মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ১৭ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

স্পেশাল

ঈদের জামাতের জন্যে প্রস্তুত দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ ময়দান

 আপডেট: ১৪:৩০, ৭ এপ্রিল ২০২৪

ঈদের জামাতের জন্যে প্রস্তুত দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ ময়দান

দিনাজপুর জেলার গোর-এ শহীদ ঈদগাহ মাঠ ঈদের জামাতের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।

সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে মিনারে সংস্কার কাজ, রং করা ধোয়া মুছা, মাঠে মাটি ভোরাটসহ আনুসাঙ্গিক কাজ প্রায় শেষ হয়ে গেছে । এ উপলক্ষে নেয়া হয়েছে জেলা এবং পৌরসভা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ। এছাড়াও ঈদের নামাজে আসা মুসল্লিদের জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে  ৩ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।  

দিনাজপুর পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মোঃ তৈয়ব আলী দুলাল জানান, এরই মধ্যে মাঠের বিভিন্ন জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যবেক্ষণের টাওয়ার।

মাঠের আরেকটি অংশে ঘের দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন যানবাহনের গ্যারেজ। এছাড়াও পাশের স্টেশন ক্লাব, সার্কিট হাউজ, শিশু একাডেমি ও জেলা গণগ্রন্থাগারেও যানবাহন রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সূত্রটি জানায়, ঈদগাহ মাঠে  প্রবেশের জন্য মাঠের ৪ পাশে তৈরি করা হচ্ছে ১৯টি তরণ। শহরের প্রবেশ মুখগুলোতে এবং মিনারে যাওয়ার রাস্তাতে তৈরি হচ্ছে তোরণ।
মুসুল্লিদের জন্য মাঠে ওযুখানা, ভ্রাম্যমাণ টয়লেটের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিদ্যুতের পাশাপাশি থাকবে জেনারেটর। লাগানো হবে শতাধিক মাইক,  নিশ্চিদ্র নিরাপত্তায় র‌্যাবের জন্য  তৈরি করা হয়েছে   ওয়াচ টাওয়ার, সাংবাদিকদের জন্য বিশেষ মাচাং নির্মাণসহ সব ধরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে । ঈদের দিন অন্যান্য উপজেলা থেকে বাস সার্ভিস ছাড়াও যেসব উপজেলার সঙ্গে শহরের ট্রেন যোগাযোগ রয়েছে সেসব উপজেলা থেকে মুসুল্লিদের জন্য ষ্টেশনগুলো থেকে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি বলেন,  দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ ঈদগা  মাঠ প্রতিষ্ঠা  তার একটি ঐতিহাসিক স্বপ্ন ছিল। এখন এটি একটি সর্ববৃহৎ ঈদগা মাঠ হিসেবে পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটা দিনাজপুর বাসীর জন্য একটি বড় প্রাপ্তি বলে তিনি মনে করেন।  

তিনি বলেন, বিভিন্ন স্থান থেকে  বড় বড় ঈদগাহ মাঠের চিত্র নিয়ে এসে এ মাঠের নির্মাণ  পরিকল্পনা করা হয়।  সর্বপ্রথম মাঠের পশ্চিম  প্রান্তে গত ২০১৫ সালে এ ঈদগাহ মাঠের  নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রায় দেড় বছর পর এটি নামাজের জন্য পুরো প্রস্তুত করা হয়। এ ঈদগাহে রয়েছে ৫২টি গম্বুজের দুই ধারে ৬০ ফুট করে দু’টি মিনার, এর মধ্যের দুটি মিনার ৫০ ফুট করে এবং প্রধান মিনারের উচ্চতা ৫৫ ফুট। এসব মিনার আর গম্বুজের প্রস্থ হলো ৫১৬ ফুট। দেশের বড় ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ ময়দানের পশ্চিম দিকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এ ঈদগাহ মিনারটি। প্রত্যেকটি গম্বুজে দেয়া হয়েছে বৈদ্যুতিক বাতি সংযোগ। মিনার দুটির উচ্চতা ৫০ ফুট, যে মেহরাবে খতিব বয়ান করবেন, সেটির উচ্চতা ৫০ ফুট। ৫২টি গম্বুজ ২০ ফুট উচ্চতায় স্থাপন করা হয়েছে। গেট দুটির উচ্চতা ৩০ ফুট নির্মাণে  নান্দনিক স্থাপনা দৃষ্টি আকর্ষণ  করেছে ।

দিনাজপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইমদাদ সরকার জানান , প্রতি বছর দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হতো কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায়। এখন দিনাজপুরেও ৫২ গম্বুজের ঈদগাহ মাঠে সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। দিনাজপুর সদর আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম সর্বপ্রথম এ বড় ঈদ জামাতের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তার আন্তরিক তত্ত্বাবধানেই তৈরি হয়েছে এ ঈদগাহ  মিনার। দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের নামাজের ইমামতি করবেন দিনাজপুর সদর  জেনারেল হাসপাতাল জামে মসজিদের খতিব মাওলানা শামসুল হক কাসেমী। ঈদ-উল-ফিতরের জামাত সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হবে বলে জেলা প্রশাসনের  পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এছাড়াও যদি বৈরী আবহাওয়া হয় তাহলে বড় মাঠের পাশে মসজিদসহ আশপাশের এলাকার মসজিদ গুলোতে একযোগে নামাজ আদায় করা হবে।

দিনাজপুর জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ জানান, জেলা প্রশাসন, পৌরসভা, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পাশাপাশি জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিমের সার্বক্ষণিক তত্বাবধানে গত ২০ দিন ধরে মিনারের সংস্কার ও মাঠের পরিচর্যার কাজ চলছে। জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম ও জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, দিনাজপুর পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন। প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছ। এখন ছোটখাটো ত্রুটিগুলো দেখা হচ্ছে ।

দিনাজপুর পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ জানান, পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর  পক্ষ থেকে  গোর-এ শহীদ বড় ময়দানে ঈদের জামাতকে ঘিরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা  নেয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা  ব্যবস্থা মোতায়েন থাকবে । ঈদগাহের চার পাশে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে মুসল্লিদের তল্লাশির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ঈদগাহ প্রাঙ্গণে সক্রিয় থাকবেন সাদা পোশাকে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।

এছাড়া মাঠের নিরাপত্তার জন্য নির্মিত হয়েছে চারটি বড় পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। ট্রাফিক ব্যবস্থা থাকবে শহর জুড়ে। যাতে করে দূর দূরান্ত থেকে আসা যানবাহন গুলো শহরে প্রবেশ করতে ও বের হতে কোন সমস্যা না হয়। সবমিলিয়ে শান্তিপূর্ণভাবেই ঈদগা জামাতের নামাজ আদায়ের সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

মন্তব্য করুন: