বৃহস্পতিবার ০৬ নভেম্বর ২০২৫, কার্তিক ২২ ১৪৩২, ১৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

ব্রেকিং

তালবাহানা না করে দ্রুত নির্বাচনী শিডিউল ঘোষণা করুন: ফখরুল আমজনতার দলের নিবন্ধন অবশ্যই প্রাপ্য: রিজভী ডেঙ্গুতে ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১০৩৪ পাখি খাদ্যের ঘোষণা দিয়ে পাকিস্তান থেকে পপি বীজ এনে ধরা মার্জারে যাওয়া ৫ ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন স্থগিত জেমকন গ্রুপের পরিচালক আনিসের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা, ফ্ল্যাট-জমি জব্দ গুমের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড প্রয়োজনে ‘আঙুল বাঁকা করার’ হুমকি জামায়াতের বাংলাদেশে ‘আপাতত’ আসা হচ্ছে না জাকির নায়েকের হাসিনা, জয় ও পুতুলের দুর্নীতির মামলায় ৭৯ সাক্ষীর জবানবন্দি নেয়া শেষ লতিফ সিদ্দিকী ও মঞ্জুরুল আলমের জামিন হাই কোর্টে দুদকের মামলায় সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুরের বিচার শুরু ময়মনসিংহে হত‍্যা মামলায় ৩ জনের ফাঁসি

জাতীয়

বগুড়ার কটকটির স্বাদ ছড়িয়েছে সারাবিশ্বে

 প্রকাশিত: ২০:১৭, ৬ নভেম্বর ২০২৫

বগুড়ার কটকটির স্বাদ ছড়িয়েছে সারাবিশ্বে

বগুড়া, ৬ নভেম্বর ২০২৫ (বাসস): খাওয়ার সময় কটকট শব্দ হওয়ায় খাবারটির নাম কটকটি বলে ধারণা স্থানীয়দের। বগুড়ার শত বছরের ঐতিহ্যবাহী সুমিষ্ট খাবার কটকটি। অনেকে চেনেন মহাস্থানের কটকটি বলে। সুস্বাদু এই খাবারের সুনাম দেশের গণ্ডি ছাপিয়ে এখন ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে। শুকনো মিষ্টি এই খাবার আজ বগুড়ার গর্ব। 

বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার উত্তরে ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়ের অবস্থান। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের জন্য বিশ্বব্যাপী মহাস্থানগড়ের পরিচিতি আছে। তবে মহাস্থানগড়ের সুখ্যাতি রয়েছে সুস্বাদু কটকটির জন্য। শত বছরেরও বেশি সময় ধরে এই খাবারটি মহাস্থানগড়ে তৈরি ও বিক্রি হয়ে আসছে।

উনিশ শতকের গোড়ার দিকে স্থানীয়দের হাতে এই মিষ্টি খাবারের যাত্রা শুরু হয়।  চালের বা গমের আটার সঙ্গে গুড় মিশিয়ে তৈরি হতো এই শুকনো মজাদার খাবার। শুরুর দিকে কটকটি বেশ শক্ত ছিল এবং খেতে কটকট শব্দ হতো। তবে সময়ের সঙ্গে এখন নরম ও সুস্বাদু কটকটি তৈরি হচ্ছে।

স্থানীয় প্রবীণদের মুখে শোনা যায়, প্রায় দেড়শত বর্ষ আগে বগুড়া সদর উপজেলার গোকুল ইউনিয়নের পলাশবাড়ী উত্তরপাড়ার জয়নাল আলী মণ্ডল, ভোলা মণ্ডল আর গেদা মণ্ডল প্রথম কটকটি বানানো শুরু করেন। গ্রামের মেলা কিংবা বিয়ের আসরে তখন পরিবেশন করা হতো এই নতুন ধরনের খাবার। মচমচে স্বাদ আর সহজলভ্য উপকরণের কারণে দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে জনপ্রিয়তা।

মহাস্থানগড় এলাকায় প্রায় শতাধিক কটকটির দোকান রয়েছে। দোকানগুলোতে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে শত শত কেজি কটকটি। দামও ভিন্ন ভিন্ন। ডালডায় ভাজা কটকটি কেজিপ্রতি ১৮০ টাকা, ঘি স্প্রে করা ২২০ টাকা, আর পোলার চালের কটকটি ২৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।

প্রতি বছর বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবারে অর্থ্যাৎ হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (রহঃ) এর বিজয় দিবসে ১ থেকে ২ হাজার মণ বিভিন্ন প্রকার কটকটি ব্যবসায়ীরা বিক্রি করে থাকেন।

এছাড়াও দর্শনার্থীরা মহাস্থানগড়ে ঘুরে ফেরার পথে তবারক হিসেবে কটকটি নিয়ে যান। দেশ ছাড়িয়ে আজ তা পৌঁছে গেছে বিশ্বের শতাধিক দেশে।

কটকটি ব্যবসায়ীরা জানান, বগুড়ার কটকটি এখন শুধু একটি খাবার নয়, এটি বগুড়ার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও গর্বের প্রতীক। শুধু ঐতিহ্য নয়, এই খাবারকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর প্রায় ৪০ কোটি টাকার লেনদেন হয় মহাস্থানগড় এলাকায়।

কটকটি ব্যবসায়ী শাহ আলম জানান, আমাদের পরিবার ছয় পুরুষ ধরে এই কটকটি ব্যবসা করে আসছে। এখন আমাদের দেখে আরও অনেকে এই পেশায় যুক্ত হয়েছে। মহাস্থান মাজারকে ঘিরে সারা বছরই এই ব্যবসা চলে।

কটকটি তৈরির কারিগর মজনু জানান, তারা ছোটবেলা থেকেই এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। কটকটি তৈরি করেই তারা জীবিকা নির্বাহ করেন।

নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তরের বগুড়ার কর্মকর্তা মো: রাসেল জানিয়েছেন, মহাস্থানগড় মাজার এলাকায় কটকটি প্রস্তুত ও বিক্রয়ের উপর নিয়মিত তদারকি করা হয়। যেন কোনো ভেজাল রঙ বা স্যাকারিন ব্যবহার করা না হয়। দোকানি ও কারিগরদের স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে কটকটি প্রস্তুতের পরামর্শ দেওয়া হয়।