছিলেন যে মঙ্গলবারের মধ্যে একটি নতুন যুদ্ধবিরতি সম্ভব হবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও এই মাসের শুরুতে দাবি করেছিলেন যে, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া লড়াই বন্ধ করতে রাজি হয়েছে।

কিন্তু ব্যাংকক সেই দাবি অস্বীকার করে জানায় যে, তেমন কোনো যুদ্ধবিরতি হয়নি। গত দুই সপ্তাহ ধরে লড়াই অব্যাহত রয়েছে এবং তা সীমান্তের প্রায় সব কটি প্রদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

উপনিবেশ আমলের নির্ধারিত ৮০০ কিলোমিটার সীমান্ত রেখা এবং সীমান্তে অবস্থিত বেশ কিছু প্রাচীন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের মালিকানা নিয়ে মূলত এই ভূখণ্ডগত বিরোধ চলে আসছে।