শাহজালালে আগুন: নিজেদের দায় এড়ালেন বেবিচক চেয়ারম্যান

তিন দিন আগে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের আমদানি কমপ্লেক্সে যে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে, তার কোনো দায় নিলেন না বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক।
তার ভাষ্য, ভবনটি বেবিচকের হলেও এটির কার্যক্রম পরিচালনা করে বিমান বাংলাদেশ, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
আগুনের জন্য এ তিন পক্ষকে বিশেষ করে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব থাকা বিমানকে দোষারোপ করলেও কাউকে সরাসরি দায় দিতে চাননি বেবিচক চেয়ারম্যান। বলছেন, তদন্তের আগে এমন কিছু বলা ঠিক নয়।
মঙ্গলবার বেবিচক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ অবস্থান তুলে ধরেন মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক।
তিনি বলেন, “কার্গো কমপ্লেক্সের আগুন লাগার ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই সেখানে ছুটে গিয়েছিল বিমানবন্দরের নিজস্ব ফায়ার ইউনিটের অত্যাধুনিক রোজেনবাওয়ার প্যান্থার সিরিজের গাড়িগুলো।
“কিন্তু গুদামের সামনের খোলা জায়গায় অনেকটা জুড়ে অনেক মালপত্র পড়ে থাকায় ফায়ার ইউনিটের গাড়িগুলো ঘটনাস্থলের কাছাকাছি যেতে পারেনি। আর কার্গো কমপ্লেক্সের যেই কুরিয়ার শাখা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল, সেখানকার অবকাঠামোগুলো ছিল খুব খোপ খোপ এবং অনেক শক্ত।”
বেবিচক চেয়ারম্যানের ভাষ্য অনুযায়ী, কুরিয়ারের খোপ ভেঙে প্রাথমিকভাবে আগুন নেভাতে ব্যর্থ হয় বিমানবন্দরের নিজস্ব ফায়ার ইউনিট। পরবর্তীতে আগুনে ছড়িয়ে পড়ে পুরো কমপ্লেক্স।
এ মালামাল সরানোর দায়িত্ব কার ছিল, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “সেখানে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্বে আছে বিমান। আর মালামালগুলো ক্লিয়ার করার দায়িত্ব সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের।
“সেখানে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ রয়েছে। এগুলো ম্যানেজ করার দায়িত্ব তাদের।”
এয়ার ভাইস মার্শাল মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক বলেন, “২১ দিনের মধ্যে কার্গো কমপ্লেক্স থেকে মালামাল সরিয়ে নেয়ার বিধান থাকলেও এখানে বছরের পর বছর মালামাল জমে থাকে বলে এখন দেখা যাচ্ছে।
“জমে থাকা মালামালের কারণে কিন্তু অগ্নি নির্বাপণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়েছে।”
তবে তদন্তের আগে কাউকে দায় দিতে চান না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তদন্ত যেহেতু চলছে, এটা শেষ হওয়ার আগে কিছু বলা ঠিক না। আমি কারো দিকে আঙ্গুল তুলতে চাই না।”
নিয়ন্ত্রক ও পরিচালনারী সংস্থা হিসেবে এই অগ্নিকাণ্ডের দায় বেবিচক নিচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে সংস্থাটির চেয়ারম্যান মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক বলেন, “সেখানে শুধু অবকাঠামোটা আমাদের। এর ভেতরে কীভাবে কী হবে তার সবকিছু কার্যক্রম পরিচালনা করছে তারাই।
“আমরা সেখানে ১৪০টি ফায়ার এক্সটিংগুইশার রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করেছি। আমরা আইকাও (আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা) রুল ফলো করে নিয়মিত অগ্নি নির্বাপণ মহড়া করে আসছি। আইকাও প্রটোকল অনুযায়ী সবকিছুই এখানে রয়েছে।”
গত শনিবার দুপুরে শাহজালাল বিমানবন্দরের আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সে লাগা আগুন ওইদিন রাত ৯টায় নিয়ন্ত্রণে আসে। পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয় ২৭ ঘণ্টা পর রোববার বিকালে। ওই অগ্নিকাণ্ডে ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে থাকতে পারে বলে জানিয়েছে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোশিয়েশন অব বাংলাদেশ-ইএবি।
বেবিচক চেয়ারম্যান বলছেন, আগুন লেগেছে ২টা ১৫ মিনিটে কুরিয়ার শাখা থেকে। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা ঘটনার খবর জানতে পেরেছে ২টা ৩০ মিনিটে। কেন এই সময়ের পার্থক্য জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, “আমাকে চেক করতে হবে।”
এ অগ্নিকাণ্ডের ফলে এ বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক মান কমবে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে এয়ার ভাইস মার্শাল মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক বলেন, “আমার মনে হয় না কমবে। দেখার বিষয় ওই ঘটনার পর আমরা কী কী পদক্ষেপ নিয়েছি।”