শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ১৩ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

ইব্রাহীম (আ) এর পথ ধরে আমাদের ঈদ উল আযহা

 প্রকাশিত: ০৯:৫৫, ৮ জুলাই ২০২১

ইব্রাহীম (আ) এর পথ ধরে আমাদের ঈদ উল আযহা

ঈদুহল হিজ্জা বা দুহুল হজ্জ । ইসলামিক ক্যালেন্ডারের বারোতম মাস হিসেবেই আমরা দুহল হিজ্জা বা দুহুল হজ্জ কে চিনি।  ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে আছে। এই মাসের মাঝেই আমরা পেয়ে যাই ইসলামের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ – হজ্জ ‘কে। সেইসাথে মুসলিমদের জীবনের প্রধান দুটি উতসব এর একটি – ঈদ উল আযহাও রয়েছে এই মাসে। 

হজ্জ এবং ঈদ উল আযহা এই দুটি বিশেষ দিন একজন বিশেষ মানুষের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। সেই বিশেষ মানুষটি হলেন হযরত ইব্রাহীম (আ)। যিনি একইসাথে ইহুদী এবং খ্রিস্টানদের কাছে “আব্রাহাম” নামে পরিচিত । 

ইব্রাহীম এর অনুকরনে ঃ 

হযরত ইব্রাহীম (আ) এর অনুসরনেই পুরো পৃথিবীর সকল মুসলিম এই মাসে হজ্জ পালন করে থাকে। হজ্জ এর নিয়মনীতি গুলো এসেছে হযরত ইব্রাহীম(আ) এর জীবনের বিভিন্ন ঘটনা থেকে। 

ঈদ উল আযহা আমাদের কাছে  এসেছে সাইয়েদিনা হযরত ইব্রাহীম (আ) জীবনের একটি পরীক্ষার মাধ্যমে।  আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আদেশ দিয়েছিলেন তার প্রিয় সন্তান ইসমাইল কে কুরবানি করে দিতে । 

যিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখ ঈদ উল আযহা উদযাপিত হয় । এই দিনে হজ্জ এর অন্যান্য রীতি নীতি পালন করার পর , হযরত ইব্রাহীম (আ) এর আল্লাহর প্রতি আনুগত্যকে সম্মান করে একটি পশু কোরবানি দিয়ে থাকে পৃথিবীর সকল মুসলিমরা । 

“ প্রকৃতপক্ষে ইব্রাহীম নিজেই ছিল একজন পরিপূর্ণ উম্মত , আল্লাহর হুকুমের অনুগত এবং একনিষ্ঠ। সে খনো মুশ্রিক ছিল না। সে ছিল আল্লাহর নিয়ামতের শোকরকারী। আল্লাহ তাঁকে বাছাই করে নেন এবং সরল স্টহিক পথে দেখান”। ( সুরা আল নাহল, আয়াত ১২০-১২১)


আত্মত্যাগের সেই অনুপম গল্পঃ 

এক অসম্ভব আত্মত্যাগের কাহিনী রয়েছে ইব্রাহীম (আ) এর জীবনে। হযরত ইব্রাহীম(আ)  একটি আল্লাহ প্রদত্ত স্বপ্নের মাধ্যমে জানতে পারলেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাকে ইসমাইল কে কোরবান করার কথা বলছেন । আল্লাহর রাস্তায় তার সন্তানকে কোরবান করে দিতে বলছেন । হযরত ইব্রাহীম (আ) এই স্বপ্নের কথা পরিবারের সকলকে জানালেন এমনকি ইসমাইলে কেও। পরিবারের অন্যান্যদেরমত ইসমাইল সেই ছোট বয়সে তার ঈমানের দৃড়তা দেখাল । ইসমেইল জানালো – আল্লাহ যে নির্দেশ দিয়েছেন সেটা পালন করাই সবার কর্তব্য। 

হয্রত ইব্রাহীম(আ) তার ছেলে ইসমাইল কে নিয়ে কুরাবনি দেয়ার নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে গেলেন । প্রস্তুতি নেয়া শুরু করলেন প্রাণের সন্তানকে কোরবানি দেয়ার । এর মাঝেই শয়তান বহুবার প্ররোচনা দিয়ে যাচ্ছিল যেন তাঁরা আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে ফিরে আসে । কিন্তু আমাদের মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম(আ) একবিন্দু পরিমান তার সিধান্ত থেকে নড়লেন না । আল্লাহর আদেশ পালনে তিনি ছিলেন অনড়। ইব্রাহীম (আ) এর তরবারি যখন ইসমাইলকে কুরবান করার জন্য উদ্দ্যত হলো ঠিক সেই মূহুর্তে আল্লাহ বললেন এই কোরবানির য়ার কোন প্রয়োজন নেই । সুবহানাল্লাহ । আল্লাহ জানালেন , হয্রত ইব্রাহীম (আ) এর কুরবানি কবুল হয়ে গেছে। আলহামদুলিল্লাহ। 

আল্লাহকে ভালোবাসার আত্মত্যাগের এই কাহানি আমাদেরকে অনুপ্রানিত করে আসছে বছরের পর বছর। 

একবার ভেবে দেখুন , আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কে ভালোবেসে নিজের প্রিয় সন্তানকে তার রাস্তায় কুরবানি করে দেয়া অনেক বড় ত্যাগের এভং সাহসের কাজ। বর্তমান পৃথিবীতে আমরাতো সামান্য কিছু টাকা দিতেও কুন্ঠাবোধ করি । সেখানে নিজের সন্তানকে ত্যাগ করা অনেক বড় ব্যপার। 

কল্পনা করুনতো , যখন হযরত ইব্রাহীম(আ) তার তরবারটি তার সন্তানের দিকে উঠিয়ে ছিলেন তিনি কি অনুভব করছিলেন। ইব্রাহীম(আ) শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত আল্লাহর উপর অটল বিশ্বাস রেখে আনুগত্য দেখিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ্‌। 

অনেক সময় আমাদের জন্য এটা কষ্টসাধ্য হয়ে যায় মেনে নিতে যে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যা কিছুই করছেন আমাদের কল্যানের জন্য। আমাদের দুর্বল ঈমান আমাদের মন , আমাদেরকে অসহায় করে তোলে। কিন্তু এমনটা হওয়া উচিত নয়। 

“ যে ব্যক্তি আল্লাহ কে ভয় করে চলবে আল্লাহ তার জন্য কঠিন অবস্থা থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় সৃষ্টি করে দিবেন। এবং এমন পন্থায় তাকে রিযিক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর নির্ভর করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট।আল্লাহ তার কাজ সম্পূর্ণ করে থাকেন............”( সুরা আত তালাক, আয়াত ২-৩)

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন , ইসমাইল এর স্থানে একটি ভেড়া দিয়ে পরিবর্তন করে দিলেন। এই কারনেই আমিরা মুসলিমরা প্রতি বছর কুরবানি দিয়ে থাকি। ঐদ উল আযহা আমাদেরকে কাছে শুধু একটি আনন্দের দিন নয় ব্রং এই দিনটি আমাদের জন্য একটি রিমাইন্ডার এর কাজ করে থাকে। এই ত্যাগ আমাদেরকে স্মরন করিয়ে দেয় আল্লাহকে ভালোবাসার , তার আদেশ নিষেধ মেনে চলার , আল্লাহর নির্দেশে আনুগত্যের চরম সীমানায় যাও্যার। যিলহজ্জ মাসে যারা পবিত্র মক্কা নগরীতে গিয়ে হজ্জ পালন করতে পারছেন না ্তাতে ভয়ের কিছু নেই। যারা কুরবানি দিতে সামর্থ্যবান তাদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ বলেন –

“ তাদের গোশত বা রক্ত আল্লাহর কাছে পৌছায় না। কিন্তু তার কাছে পৌছে যায় তোমাদের তাকয়া” ( সুরা আল হজ্জ, আয়াত ৩৭)

অনেকেই মুসলিমদের দেয়া কুরবানির এই প্রথাকে ভুল ব্যাখ্যা করে থাকেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে কোন গোশত বা রক্ত পৌছায় না। আমাদের নিয়ত এবং আনুগত্য পৌছায় আলালহ্র কাছে। তাছাড়া আল্লা রাব্বুল আলামিন মাদের মুখাপেক্ষি নন।

আমাদের কল্যানের জন্যই প্রম ক্রুনাময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমদেরকে তার দিকে ফিরে আসার পথে ডাকেন। আমাদেরকে আনুগিওত্য করতে বলেন আমাদের কল্যনাই। 

কুরবানি সশুধু একটি নিয়ম মাত্র। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমদের মাঝে দেখতে চান উদারতা , মহানুভবতা, আনুগত্য এবং ত্যাগের উজ্জ্বলতা। 

আমাদের ধার্মিকতার সাথে আমরা কুরবানির গোশত বিতরন করে আল্লাহর মন জয় করতে পারি। সাধারনত , কুরবানির গোশত তিন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। এক ভাগ নিজেদের জন্য এবং অপর দুই ভাগের একটি অংশ চলে যায় আত্মীয় স্বজন্দের কাছে।অন্য অংশ দান করে দেয়া হয় দুস্থদের মাঝে। 

এই আইনটি আত্মীয়তা এবং বন্ধুত্বের সম্পর্ককে শক্তিশালী করার জন্য আমাদেরকে সাহয্য করে।  যারা অসহায় তাদের সহায়তা করার জন্য আমাদের উপকারের জিনিসগুলি ছেড়ে দেওয়ার জন্য আমাদের উত্সাহের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়  এই কাজগুলো। আমাদেরকে শেখায় , আমাদের সকল প্রাপ্তি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অনুগ্রহে হয়েছে। 

যিলহজ্জ মাসের দশ তারিখ ঈদ উল আযহা পালন করা হয় । যারা হজ্জ করতে যেতে পারেন না তাদের দিনটি শুরু হয় সকালের ঈদ জামাতের নামায দিয়ে। 

আমাদের আনন্দের  সময় এটি। এই সময় গুলোতেই আমরা আত্মীয়দের বাসায় বেরাতে যাই , বন্ধুদের সাথে সম্পর্ক গুলো আরেকটু মযবুত করে নেই। আল্লাহর কাশে শুকরিয়া আদায় করি আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মাদেরকে কত ভালো রেখেছেন। দরিদ্রদের পাশে দাড়ানোর সময় এই ঈদ উল আযহা। 

সর্বোপরি , ঈদ উল আযহা আমাদেরকে বার বার স্মরণ করিয়ে দেয় আজকে আমরা যা কিছু সেতা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দেয়া।  আমাদের সকল ক্ষমতার আনন্দের উতস তিনি । আমাদের ভালো এবং মন্দ দুই সময়ের জন্য একমাত্র  শান্তি আমরা আল্লাহর কাছেই পেতে পারি। আল্লাহর কাছে নিজের তনুমন সঁপে দেয়ার মানে হচ্ছে অনাবিল শান্তির আগম্ন নিয়ে আসা নিজের জীবনে। 

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: