শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ১৩ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

দ্বীন ইসলামের কিছু সৌন্দর্যের সন্ধান

 প্রকাশিত: ০৯:৪৮, ১ আগস্ট ২০২১

দ্বীন ইসলামের কিছু সৌন্দর্যের সন্ধান

ইসলাম অর্থ শান্তি একথা সর্বজন বিদিত। এ শান্তি শুধু মুসলমানদের জন্য নয় বরং জাতি, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষ এবং সকল সৃষ্টির জন্য। ইসলামের সৌন্দর্য হিসেবে আপনি কোনটিকে সবচাইতে বেশি অগ্রাধিকার দিবেন? 

আমি এই প্রশ্নটি আমার ডজন ডজন বন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছি যারা ইসলামে প্রত্যাবর্তন করেছে এবং প্রত্যেকের কাছে এ নিয়ে নানা ধরনের মতবাদ দেখেছি। 

আমি এই প্রশ্নের অনেকগুলো উত্তর পেয়েছি এবং এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ কিছু উত্তর আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই। 

লোকেরা ইসলামের সৌন্দর্য সম্পর্কে আসলে কী বলে? চলুন, দেখা যাক। 

স্রষ্টা সম্পর্কে একটি সুন্দর ধারণা 
ইসলাম তাওহীদকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হয়। এটি অন্য কোনো মধ্যস্ততাকারী ক্যাথলিক ধর্মের মতো নয় যেখানে আপনাকে যাজকের কাছে গিয়ে নিজের পাপকে স্বীকার করতে হবে বা যীশুর কাছে গিয়ে আপনার পাপের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে।

“জিজ্ঞেস করুন নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের পালনকর্তা কে? বলে দিন: আল্লাহ! বলুন: তবে কি তোমরা আল্লাহ ব্যতীত এমন অভিভাবক স্থির করেছ, যারা নিজেদের ভাল-মন্দের ও মালিক নয়? বলুন: অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান হয়? অথবা কোথাও কি অন্ধকার ও আলো সমান হয়? তবে কি তারা আল্লাহর জন্য এমন অংশীদার স্থির করেছে যে, তারা কিছু সৃষ্টি করেছে, যেমন সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ? অতঃপর তাদের সৃষ্টি এরূপ বিভ্রান্তি ঘটিয়েছে? বলুন: আল্লাহই প্রত্যেক বস্তুর স্রষ্টা এবং তিনি একক, পরাক্রমশালী।“ 
                      (কুরআন ১৩:১৬)

আল্লাহ না জন্মগ্রহণ করেছেন, না তাঁর কোনো সন্তান আছে, না তাঁর মানুষের মতো কোনো আহার গ্রহণের প্রয়োজন হয়। ‘আল্লাহ’ হলো সৃষ্টিকর্তার একটি বিশেষ নাম, যার কোনো বহুবচন করা যায় না। তিনি এক, সর্ব বিষয়ে সম্যক অবহিত এবং সর্বশ্রোতা। 

আল্লাহ তা’আলা তাঁর পরিচয় সম্পর্কে পবিত্র কোরআনেই ইরশাদ করেছেন যাতে আমরা তাঁর অস্তিত্ব নিয়ে বিভ্রান্তিতে না পড়ি:

 "বল, তিনিই আল্লাহ, এক ও অদ্বিতীয়। তিনি কারো প্রতি মুখাপেক্ষী নন। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কারও থেকে জন্ম নেননি। এবং তাঁর সমতুল্য কেউই নেই।"
             (সূরা ইখলাস)

উপাসনার ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা 
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা, একজন মুসলিমের কার উপাসনা করতে হবে তা জানার জন্য কুরআন ও সুন্নাহর শিক্ষাকে অনুসরণ করা জরুরি। ইসলাম যেমন মানবজীবনের সকল স্তরে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম, তেমনি সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং আধ্যাত্মিক বিষয়াবলীতেও।

আমাদের কীভাবে আল্লাহ তা’আলার ইবাদত করতে হবে তার সবকিছুর দিক-নির্দেশনা আল্লাহ রাসুল (সাঃ) এর কাছে ওহীর মাধ্যমে প্রেরণ করেছেন, আমাদের সকলের শিক্ষক হিসেবে তাকে পাঠিয়েছেন। আমাদের ইবাদতের পদ্ধতিগুলো কুরআন ও হাদীসে বেশ সুন্দরভাবে বর্ণিত হয়েছে। 

আমাদেরকে কার ইবাদত করতে হবে এ নিয়ে আর বিতর্কের কিছু নেই কারণ যা আল্লাহ তা’আলার থেকে বর্ণিত হয়েছে তাতে নতুন কোনকিছুই সংযোজিত হতে পারে না। আমরা যদি নিজের ইচ্ছেমত কারও উপাসনা করতাম তাহলে এমনটি ভেবে নিতাম যে একমাত্র ইমামগণই আল্লাহর সাথে কথা বলতে পারেন। 

ইবাদত হলো আল্লাহ তা’আলার নিকটবর্তী হওয়ার একটি মাধ্যম যার দ্বারা আপনি আপনার রবের কাছে সাহায্য চাইবেন, তাঁর অনুগ্রহ কামনা করবেন।

আল্লাহর সাথে সম্পর্ক 
আমার সাথে আমার রবের যোগসুত্রের জন্য কোনো মধ্যস্ততাকারীর প্রয়োজন নেই, কোনোকিছুর প্রয়োজন হলে সেটা সরাসরি আলাহর কাছেই আমি চাইব। এটি সম্পূর্ণই আপনার রবের সাথে আপনার ব্যক্তিগত বিষয়, এখানে তৃতীয় কারও হস্তক্ষেপের কোনো অধিকার নেই। আল্লাহ তা’আলা পরম করুণাময়, মা তার সন্তানকে যেভাবে ভালবাসেন, আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাকে তার থেকেও অধিক ভালবাসেন যার কোনো তুলনা নেই।

আল্লাহ তা’আলার সাথে কথা বলার জন্য আমাদের পোপ, পুরোহিত বা বিশপের শরণাপন্ন হতে হয় না। আমরা সরাসরি তাঁর সাথেই কথা বলি। 

আল্লাহ তা’আলা আমাদের এতটাই ঘনিষ্ঠ যে আমরা কী ভাবছি না ভাবছি তার সবই তিনি জানেন। তিনি আমাদের বলেছেন, 

   "অবশ্যই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি এবং তার মন তাকে যে কুমন্ত্রণা দেয়, তা আমি জানি। আমি তার  ঘাড়ে অবস্থিত ধমনী অপেক্ষাও নিকটতর।"
                      (কুরআন ৫০:১৬)

কুরআন- মানবজাতির পথ-প্রদর্শ
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর নাযিল হওয়া ওহীতে আমাদের জীবনের সমস্ত দিক-নির্দেশনা বর্ণিত রয়েছে। আল্লাহ তা’আলাই সমস্তকিছুর নীতি-নির্ধারক, তিনিই আমাদের সমস্ত ভালো-মন্দ বুঝেন, তিনিই সবকিছু জানেন। 

  "সেদিন প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে আমি একজন বর্ণনাকারী দাঁড় করাব তাদের বিপক্ষে তাদের মধ্য থেকেই এবং তাদের বিষয়ে আপনাকে সাক্ষী স্বরূপ উপস্থাপন করব। আমি আপনার প্রতি গ্রন্থ নাযিল করেছি যেটি এমন যে তা প্রত্যেক বস্তুর সুস্পষ্ট বর্ণনা, হেদায়েত, রহমত এবং মুসলমানদের জন্যে সুসংবাদ।"
                     (কুরআন ১৬:৮৯)

মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতার অন্তর্ভুক্ত 
 "আমি আমার বান্দাদের এমনভাবেই সৃষ্টি করেছি যেন তাদের ইবাদতের প্রতি তাদের স্বাভাবিক প্রবণতা কাজ করে কিন্তু শয়তান তাদেরকে পথভ্রষ্ট করে।"
           (মুসলিম ২৮৬৫)

  ইসলামকে দ্বীন-ফিতরাহ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় কারণ স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন ও আনুগত্যের সাথে এটি সামঞ্জস্যপূর্ণ। 

সমস্ত মানুষই প্রকৃতিতে আল্লাহর অধীনে জন্মগ্রহণ করে কিন্তু অন্যান্য ধর্মের বিশ্বাস ও উপাসনা তাকে বিভ্রান্ত করে। আমরা যদি সেদিকে দৃষ্টিপাত করি তো সে হিসেবে আমরা মুসলিম হয়ে একতাবদ্ধ রয়েছি। 

হৃদয় ও আত্মার পরিশুদ্ধি
ইসলাম আমাদের হৃদয় ও আত্মাকে পুষ্ট করে। কুরআন, সুন্নাহ এবং ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ মেনে চলার মাধ্যমে আমরা ইসলামের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হই এবং দুয়া'র মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই। 

সমতা এবং শ্রদ্ধা
ইসলাম মানবজাতিকে বর্ণে বা গোত্রে বিভক্ত না করে একই ছায়াতলে নিয়ে এসেছে এবং সকলকে সমান মর্যাদা দিয়েছে। মুসলমানদের কাছে তাকওয়ার চাইতে মূল্যবান আর কিছুই নেই।

রাব্বুল আ'লামীন আমাদের সবাইকেই ইসলামের সৌন্দর্য বোঝার তৌফিক দান করুন, আমরা যেন তাঁর আদেশ-নিষেধ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মেনে চলতে পারি এবং নিজেদের আচরণ দ্বারা ইসলামের মহিমান্বিত রূপ সকলের নিকট তুলে ধরতে পারি। আমিন। 

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: