শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ১৪ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

স্পেশাল

কুমিল্লায় দিন দিন বাড়ছে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা

 প্রকাশিত: ১৩:১৭, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

কুমিল্লায় দিন দিন বাড়ছে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা

বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসা আছে অনেক বিদেশির। তাদের কেউ কেউ ভাষার টানেই বাংলাদেশে পড়তে আসেন। পড়তে এসে এ দেশের ভাষা, সংস্কৃতিকে যে তিনি নিজের প্রাণেই ধারণ করেছেন। বলছি ভারত থেকে আসা অনিতার কথা। তিনি ৪ বছর আগে বাংলাদেশে এসেছেন এমবিবিএস করতে। তার প্রতিষ্ঠান কুমিল্লা ইস্টার্ন মেডিক্যাল কলেজে কথা হয় অনিতার সাথে। তিনি বাসসকে বলেন, প্রথম প্রথম বাংলা শিখতে কষ্ট হত। কারণ দেশে নিজেদের বাড়িতে তারা বেশিরভাগই ইংরেজিতে কথা বলেন। তবে বাংলা শিখে তিনি আনন্দিত। এখন তার প্রিয় ভাষার একটা বাংলা। দেশে ফিরে গেলে বাংলা ভাষাকে খুব মিস করবেন বলে জানান আনিতা।

ভুটান থেকে আসা প্রীয়ন্তা বলেন, ২০২২ সালে কুমিল্লা ময়নামতি মেডিক্যালে ভর্তি হই। প্রথম প্রথম আমি কিছুই বুঝতাম না। পরে শিক্ষক ও বন্ধুদের সঙ্গে মিশে বাংলা ভাষা শিখেছি। এখন তিনি পরিস্কার বাংলাতেই কথা বলেন। আলাদা করে বোঝার উপায় নেই যে তিনি অন্যদেশের নাগরিক। বোঝা যাবেই বা কী করে। তিনি ভাষাকে দেখেন ভালোবাসার একটি মাধ্যম হিসেবে। ভালোবেসে ফেলেছেন বাংলাকেও। তাই প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনো ভাষা ব্যবহার করেন না। বাংলাতেই কথা বলেন, লিখেন। এমনকি গাইতেও পারেন। তিনি বলেন, গান আছে তো ‘আমি কি ভুলিতে পারি’। এ গানের যা বলা হয়েছে তা-ই করতে হবে। দেশকে ভালোবাসতে হবে। 

কুমিল্লায় সরকারি বেসরকারি চারটি মেডিক্যাল কলেজে লেখাপড়া করেন বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা। তাদের কাছে বাংলা ভাষা অনেক মধুর। তবে বাংলা ভাষার আঞ্চলিকতাকে বেশি পছন্দ বিদেশি শিক্ষার্থীদের। কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ, ময়নামতি, ইস্টার্ন, সেন্ট্রাল ও আর্মি মেডিক্যাল কলেজ। তার মধ্যে আর্মি মেডিক্যাল কলেজ ছাড়া বাকি চারটাতে অন্তত ৯০০ বিদেশি শিক্ষার্থী এমবিবিএস পড়ছেন। ময়নামতি মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে দেখা যায়, ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ, ভুটান, নেপাল, শ্রীলংকাসহ বেশ কয়েকটি দেশের শিক্ষার্থী রয়েছেন। কেউ নতুন ভর্তি হয়েছেন। কেউবা মাস দুয়েকের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করে চলে যাবেন। কেউ আরও বেশ কয়েক বছর থাকবেন।

কলকাতা থেকে আসা জুলি সাহা জানান, তার বাড়ি কলকাতা। তিনি সেট্রাল মেডিক্যাল কলেজের ১৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। বাংলাদেশে তার ভাষা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। কারণ এপাড়-ওপাড় দু বাংলাতেই ভাষা এক। তবে এখানকার আঞ্চলিক ভাষার মধ্যে অনেক মাধুর্য আছে বলে জানান জুলি সাহা। তিনি আরও জানান, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, বরিশাল ও সিলেটের আঞ্চলিক ভাষাটার প্রেমে পড়েছেন। এ ভাষাগুলো অনেক মিষ্টি। ভাষার এ আঞ্চলিকতাকে জুলি অনেক সম্মান করেন।

নেপাল থেকে আসা প্রীয়াঙ্কা জানান, প্রথম প্রথম বাংলা ভাষা শিখতে কষ্ট হয়েছে। এখন বাংলাতেই কথা বলেন তিনি। শুরুতে এখানকার বন্ধুদের সহায়তা নিয়ে বর্ণমালা শিখেছি। তারপর আমি চর্চা করেছি। এটা আমাকে শিখতে হয়েছে। কারণ, যাদের আমি ভালোবাসি, তাদের ভাষা বাংলা। এ ভাষা না জানলে আমি ভালোবাসা প্রকাশ করবো কিভাবে।

ইস্টার্ন মেডিক্যাল কলেজের জ্যেষ্ঠ প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আতাউল মাসুদ রাজিব বলেন, নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি হলে প্রথমে আমরা ভাষা শেখার ক্লাস নিই। শিক্ষকরা বিদেশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাতেও কথা বলেন। কারণ বিদেশী শিক্ষার্থীরা যেন ক্লাসের বাইরে গেলে তাদের যোগাযোগটা সহজ হয়। এতে করে বাংলা ভাষাটা দেশের বাইরেও সমৃদ্ধ হয়।

কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক ডা: ইজাজুল হক  বলেন, প্রতি বছর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা কুমিল্লায় আসেন। এখনও অর্ধশতর বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজে। তারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন। তারা বাংলা শিখেন। এ দেশের সংস্কৃতি সর্ম্পকে জানেন। সেগুলো আবার নিজের দেশে গিয়ে প্রচার করেন। দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে আমাদের প্রাণের ভাষা সারাবিশ্বে এভাবেই ছড়িয়ে পড়ছে।

মন্তব্য করুন: