বৃহস্পতিবার ০৬ নভেম্বর ২০২৫, কার্তিক ২২ ১৪৩২, ১৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

রাজনীতি

প্রয়োজনে ‘আঙুল বাঁকা করার’ হুমকি জামায়াতের

 প্রকাশিত: ১৬:২৭, ৬ নভেম্বর ২০২৫

প্রয়োজনে ‘আঙুল বাঁকা করার’ হুমকি জামায়াতের

সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের দাবি আদায়ে প্রয়োজনে ‘আঙ্গুল বাঁকা’ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের।

তিনি বলেছেন, “আমরা আপনাদের চালাকি বুঝি। আপনাদের চালাকির ভিত্তিতেই দাবি আদায়ের পন্থাও আমরা আবিষ্কার করব। আমরা এখানো নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলনে আছি।

“সোজা আঙুলে যদি ঘি না উঠে তাহলে আঙুল বাঁকা করবো। কিন্তু ঘি আমাদের লাগবেই। সুতরাং যা বোঝাতে চাই, বুঝে নিন। নো হাঙ্কি-পাঙ্কি, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট লাগবেই।"

বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১২টায় ঢাকার পল্টন মোড়ে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর উপস্থিতিতে তিনি এ কথা বলেন। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি, নভেম্বরে গণভোটসহ পাঁচ দফা দাবি আদায়ে প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দেওয়ার লক্ষ্যে এদিন সেখানে সমবেত হয় আট দলের নেতকর্মীরা।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, “আমরা আশা করেছিলাম, জুলাই-অগাস্টের রক্তই হবে শেষ রক্তদান। এসময়ের শাহাদাতই হবে শেষ শাহাদাত। আমরা আশা করেছিলাম, জুলাই বিপ্লবের পরে দাবি আদায়ে আর রাজপথে নেমে আসতে হবে না।

“কিন্তু আমরা আশাহত হয়েছি। অল্প সময়ের ব্যবধানেই আমাদের রাজপথে আসতে হয়েছে।

আমরা রাজপথে এসেছি, প্রয়োজনে রক্ত দেব, প্রয়োজনে জীবন দেব; কিন্তু আমরা জুলাই বিপ্লবকে ব্যর্থ হতে দেব না।

“ষড়যন্ত্রকারীদের পরাজয় হবে। জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে হুবহু সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হবে ইনশাআল্লাহ।”

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণভোট আগামী সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে হবে নাকি আগেই হবে— এ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতসহ কয়েকটি দলের মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সোমবার উপদেষ্টা পরিষদ জরুরি বৈঠক করে দলগুলোর কাছ থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে ‘ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা’ চেয়েছে।

জামায়াত নেতা তাহের বলেন, “সময়ক্ষেপণ, এই চালাকি আপনাদের বিপদে ফেলবে। গণভোট জাতীয় নির্বাচনের আগেই হতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও গণভোট আয়োজনে কোনো বাধা নাই। সুতরাং সময় আছে। আরও ১৫ দিন সময়ক্ষেপণ করবেন? করেন, গণভোটের সময় থাকবে। সুতরাং যা বোঝাতে চাই, বুঝে নিন।”

সংসদ নির্বাচন ও গণভোট আলাদা দিনে হলে বিপুল অর্থের অপচয় হবে বলে মত দিয়েছেন কেউ কেউ।

এর বিরোধিতা করে সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, “শুধুই বলেন, গণভোট আয়োজনে নাকি অনেক টাকা খরচা হবে। একদিনে যে পরিমাণ চাঁদাবাজি হয় তা দিয়ে একটা গণভোট আয়োজন করা যায়। প্রত্যেকদিন একটা করে গণভোট আয়োজন করলেও সমস্যা হবে না।

“তাই সরকারকে বলব, আর যারা চাঁদাবাজিতে জড়িত, তাদের বলব—এসব বন্ধ করেন, তাহলে গণভোট আয়োজনে টাকার অভাব হবে না।”

জামায়াতে ইসলামীর এ নায়েবে আমির বলেন, “আমরা শান্তি চাই, সমাধান চাই, আমরা জাতীয় নির্বাচন চাই। আমরা জুলাই সনদ বাস্তবায়ন চাই।

“যদি বুঝতে কষ্ট হয়, তাহলে আসেন, বসি, আলোচনা করি। সরকারও তো আলোচনা করতে বলেছে।”

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তাহের বলেন, “আলোচনার চাপটা তো সরকারকেই নিতে হবে। আলোচনার জন্য একটা রেফারির ভূমিকার দরকার আছে। সেই ভূমিকাটা সরকারকে নিতে হবে।

“জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যে আলোচনার জন্য দুই সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। আপনারাও কমিটি ঘোষণা করুন। সময়ক্ষেপণের পলিসি বাদ দিয়ে আলোচনার পলিসি ঠিক করুন।”

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাননি দাবি করে জামায়াত নেতা তাহের বলেন, “চেষ্টা করেছি, ফোনে পাই নাই। আজকের কর্মসূচির পর আমি আবারো চেষ্টা করব। উনাকে আমরা ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করব, বিএনপিও যেন আলোচনার পরিবেশ তৈরি করেন।

“আর সময়ক্ষেপণ নয়, আর হিংসে নয়, রাজনৈতিক বিদ্বেষ নয়, অন্যের বিরুদ্ধে লড়াই নয়। জাতি মনে করে, শুধু জুলাই সনদ নয়, সব ঠিক করা সম্ভব রাজনৈতিক সমঝোতায়।

“জাতির কাছে ওয়াদা করতে হবে, শুধু জুলাই সনদ নয়, জাতীয় নির্বাচন কীভাবে হবে। আমার দল কোথাও ভোটকেন্দ্র দখল করবে না, যদি করে তাহলে সেই আসনের ভোট বাতিল হবে—

সকল দলকে একথা বলতে হবে।”

তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টাকে বলতে হবে, যেখানে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, সেরকম যদি একাধিক আসন হয়; তাহলে নির্বাচনকে ভণ্ডুল করে দেব, নতুন নির্বাচন হবে; এই কথা জাতিকে বলতে হবে।

“কারণ ৫৪ বছরে সঠিক কোনো নির্বাচন আমরা পাই নাই। জাতি আর কোনো প্রহসনের নির্বাচনকে আর মেনে নেবে না। সুতরাং নির্বাচন যদি সুষ্ঠু না হয়, তাহলে দেশ আবার অন্ধকারে যাবে, শেখ হাসিনার যুগে চলে যাবে।”

হুঁশিয়ার উচ্চারণ করে তিনি বলেন, “আজকে স্মারকলিপি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে দেবার পরও যদি দাবি মানা না হয়, অবস্থার উন্নতি না হয়; তাহলে আগামী ১১ তারিখ ‘চলো চলো ঢাকা চলো’ কর্মসূচি।

“আগামী ১১ তারিখ ঢাকা মহানগরী হবে জনতার নগরী, দাবি আদায়ের ১১ তারিখ। লড়াই হবে। লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই।”

প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট আয়োজন করে জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি দিন৷ যদি আপনি সেটা না করেন, তাহলে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য আপনি যে সম্মান পেয়েছেন, সেটা করতে না পারলে আপনার মর্যাদাকে আপনিই নষ্ট করবেন৷

“আপনি (মুহাম্মদ ইউনূস) সম্মান রক্ষার জন্য রাজনৈতিক দলকে এক টেবিলে বসার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। এখানে আপনাকে রেফারির দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমরা বৃহত্তর ঐক্যের মধ্য দিয়ে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন সুষ্ঠু করব।“

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী এদিন পল্টন মোড়ে মিছিল নিয়ে এসে সমবেত হয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি।

গোলাম পরওয়ার বলেন, “আমরা ৮টি দল আজ যমুনা অভিমুখে অংশগ্রহণ করব। এখন পল্টনে আমাদের অন্যান্য দলের সঙ্গে জড়ো হব। বিভিন্ন রাস্তা থেকে মিছিল আসছে। শৃঙ্খলার সঙ্গে মিছিল নিয়ে পল্টন থেকে যমুনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করব ইনশাআল্লাহ।

“আজকে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সচ্ছ করার প্রয়োজনে, বাংলাদেশের মানুষের গণ আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী, অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই নতুন বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুরক্ষা নিশ্চিত করার প্রয়োজনে, বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামোকে পরিবর্তন করে, একটি নতুন রাষ্ট্র কাঠামো গঠন করার জন্য, ফ্যাসিবাদ বিরুদ্ধে আন্দোলনে আমরা যারা রাজপথে ছিলাম; তারা আজ একত্রিত হয়ে এ স্মারকলিপি প্রদান করছি৷”