‘৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ’: বসুন্ধরা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের বিরুদ্ধে ন্যাশনাল ব্যাংকের ‘৬০০ কোটি টাকা আত্মসাতের’ অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
বুধবার দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য দিয়েছেন।
দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে সংস্থার সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলাটি করেছেন।
এ মামলায় আহমেদ আকবর সোবহানের দুই ছেলেসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।
তার দুই ছেলে হলেন-বসুন্ধরা ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদাত সোবহান এবং একই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক সাফিয়াত সোবহান।
দুদকের তালিকা অনুযায়ী অন্য আসামিরা হলেন ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালক মনোয়ারা শিকদার, পারভীন হক শিকদার, মোয়াজ্জেম হোসেন, রিক হক শিকদার, রন হক শিকদার, মো. আনোয়ার হোসেন ও একে এম এনামুল হক শামীম, ব্যাংকটির ক্রেডিট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ডিভিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হাসিনা সুলতানা; সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ম্যানেজার আরিফ মো. শহিদুল হক; সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ক্রেডিট ইন-চার্জ আনিসুল হক; সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সুলতানা পারভিন; সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সুবল চন্দ্র রায় এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ কামরুল হাসান মিঠু।
তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪২০/৪০৯/১০৯ ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় মামলটি করা হয়েছে।
মামলায় বলা হয়েছে, আসামিরা ব্যাংকের প্রচলিত বিধি-বিধান ‘লঙ্ঘন করে এবং ঋণের শর্ত পূরণ না করেই’ বসুন্ধরা ইম্পোর্ট এক্সপোর্ট লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ৬০০ কোটি টাকা ‘ফান্ডেড’ ও ৭৫০ কোটি টাকা ‘নন-ফান্ডেড’—মোট ১ হাজার ৩৫০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন ও বিতরণ করেন।
দুদক বলছে, পরবর্তীতে বিতরণ করা ফান্ডেড ঋণের ৬০০ কোটি টাকা পরিশোধ না করে পরস্পর যোগসাজশে সে টাকা আত্মসাৎ করেন আসামিরা।
‘আত্মসাৎ করা টাকার অবৈধ উৎস, অবস্থান এবং মালিকানা গোপন’ করার জন্য বসুন্ধরা গ্রুপের স্বার্থসংশ্লিষ্ট সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের বসুন্ধরা শাখা থেকে ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট প্রাইভেট লিমিটিডের কর্মীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়।
এছাড়া এই অর্থের আরেকটি অংশ রংধনু বিল্ডার্স নামে প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের হিসাবে স্থানান্তর করে ঋণ সমন্বয় ও নগদ উত্তোলন করে অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তর করেন।
মামলায় ঘটনাকাল বলা হয়েছে, ২০১৮ হতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত
গণঅভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী বড় বড় ব্যবসায়ীদের দুর্নীতি-অনিয়মের বিষয়েও অনুসন্ধানে নামে রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থা।
তার ধারাবাহিকতায় বসুন্ধরা চেয়ারম্যান এবং তার স্ত্রী-সন্তানদের বিরুদ্ধে ‘সরকারের রাজস্ব ফাঁকি, ভূমি জবরদখল, ঋণের অর্থ আত্মসাৎ, অর্থ স্থানান্তর ও হস্তান্তর, অর্থ পাচারের’ অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক।
এর অংশ হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের দুদকে তলবও করা হয়েছিল।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) বসুন্ধরাসহ পাঁচ বড় কোম্পানির মালিকদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। তাদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের লেনদেনের তথ্য চেয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠায়।
এরপর অক্টোবরে আহমেদ আকবার সোবহান ও তার চার ছেলেসহ আটজনের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেয় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
ওই মাসেই দুদকের আবেদনে আহমেদ আকবর সোবহানসহ পরিবারের আট সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত।