শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ১৪ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

দুনিয়া ও আখিরাত

 প্রকাশিত: ১০:৩১, ৬ জুলাই ২০২১

দুনিয়া ও আখিরাত

ফেইসবুকে আমরা প্রায়ই একধরণের ভিডিও দেখি যেখানে ফেসবুক খোলার পর থেকে পুরনো সময়ের সব স্মৃতিজড়ানো মুহূর্ত রয়েছে।
দুনিয়া মুভি!
এক মুহূর্তে নিজের 'দুনিয়া মুভি' কল্পনা করুন।
ভাবুন, আপনি আপনার রবের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন এবং নিজের চোখের সামনে দুনিয়ায় কাটানো সকল সময় দেখতে পাচ্ছেন।
জীবনের প্রথম যে মুহূর্তটি আপনি মনে করতে পারেন সেটি কল্পনা করুন... আপনার শ্রেষ্ঠ স্মৃতি, বড় কোনো প্রাপ্তি... কীভাবে আপনি অন্যদেরকে ভালো এবং খারাপ পথে প্রভাবিত করেছিলেন... আপনার বন্ধুরা, এবং কীভাবে তারা আপনাকে প্রভাবিত করেছিল... সেই সময়, যখন আপনি কাউকে না জানিয়ে দান করেছিলেন...
সেই সব সময়, যখন আপনি আপনার বাবা-মার পেছনে নির্লজ্জভাবে কথা বলে গেছেন... যখন আপনি কারও জন্য আন্তরিকভাবে দু'আ করেছিলেন কিন্তু তাদেরকে বলেননি.... প্রতিটা সময় দু'বার তাকিয়েছেন, যা করে উচিত ছিলনা।
সেই মুহূর্ত, যখন আপনি দু'আয় কাঁদছিলেন এবং অনুশোচনায় দগ্ধ হচ্ছিলেন; কিন্তু আবারও একই পাপে জড়িয়ে পড়ছিলেন... বুকের খাঁচায় যত বিদ্বেষ পুষে রেখেছিলেন, যা কেবল আপনাকেই ক্ষতবিক্ষত করেছে... আপনার অপচয়কৃত প্রতিটি সময়... প্রতিটি নিয়তের গলদ..... এবং সমস্ত অনুশোচনা।
এটা কি এমন মুভি যা আপনি অন্যদের সাথে শেয়ার করতে পারবেন, যেমনটা মানুষ ফেসবুকে শেয়ার করে থাকে? এবং যদি আপনি পেছনে ফিরতে পারতেন, সেখানের কিছু কি পরিবর্তন করতেন?
বিন্দুর ন্যায়
নবী মুহাম্মদ (সা) আমাদেরকে বলেছেন:
"পরকালের তুলনায় এই পৃথিবী সমুদ্রে ডুবানোর পর তোমার আঙুলে লেগে থাকা কয়েক ফোঁটা পানির ন্যায়।"
(সহীহ মুসলিম)
সমুদ্র এত বিশাল যে, উপকূলে দাঁড়িয়ে এর ১% ও আপনি দেখতে পাবেন না। এতে থাকা পানির সমস্ত ফোঁটা গুনলেও তা পরকালীন জীবনের তুলনায় কিছুই নয়। কারণ সমুদ্র কোথাও না কোথাও শেষ হয় কিন্তু পরকালীন জীবনের কোনো সমাপ্তি নেই।
যাইহোক, মানুষ হিসাবে আমাদের জন্য এ বিষয়টি বোঝা কষ্টসাধ্য, এজন্যই একটি প্রতিচ্ছবি আঁকার জন্য আমাদের সামনে একটি রূপক তুলে ধরা হয়েছে।
বিশাল সমুদ্রের তুলনায় দুনিয়া কেবল আপনার আঙুলে লেগে থাকা সেই দু তিন ফোঁটা পানির মতো। এর অর্থ, 'দুনিয়া মুভি' কল্পনা করার প্রতিটা মুহূর্ত ওই বিন্দুতে আবদ্ধ, আমরা এখন যে মুহূর্ত পার করছি সেটাও ওখানে আছে; এবং আমাদের জীবনের সবটুকু সময়, এমনকি আমরা যদি একশ বছরও বাঁচি... তবুও সেগুলোর সবকিছুই এই তুচ্ছ বিন্দুর অংশ!
চলে যাওয়া প্রতিটি বছর, ঝরে যাওয়া শত অশ্রু, যত কষ্ট এবং যন্ত্রণা আপনি সয়েছেন, প্রতিটি দুর্ঘটনা, সেই সমস্ত কিছু যাতে আপনি এবং আমি হতাশ হয়েছি..... সব ঐ ছোট্ট ছোট্ট বিন্দুতে মিশে আছে।
তাই আমার প্রশ্ন হলো....'কীভাবে সবকিছু হারাম' এবং 'কেন জীবন অসুন্দর'... এসব নিয়ে অভিযোগ করা কতখানি যুক্তিযুক্ত? সুতরাং, এভাবে কি আমরা কিছু নিয়ম ভেঙে আমাদের তুচ্ছ অভ্যাসের দাস হয়ে যেতে পারি?
পুরো সমুদ্রের বিনিময়ে সামান্য দু'টি বিন্দুকে আঁকড়ে ধরার কোনো মানে আছে কি?

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: