শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ১৩ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

সুখ-শান্তি সমস্ত মানুষের চাওয়া

 প্রকাশিত: ১২:৪০, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২১

সুখ-শান্তি সমস্ত মানুষের চাওয়া

আলহামদু লিল্লাহি নাহমাদুহূ ওয়া নাস্তাঈনুহ ওয়া নাস্তাগফিরুহু ওয়াছাল্লাল্লাহু… ‘আলাইহি ওয়া ‘আলা আলিহী ওয়া আছহাবিহী ওয়া বারাকা ও সাল্লামা তাসলীমান কাছীরা, আম্মা বা’দ।
আল্লামা শেখ শিহাব উদ্দীন (পলাশের হুজুর) খলীফা হযরত আমীরে শরীয়ত মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর (রহঃ) এর বাংলাদেশ ও বিশ্ব মুসলমানের প্রতি উদাত্ত আহবান:
চারটি বিষয় আমরা গুরুত্বসহকারে পালন করলে দুনিয়ার যত অশান্তি, পেরেশানী, হানাহানী, মারামারি, রক্তারক্তি, বিভেদ, বৈষম্যসহ সমস্ত খারাবী দূর হবে ইনশাআল্লাহ।

১। নামাজ কায়েম করা
২। যাকাত আদায় করা
৩। সৎ কাজে আদেশ করা
৪। অসৎ কাজে নিষেধ করা

নামাজ কায়েম ও যাকাত আদায় করা:
আল্লাহ তায়ালার এরশাদ:
وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوا مَعَ الرَّاكِعِينَ
(আর নামায কায়েম কর, যাকাত দান কর এবং নামাযে অবনত হও তাদের সাথে, যারা অবনত হয়) [সুরা বাকারা: আয়াত ৪৩]
অন্য জায়গায় এরশাদ হয়েছে:
وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ ۚ وَمَا تُقَدِّمُوا لِأَنفُسِكُم مِّنْ خَيْرٍ تَجِدُوهُ عِندَ اللَّـهِ ۗ إِنَّ اللَّـهَ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ
(তোমরা নামায প্রতিষ্ঠা কর এবং যাকাত দাও। তোমরা নিজের জন্যে পূর্বে যে সৎকর্ম প্রেরণ করবে, তা আল্লাহর কাছে পাবে। তোমরা যা কিছু কর, নিশ্চয় আল্লাহ তা প্রত্যক্ষ করেন) [সুরা বাকারা: আয়াত ১১০]
অন্যত্র এরশাদ হয়েছে:
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ لَهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
(নিশ্চয়ই যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে, সৎকাজ করেছে, নামায প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং যাকাত দান করেছে, তাদের জন্যে তাদের পুরষ্কার তাদের পালনকর্তার কছে রয়েছে। তাদের কোন শঙ্কা নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না) [সুরা বাকারা: আয়াত ২৭৭]
হাদীসে বর্ণিত হইয়াছে:
হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন যে, আল্লাহ তায়ালা ফরমাইয়াছেন, আমি আপনার উম্মতের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করিয়াছি এবং প্রতিঙ্গা করিয়াছি যে, যে ব্যক্তি এই পাঁচ ওয়াক্ত নামায সময় মত গুরুত্ত সহকারে আদায় করিবে আমি তাহাকে নিজ দায়িত্বে জান্নাতে প্রবেশ করাইব। আর যে ব্যক্তি গুরুত্ত সহকারে এই নামাজসমুহ আদায় করিবে না, তাহার ব্যাপারে আমার কোন দায়িত্ব নাই। (দুররে মানসুর : আবূ দাউদ, ইবনে মাজাহ)

নবী-রাসুলগণ আল্লাহর সত্তা ও গুনাবলী মহাত্ত ও অনুগ্রহসমুহ, পবিত্রতা ও একত্ববাদ সম্পর্কে যা বলেছেন তা মেনে চলা এবং ঈমান আনার প্রথম সহজাত দাবি এই যে, মানুষ যেন নিজকে তাঁর জন্য উৎসর্গ করে, ইবাদাত, ভালবাসা ও বিনয় নম্রতা প্রকাশ করে, তাঁর রহমত ও সন্তুষ্টি অর্জনের প্রাণপণ চেষ্টা করে এবং তাঁকে স্মরণের মধ্য দিয়ে নিজ অন্তর আত্মাকে জ্যোতির্ময় করে তোলে। এটাই সালাতের প্রকৃত বিষয়বষ্তু। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, এ লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে সালাত শ্রেষ্ট মাধ্যম। আর এজন্য প্রত্যেক নবী-রাসুলের শিক্ষা এবং শরী’আতে আনার পর প্রথম করণীয়রূপে সালাতকে নির্ধারিত করা হয়েছে। তাই সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনীত শরী’আতেও সালাতের শর্তাবলী, রুকনসমুহ, সুন্নাতসমুহ, নিয়মকানুন এবং সালাত ভংগের ও মাকরুহ হওয়ার বিষয় সবিষ্তার গুরুত্ত সহকারে বর্ণিত হইয়াছে। একে এমন গুরুত্ত দেওয়া হইয়াছে যা অন্য কোন ইবাদতকে দেওয়া হ্য়নি।

অন্যত্র হাদীসে বর্ণিত হইয়াছে:
হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন যে, আল্লাহ তায়ালা বিত্তবানদের উপর তাহাদের ধন-সম্পদের মধ্যে সেই পরিমাণই ফরয করিয়াছেন যাহা তাহাদের গরীবদের জন্য যথেষ্ট এবং তাহাদিগকে ক্ষুধার্ত ও নগ্ন থাকা অবস্থায় তাহাদের কষ্টের মধ্যে না ফেলে। কিন্তু বিত্তবানেরা সেই পরিমাণ ও আটক করিয়া রাখে। ভালভাবে শুনিয়া রাখ আল্লাহ তায়ালা বিত্তবানদের নিকট হইতে কঠিন হিসাব গ্রহণ করিবেন।

আল্লাহ তায়ালা গায়েবের সবকিছু সম্পর্কে অবহিত হওয়া সত্বেও যাকাতের যেই পরিমাণ নির্ধারিত করিয়াছেন তাহাই যথেষ্ট। যদি এই পরিমাণ যাকাত যথাযথভাবে আদায় করা হয় এবং ধনীদের নিকট হইতে তোলা হয় তাহা হইলে কোন মানুষ ক্ষুধায় কষ্ট পাইবে না এবং পোষাকের অসুবিধা কাহারও থাকিবে না।

সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করা
আল্লাহ তায়ালার এরশাদ:
وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ ۚ وَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
(আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত যারা আহবান জানাবে সৎকর্মের প্রতি, নির্দেশ দেবে ভাল কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে, আর তারাই হলো সফলকাম।) [সুরা আল ইমরান: আয়াত ১০৪]
অন্যত্র এরশাদ হয়েছে:
كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّـهِ
(তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যানের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে।) [সুরা আল ইমরান: আয়াত ১১০]

হাদীসে বর্ণিত হইয়াছে:
হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, একদা হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে তশরীফ আনিলেন, আমি তাঁহার চেহারা মোবারক লক্ষ্য করিয়া বুঝিতে পারিলাম, নিশ্চয় গুরুত্তপূর্ণ কোন ব্যাপার দেখা দিয়াছে। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাহারও সাথে কোনরূপ কথাবার্তা না বলিয়া ওযু করিয়া মসজিদে তশরীফ নিয়া গেলেন। আমি তাঁহার কথা শুনিবার জন্য ঘরের দেওয়ালে গা ঘেঁষিয়া দাঁড়াইয়া গেলাম। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে তশরীফ রাখিলেন। অতঃপর আল্লাহর প্রশংসা বর্ণনা করিয়া এরশাদ ফরমাইলেন: “হে লোকসকল ! আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করিতে থাক, নতুবা এমন সময় হ্য়ত আসিয়া পড়িবে যখন তোমরা দোয়া করিবে কিন্তু উহা কবুল করা হইবে না, তোমরা সওয়াল করিবে কিন্তু উহা পুরণ করা হইবে না, তোমরা শত্রুর বিরুদ্ধে আমার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করিবে কিন্তু আমি তোমাদিগকে সাহায্য করিব না।” হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই পবিত্র কথা কয়টি বলিয়া মিম্বর হইতে নামিয়া আসিলেন। (তারগীব : ইবনে মাজাহ, ইবনে হিব্বান)

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: