শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ১৩ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

আবার বিপজ্জনক করোনা

 প্রকাশিত: ১০:২৩, ২৩ মার্চ ২০২১

আবার বিপজ্জনক করোনা

দেশে করোনা সংক্রমণ আবার উদ্বেগজনক। মার্চের শুরু থেকেই প্রতি সপ্তাহে দেড়গুণ হারে সংক্রমণ বাড়ছে। প্রায় প্রতিদিনই ভাঙছে রোগী শনাক্ত ও পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্ত হারের আগের রেকর্ড। উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে মৃত্যুর সংখ্যাও। সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় গত সাত মাস বা ২১৪ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৮০৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর আগে সর্বশেষ গত বছর ২০ আগস্ট সর্বোচ্চ ২ হাজার ৮৬৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিল।

এমনকি উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে সংক্রমণের হারও। গতকাল পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার প্রায় ১০০ দিন পর ১১ শতাংশের ওপরে উঠেছে। মৃত্যু নিয়েও উৎকণ্ঠা বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩০ জন রোগী মৃত্যুবরণ করেছেন, যা গত ৭৪ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে সর্বশেষ গত ৭ জানুয়ারি এর চেয়ে বেশি ৩১ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছিল।

অবশ্য সংক্রমণ, শনাক্ত ও মৃত্যুর রেকর্ডের পাশাপাশি গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে এই প্রথমবারের মতো সর্বোচ্চসংখ্যক ২৫ হাজার ১১১ জনের করোনা পরীক্ষার রেকর্ড হয়েছে। যদিও এ পরীক্ষা সংক্রমণ হার বোঝানোর জন্য সঠিক চিত্র নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এ পরীক্ষার ৫০ শতাংশই স্ক্রিনিং টেস্ট।

সংক্রমণের এমন পরিস্থিতিকে ‘অ্যালার্মিং’ বা ‘উদ্বেগজনক’ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, মার্চের আগে দেশে ক্লাস্টার বা গুচ্ছ ও বিক্ষিপ্ত সংক্রমণ থাকলেও মার্চের শুরু থেকে দেশে আবার কমিউনিটি সংক্রমণ শুরু হয়েছে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা না গেলে দেশের করোনা পরিস্থিতি আবার আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারে। এজন্য তারা লকডাউনের পরিবর্তে বেশি সংক্রমিত এলাকা বা স্থানে ‘মপ-আপ’ বা সুনির্দিষ্ট মানুষদের পরীক্ষা, রোগী শনাক্ত, আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইন এবং নিয়ন্ত্রিত যাতায়াতের পরামর্শ দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে করোনা মোকাবিলায় সরকারের গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি অবশ্যই ‘অ্যালার্মিং’। কারণ পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ১১ শতাংশে উঠে গেছে।

সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ঢালাওভাবে ব্যবস্থা না নিয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এখন ঢালাও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া ঠিক হবে না। এখন আমাদের লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করেন সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। সুনির্দিষ্ট স্থান, সুনির্দিষ্ট প্রতিস্থান, সুনির্দিষ্ট এলাকা সেখানে যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে হবে। সেখানে জানালা-দরজা খোলা রাখতে হবে। এয়ার ভেন্টিলেশন চালু করতে হবে। সব জায়গায় মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন কর্মস্থল, হোটেল-রেস্টুরেন্টে এখন এক-তৃতীয়াংশ মানুষ থাকতে পারবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ইতিমধ্যেই জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও সামাজিক অনুষ্ঠানাদি নিয়ন্ত্রণ করতে জেলা প্রশাসকদের চিঠি দিয়েছে। সেভাবে কাজও শুরু হয়েছে। রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় মাস্ক নিশ্চিত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত নামছে। ইতিমধ্যেই পুলিশ তদারকি করা শুরু করেছে। তবে সবাইকে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: