বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, বৈশাখ ২৬ ১৪৩১, ০১ জ্বিলকদ ১৪৪৫

ইসলাম

প্রিয় বাইতুল মাকদিস

 আপডেট: ১৪:৪৮, ১০ অক্টোবর ২০২৩

প্রিয় বাইতুল মাকদিস


 মসজিদুল আকসা বা বায়তুল মাকদিস কিংবা বাইতুল মুকাদ্দাস।মুসলিম উম্মাহর প্রথম কিবলা।যাকে ঘিরে আবর্তিত ইসলামের অনবদ্য উপাখ্যান। পৃথিবীর বরকতময় ও স্মৃতিবিজড়িত ফিলিস্তিনের সুন্দর সুশোভিত প্রাচীনতম জেরুজালেম শহরে অবস্থিত মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্রতম মসজিদ। সব জাতি-বর্ণের মুসলমানদের প্রাণস্পন্দন।

অন্যদের মাধ্যমে দখলকৃত যেকোনো মুসলিম ভূখণ্ড উদ্ধার করা— সমগ্র মুসলমানদের অপরিহার্য বিষয়। তবে ইসলামের প্রথম কিবলার দেশ ফিলিস্তিনের বিষয়টি অন‌্যসবগুলোর চেয়েও ভিন্ন ও গুরুত্বপূর্ণ।

প্রিয় পাঠক! মুসলিম উম্মাহর হৃদয় স্পন্দন এই বাইতুল মাকদিস।কেন তার এতো মাহাত্ম্য,জেনে নেই।

আল-আকসা প্রধান মসজিদ। যেখানে আল্লাহর রাসুল (সা.) অন্য সব নবীদের নিয়ে নামাজের ইমামতি করেছিলেন।
এক. মহানবী (সা.)-এর গমনস্থল ও ইসরা-মিরাজ

ইসলামের ইতিহাস ও বিশ্বনবির জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ‌্যায় হলো মিরাজ। মিরাজ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ সন্তান মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন‌্যতম বড় মুজিযা। বিপদে জর্জরিত ও চাচা আবু তালিব ও প্রিয়তমা স্ত্রী খদিজার ইন্তেকালে শোকাভিভুতো প্রিয়নবির অশান্ত হৃদয়ে শান্ত্বনার শীতল পরশ বুলানোর নিমিত্তে এক অসাধ‌্য সাধন কাজের মাধ‌্যমে নবুয়তের সত‌্যতাকে সুনির্ধারিত করতে আল্লাহ তাআলা প্রিয়নবিকে একান্ত সান্ন‌্যিধ‌্যে ডেকে নেন। সৃষ্টিজগতের সেরা আলোড়ন সৃষ্টিকারী ও তাৎপর্যপূর্ণ এ ঘটনাটিই হলো মিরাজ। আর মসজিদে আকসার দেশ ফিলিস্তিনের বুকেই রচিত হয় সায়‌্যিদুল আম্বিয়ার সে শ্রেষ্ঠতম নৈশভ্রমনের ইতিবৃত্ত। সেসময় সৃষ্টির সেরা দুলালের পদস্পর্শে ধন‌্য হয় পৃথিবীর বরকতময় ও স্মৃতিবিজড়িত ফিলিস্তিন। সে রাতে নবীজি মসজিতে আকসা থেকে বায়তুল মাকদিস পর্যন্ত নৈশভ্রমণ করেন। এরপর বায়তুল মাকদিস হতেই তিনি উর্ধ্বাকাশে গমন করেন।

ওপর থেকে পুরো আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গন।
এ সম্পর্কে আনাস ইবনু মালিক রা. হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন- ‘বোরাক নিয়ে আসা হলো। বোরাক এমন জন্তু বিশেষ, যা ধবধবে সাদা ও দীর্ঘকায় বিশিষ্ট। গাঁধার চেয়ে বড় এবং খচ্চরের চেয়ে গঠনে ছোট। আর জন্তুটি একেক কদম রাখে দৃষ্টির শেষ সীমানায়’। তিনি বললেন, ‘আমি তার উপর আরোহন করে বায়তুল মাকদিস পর্যন্ত গমন করলাম। এরপর আমি সেটাকে নবিদের জন্তুর খুটির সাথে বাঁধলাম।’ তিনি বলেন-‘অতঃপর আমি মসজিদে আকসাতে প্রবেশ করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করলাম। পরিশেষে সেখান হতে আমাকে উর্ধ্বাকাশে নিয়ে যাওয়া হয়। (সহিহ মুসলিম)

দুই. মুসলমানদের প্রথম কিবলা

ইসলামের কিবলা ও কিবলা পরিবর্তনের ইতিহাস একটি বহুল আলোচিত ও পর্যালোচিত বিষয়। ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায় মহানবী (সা.) তার সহচরদের নিয়ে বায়তুল মাকদিসের দিকে মুখ করেই সালাত আদায় করতেন। বায়তুল মাকদিস হলো- আমাদের প্রথম কিবলা। মুসলমানদের প্রথম ভালবাসা। প্রথম ভালবাসা ভুলবার নয়। প্রথমটা পুরনো হলেও মুসলমানরা তার সুখস্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে এখনও। পরবর্তী সময়ে নবীজির হৃদয়ের চাহিদা ও মনোবাসনাকে পূর্ণতাসহ বিভিন্ন হেকমতের কারণে হাকীম মহান সৃষ্টিতর্কার নির্দেশে কিবলা পরিবর্তিত হলেও এখনও তার ভালবাসা ইসলামের প্রথম সালাতের আদায়ের দিনের মতো প্রোজ্জ্বল।

হিজরি দ্বিতীয় সনের শাবান মাসের মাঝামাঝি সময়ে মহানবি (সা.) কিছু সংখ‌্যক সাহাবায়ে কেরামসহ মদিনার অদূরে মসজিদে বনু সালামায় যোহর মতান্তরে আসরের নামাজ আদায় করেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় রাকাতের মাঝামাঝি সময়ে মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে মহানবি (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম চার রাকাতের অবশিষ্ট দুই রাকাত কাবার দিকে ফিরে আদায় করেছিলেন বলে মসজিদটি মসজিদে কিবলাতাইন বা দুই কিবলার মসজিদ হিসেবে সমধিক পরিচিত। এ প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘মহানবি (সা.) মক্কায় থাকাকালীন সময়ে পবিত্র কাবা তার সামনে থাকাবস্থায় বায়তুল মাকদিসের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করেন। মদিনায় হিজরতের পর সুদীর্ঘ ষোল মাস সেদিকে ফিরেই নামাজ আদায় করেন। অতঃপর কাবার দিকে মুসলমানদের কিবলা পরিবর্তিত হয়।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৮৩৬)

তিন. পৃথিবীর বুকে স্থাপিত দ্বিতীয় মসজিদ

মসজিদ হলো ইসলামের প্রাণকেন্দ্র। ঈমানের ইস্পাতকঠিন দূর্গ। তাওহিদের বাণীর প্রচার-প্রসার ও কুরআন-হাদিস চর্চার আঁতুড়ঘর। সেকালের জ্ঞানচর্চার প্রধান শিক্ষালয়। ইতিহাসে প্রথম নির্মিত মসজিদ মজসিদুল হারাম হলেও এরপরের স্থানে আছে সুশোভিত প্রাচীনতম জেরুজালেম শহরে অবস্থিত মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্রতম মসজিদ মসজিদে আকসা। এটা নিংসন্দেহে ফিলিস্তিনবাসী মুসলমানদের জন‌্যে বিশেষ সম্মানের বিষয়; অন‌্যান‌্য মুসলমানদের অশেষ গৌরবের বস্তু। আসুন! আবু যর গিফারির মুখ থেকেই শুনে নিই সে গৌরবময় উপাখ‌্যান— 

আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গনের পুরো সীমানা ও ভেতরের মসজিদ ও স্থাপনাগুলোর পরিচয়।
আবু জর গিফারি (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! দুনিয়াতে প্রথম কোন মসজিদটি নির্মিত হয়েছে? তিনি বলেন, মসজিদুল হারাম। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কোনটি? প্রতিউত্তরে তিনি বললেন, তারপর হলো মসজিদুল আকসা। অতঃপর আমি জানতে চাইলাম যে, উভয়ের মধ‌্যে ব‌্যবধান কত বছরের? তিনি বললেন চল্লিশ বছরের ব‌্যবধান। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩১১৫)

চার. সালাত আদায় ও প্রহরার বিশেষ গুরুত্ব

কাজের স্থান-কাল-পাত্র বিশেষে কাজের মর্যাদা ও মান বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। তেমনি সালাত আদায় করা ও প্রহরার ক্ষেত্রেও স্থান অনুপাতে এ মর্যাদা শতগুন বেড়ে যায়। মসজিদুল আকসায় সালাত আদায় ও প্রহরায় সওয়াবের বিষয়ে জানতে হলে— নিম্নোক্ত হাদিসটি পাঠ করুন।

আল-আকসা প্রাঙ্গনে ডোম অব দ্য রক মসজিদ।
আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন সুলায়মান ইবনু দাউদ বায়তুল মাকদিসের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করলেন, তখন তিনি আল্লাহর কাছে তিনটি বিষয়ের প্রার্থনা করলেন। তার মতো শাসনক্ষমতা এবং এমন রাজত্ব, যা তার পরে কাউকে প্রদান করা হবে না ও সালাত আদায়ের একনিষ্ঠ মনে উক্ত মসজিদে আগমনকারীর পাপ মোছন করে তার জন্মের দিনের মতো নিস্পাপ করার প্রার্থনা করেছেন।’ নবীজি (সা.) বললেন, ‘আল্লাত তার আবেদনের ভিত্তিতে তাকে দুটি প্রদান করেছেন। তৃতীয়টিও কবুল করেবেন বলে প্রত‌্যাশা করছি।’ (সুনানে ইবনু মাজাহ, হাদিস : ১৪৭৯) 

পাঁচ. মসজিদুল আকসায় সফরের প্রতি নবীজির বিশেষ গুরুত্বারোপ

ফিলিস্তিন প্রাকৃতিক নদ-নদী, ফল-ফসলের প্রাচুর্যতা এবং নবি-রাসুলের বাসস্থান ও কবরস্থান হওয়ার কারণে পৃথক বৈশিষ্ট‌্যের দাবি রাখে। আর এসব গুণ-বৈশিষ্ট‌্যের প্রতি লক্ষ‌্য রেখে মহানবির মুখ থেকে উচ্চারিত হয়— তার দিকে সফরের বিশেষ গুরুত্বের কথা। মহানবী (সা.) মসজিদুল হারাম, মসজিদে নববি ও মসজিদুল আকসার উদ্দেশ‌্যে সফরকে বিশেষ পুণ‌্যময় কাজ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এ বার্তা অন‌্যকোনো মসজিদের ব্যাপারে আসেনি।


ফিলিস্তিন ও মসজিদুল আকসা।
আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বর্ণনা করেন, ‘তোমরা তিনটি মসজিদ ব‌্যতীত অন‌্যকোনো মসজিদে বিশেষ সওয়াবের উদ্দেশ‌্যে পরিভ্রমণ করো না। আর সে তিনটি মসজিদ হলো— মসজিদুল হারাম, মসজিদে নববী ও মসজিদুল আকসা।” (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১১১৫)

Online News Portal 24

মন্তব্য করুন: