শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ১৪ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

এডিটর`স চয়েস

টিকটকের অন্ধকার: তারুণ্যের টিপটপ যেখানে ম্লান হচ্ছে

 প্রকাশিত: ১১:৫৪, ৩ ডিসেম্বর ২০২০

টিকটকের অন্ধকার: তারুণ্যের টিপটপ যেখানে ম্লান হচ্ছে

এনাম হাসান জুনাইদ ।।

প্রযুক্তির কল্যাণে এখন দেশে তথাকথিত মডেল তারকা হিরো হিরোইনদের অভাব নেই। সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষত টিকটক লাইকির মত অ্যাপের ‘কল্যাণে’ এখন সর্বত্রই এসব ‘তারকা’দের দেখা মেলে।

এসব অ্যাপ ব্যবহার করে রাতারাতি সেলিব্রেটি বনে যান একেকজন লাইকার, টিকটকার। সেসব ভিডিও নিজেদের ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউবে ব্যবহার করে আয় করে নেন শত শত ডলার। শুধু এটুকুতেই সীমাবদ্ধ নয়, জনপ্রিয়তা আর ডলার আয়ের লোভে এক শ্রেণির তরুণ হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়েছেন। লাগামহীন, কুরুচিপূর্ণ ভিডিও তৈরি করে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন তারা।

এর প্রভাব পড়ছে সামাজিক জীবনেও। যে ধরনের আচরণ আমাদের সংস্কৃতিতে কখনই ছিল না, সে ধরনের আচরণ উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীদের মাঝে ক্রমাগতই বেড়ে চলেছে।

টিকটক নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী জে আর খাঁন রবিন গণমাধ্যমকে জানান, এইসব অ্যাপ ব্যবহারে তরুণ প্রজন্ম বিপথগামী হচ্ছে। নৈতিকতা, সামাজিক মূল্যবোধ ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ নষ্ট হচ্ছে। তরুণরা কিশোর গ্যাংয়ে জড়িয়ে অপরাধমূলক কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে, সহিংস হয়ে উঠছে। এই অ্যাপের মাধ্যমে তরুণরা সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জন করতে চান এবং অনেক তরুণ-তরুণী নিজেকে খুব জনপ্রিয় ভাবতে শুরু করেন।

তিনি আরও বলেন, বিগো লাইভ অ্যাপের মাধ্যমে তরুণ ও যুবকদের টার্গেট করে লাইভে এসে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি ও কুরুচিপূর্ণ প্রস্তাব দিয়ে এবং যৌনতার ফাঁদে ফেলে কৌশলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কাড়ি কাড়ি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অনেক তরুণ। এ অ্যাপটি মূলত একটি লাইভ স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম, যেখানে একজন ব্যবহারকারী তার অনুসারীদের সঙ্গে লাইভে মুহূর্ত শেয়ার করেন। এই অ্যাপের ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করে আমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তান অ্যাপটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।

আইনজীবী বলেন, টিকটক অ্যাপের মাধ্যমে অনেক কিশোর-তরুণ উদ্ভট রঙে চুল রাঙিয়ে এবং ভিনদেশি অপসংস্কৃতি অনুসরণ করে ভিডিও তৈরি করছেন, যাতে সহিংস ও কুরুচিপূর্ণ কনটেন্ট থাকে। স্বল্প বসনা তরুণীরা অশ্লীল নাচ, গান ও অভিনয়ের পাশাপাশি নিজেদের ধূমপান ও সিসা গ্রহণ করার ভিত্তিও আপলোড করেছেন। এসব ভিডিওগুলোতে কোনো শিক্ষনীয় বার্তা নেই। উল্টো এসব ভিডিওর মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের কাছে ভুল বার্তা চলে যাচ্ছে।

গুণীজনরা মনে করেন, আখেরাত বটেই দুনিয়াতেও তথা কথিত সেলিব্রেটি হয়ে যাওয়া, তারকা বা মডেল হয়ে যাওয়া স্থায়ী কোনো সম্মান নয়। এটি খুবই ক্ষণস্থায়ী ও সস্তা সম্মান। দুনিয়া ও আখেরাতে যদি স্থায়ী সম্মান অর্জন করতে হয় তাহলে দেশ ও মানবতার উপকার হয় এমন কাজে নিজের অর্থ সময় শ্রম ও প্রতিভাকে বিনিয়োগ করতে হবে। সেলিব্রেটি, তারকা আর মডেলের চেয়ে দেশের বেশী প্রয়োজন এখন বড় বড় ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বিজ্ঞানীর যারা এসব ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের নেতৃত্ব দিতে পারবে।

প্রবীনরা বলেন, একটা সময় ছিল যখন দিনরাত একাকার করে ফেলা হত মেট্রিক পরীক্ষায় ফলাফল ভাল করার জন্য। অনেক কষ্ট করে মানুষ তখন অর্থ ও যশ অর্জন করত। আর এখন  কী বেহুদা অনর্থক অশ্লীল অসামাজিক কার্যকলাপের মাধ্যমে নিজের সম্ভ্রম বিকিয়ে অর্থ উপার্জন করা হচ্ছে।

সমাজকে সুস্থ রাখার জন্যে এসব সস্তা নোংরা অশ্লীলতা যেমন বন্ধ করতে হবে তেমনি বিনোদনের নামে চালিয়ে দেওয়া সব ধরণের অসুস্থ শিল্প সংস্কৃতির চর্চাও বন্ধ করতে হবে। এগুলোই সমাজে অশ্লীলতার সয়লাব হওয়ার চোরাপথ।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: