সন্তানের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব কার ওপর?
প্রকাশিত: ১০:০১, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১
স্বাভাবিক অবস্থায় সন্তান-সন্ততি ও অধস্তন আত্মীয়ের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব তাদের বাবা-দাদার ওপর বর্তাবে।মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর (সন্তানের) পিতার ওপর কর্তব্য, বিধি মোতাবেক মায়েদের খাবার ও পোশাক প্রদান করা। সাধ্যের অতিরিক্ত কোনো বক্তিকে দায়িত্ব প্রদান করা হয় না। কষ্ট দেওয়া যাবে না কোনো মাকে, তার সন্তানের জন্য কিংবা কোনো বাবাকে তার সন্তানের জন্য।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৩৩)
তবে এ ক্ষেত্রে দুই শর্তে সন্তান-সন্ততির ভরণ-পোষণ ওয়াজিব হবে—এক. যদি সন্তানরা এমন দরিদ্র হয় যে তারা নিজের মালিকানা সম্পদের সাহায্যে চলতে অক্ষম এবং তারা ছোট বা অসুস্থতা অথবা প্রতিবন্ধীর কারণে উপার্জনে অক্ষম হয়। অতএব নাবালেগ বা অসুস্থ অথবা প্রতিবন্ধী ছেলের খরচ বাবার ওপর বর্তাবে। আর মেয়েদের ক্ষেত্রে বালেগা হওয়ার পরও বিবাহের আগ পর্যন্ত ভরণ-পোষণের দায়িত্ব বাবার ওপর বর্তাবে। (ফাতহুল কদির : ৪/৪১৪, রদ্দুল মুহতার : ২/৬৮১)
দুই. বাপ-দাদা সামর্থ্যবান বা উপার্জনে সক্ষম হতে হবে। তাদের সামর্থ্যবান হওয়ার পরিমাণ হলো, তাদের মালিকানা সম্পত্তি বা উপার্জনকৃত আয়ের দ্বারা নিজের ও স্ত্রীর স্বাভাবিক ভরণ-পোষণের অতিরিক্ত সম্পদ থাকতে হবে। অতএব কোনো অসামর্থ্যবান বাবা যদি এমন দুর্বল বা অসুস্থ হন যে উপার্জনে অক্ষম, তাহলে তার ওপর সন্তানের ভরণ-পোষণ ওয়াজিব নয়; বরং এ ক্ষেত্রে ওই সন্তানের দায়িত্ব বাবার পরবর্তী নিকটাত্মীয় যথা মা, দাদা-দাদি, নানা-নানি, ভাই-বোন, মামা-চাচাদের ওপর সামর্থ্য অনুসারে বর্তাবে। (ফাতহুল কাদির : ৪/৪১৪, রদ্দুল মুহতার : ৩/৬১৫)।
দ্বিন শিক্ষারত সাবালক ছেলের ব্যয়ভার : সাবালক ছেলেকে যদি পিতা শিক্ষার কাজে নিয়োজিত রাখে এবং ছেলে লেখাপড়ায় ব্যস্ত থাকায় অর্থ উপার্জনের সুযোগ না পায়, সে ক্ষেত্রে ছেলের প্রয়োজনীয় খরচ বহন করা বাবার দায়িত্ব। পক্ষান্তরে সাবালক ছেলে নিজ ইচ্ছায় লেখাপড়া করলে অথবা বাবার নির্দেশে লেখাপড়া করছে; কিন্তু তার জন্য লেখা-পড়ার সঙ্গে অর্থ উপার্জনের সুযোগও রয়েছে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থী ছেলের খরচ চালানো পিতার ওপর ওয়াজিব নয়। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/৫৬৩, আহসানুল ফাতওয়া : ৫/৪৬১)
দরিদ্র বাবার নাবালেগ সন্তানের ব্যয়ভার : বাবা যদি এমন দরিদ্র হন যে নাবালেগ সন্তান-সন্ততির খরচ বহন করতে অক্ষম, তাহলে নাবালেগ ছেলে যদি সাধারণ উপার্জনে সক্ষম হয় যথা কারো কর্মচারীরূপে কাজ করতে পারে, তাহলে তাকে কাজে লাগিয়ে তার খরচ চালাতে পারবে। তবে তার খরচের অতিরিক্ত তার উপার্জনের অংশটি বাবা তার জন্য সংরক্ষণ করে রেখে দেবে এবং সে বালেগ হওয়ার পর তা তাকে বুঝিয়ে দেবে। তবে যদি ভদ্র ফ্যামিলির সন্তান হয় যে কারো কর্মচারীরূপে কাজ করতে পারবে না অথবা তালেবে ইলেম (ধর্মীয় শিক্ষারত) হয়, তাহলে ওই ছেলেকে সক্ষম ধরা হবে না এবং কাজে লাগাতে পারবে না। তবে দরিদ্র বাবা তার মেয়েকে মানুষের কর্মচারীরূপে কাজে লাগাতে পারবে না; বরং বাবাকে যথাসাধ্য তার খরচ চালিয়ে যেতে হবে, একেবারে অক্ষম হলে অন্য নিকটাত্মীয়ের ওপর তার ব্যয়ভারের দায়িত্ব আসবে। (ফাতওয়ায়ে হিনদিয়া : ১/৫৬২)
সন্তানের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব : যদি মা-বাবা, দাদা-দাদি, নানা-নানি, মামা-চাচা সবাই উপস্থিত থাকেন, তাহলে সন্তান-সন্ততির ভরণ-পোষণের দায়িত্ব সর্বপ্রথম বাবার ওপর বর্তাবে। বাবার অনুপস্থিতি বা অসামর্থ্যতায় তার নিকটবর্তী আত্মীয়ের ওপর বর্তাবে, যথা প্রথমে মা ও দাদা-দাদি, তারপর নানা-নানি, তারপর ভাই-বোন, তারপর মামা-খালা ও চাচা-ফুফু প্রমুখ। এদের মধ্যে যারা উত্তরাধিকারী সম্পত্তির অধিকারী হয়ে থাকে, তাদের ওপর উত্তরাধিকারী সম্পত্তির অধিকারের হারে ভরণ-পোষণের দায়িত্ব বর্তাবে। আর যারা উত্তরাধিকারী সম্পত্তির অধিকারী হয় না, তাদের ওপর আত্মীয়তার নৈকট্যের ভিত্তিতে ভরণ-পোষণের দায়িত্ব বর্তাবে। যদি সমপর্যায়ের একাধিক আত্মীয় থাকে, তাহলে তাদের ওপর সমভাবে দায়িত্ব বর্তাবে। (ফাতহুল কাদির : ৪/৪১০,৪২১)
অনলাইন নিউজ পোর্টাল
মন্তব্য করুন: