ভারত হাসিনাকে ফেরত দিতে রাজি না হলে ‘করার কিছু নেই’: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
জুলাই অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরানোর বিষয়টি ভারতের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল বলে তুলে ধরেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
দিল্লি অবস্থান করা আওয়ামী লীগ সভাপতির দেশে ফেরার বিষয়টি তার নিজের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করার যে বক্তব্য ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর দিয়েছেন, সেই প্রেক্ষাপটে বুধবার এক প্রশ্নে ঢাকার প্রধান কূটনীতিকের তরফে এই বক্তব্য আসে।
জয়শঙ্করের সেই বক্তব্যের বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান কী, এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, “আমরা কী করতে পারি, বলেন তো?”
এক্ষেত্রে ঢাকার কী করণীয়, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “করণীয় তেমন কিছু আসলে নেই। কারণ ভারতকে রাজি হতে হবে অথবা চাইতে হবে তাকে ফেরত পাঠাতে।”
‘ভারত রাজি না হলে আর করার কিছু নেই?’, এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “রাজি না হলে আসলেতো করার কিছু নাই। আমরা রাজি করানোর চেষ্টা করতে পারি।”
ভারতে রাজি করানোর চেষ্টার বিষয়ে আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা রাজি করানোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে পারি, এইটুকুই। এর চেয়ে বেশি কিছু করতে পারি না।”
রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ অগাস্ট ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা এবং এখনো সেখানেই আছেন তিনি।
জুলাই আন্দোলনে মানবতাবিরোধী অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১৭ নভেম্বর শেখ হাসিনা ও তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। কামালও ভারতে অবস্থান করছেন।
সেদিনই এক বিবৃতিতে দুইজনকে ফেরত দিতে ভারতের প্রতি আবারও আহ্বান জানিয়েছে সরকার। এরপর ২৩ নভেম্বর ভারতকে কূটনৈতিকপত্র পাঠায় সরকার। তার তিনদিন পর দিল্লি চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে। তবে শেখ হাসিনা ও কামালকে ফেরত দেওয়া হবে কি না সে বিষয়ে ভারত এখনো কিছু জানায়নি।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার পর প্লট দুর্নীতির মামলায়ও শেখ হাসিনাকে কারাদণ্ড হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতির ভারতে থাকার বিষয়টি তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত মন্তব্য করে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর বলেছেন, তিনি যে ‘পরিস্থিতিতে’ ভারতে আসতে বাধ্য হয়েছেন তাতে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সেটির প্রভাব থাকবে।
গত শনিবার এনডিটিভি লিখেছে, হিন্দুস্তান টাইমস লিডারশিপ সামিটে এনডিটিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান সম্পাদক রাহুল কানওয়ালের সঙ্গে আলাপচারিতায় জয়শঙ্করের কাছে জানতে চাওয়া হয়, শেখ হাসিনা ‘যতদিন চান ততদিনই ভারতে থাকতে পারবেন কিনা’?
জবাবে জয়শঙ্কর বলেন, “এটা একটা ভিন্ন বিষয়, তাই না? তিনি একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে এখানে এসেছেন। তাকে ঘিরে যা ঘটছে তাতে সেই পরিস্থিতির স্পষ্ট প্রভাব রয়েছে বলে আমি মনে করি। কিন্তু তারপরও, এটা এমন এক বিষয়ে যে বিষয়ে সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে হবে,” বলেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
নয়া দিল্লি ও ঢাকার মধ্যে সম্পর্কের প্রসঙ্গ টেনে প্রতিবেশী দেশে বিশ্বাসযোগ্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ভারতের অবস্থানের ওপর জোর দেন তিনি।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনাকে ফেরতের বিষয়টিতে দেশটির সরকারের ভূমিকার কথাও বলেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
ভারতের বাইরে তৃতীয় কোনো দেশে শেখ হাসিনা যাওয়ার পরিকল্পনার বিষয়েও কোনো কোনো সংবাদমাধ্যমে খবর হয়েছে।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, “এটাও তো আমার কিছু করার নেই, বাংলাদেশেও খুব বেশি কিছু করার নেই। আমরা তো চাই যে, উনি ফেরত আসুক।”
কূটনৈতিক চ্যানেলে বাংলাদেশকে কেউ জানিয়েছে কি-না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “ওই রকম কিছু জানি না। তবে শুনেছি, আপনারা যে রকম শুনেছেন।”