শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ১৩ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

অমুসলিম দেশে শিশুদের ইসলামী শিক্ষা

 প্রকাশিত: ০৯:৫৭, ৩০ জানুয়ারি ২০২১

অমুসলিম দেশে শিশুদের ইসলামী শিক্ষা

যেসব দেশে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়, সেখানে মুসলিম শিশুদের দ্বিনি ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় অভিভাবকদের অনেক বেশি সচেতন হওয়া প্রয়োজন। মুসলিম সমাজের প্রতিটি সদস্যকে সচেষ্ট থাকতে হবে, যেন শিশুরা ঈমান ও ইসলামের সঙ্গে বেড়ে ওঠে। কেননা সংখ্যাগরিষ্ঠতা মানুষের জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার কারণে এমন সব সুযোগ তারা লাভ করে, যা সংখ্যালঘুরা পায় না। তাই অমুসলিম দেশের ইসলামী শিক্ষার রূপরেখা অত্যন্ত সতর্ক ও সচেতনভাবে প্রস্তুত করতে হবে।

সবার আগে ঈমানি শিক্ষা : শিশুরা প্রাথমিক স্তর অতিক্রম করার আগে ঘরে বা ভিন্ন আয়োজনে তাদের ঈমানি শিক্ষা সম্পন্ন করতে হবে। ইসলামী কৃষ্টি ও কালচারের সঙ্গে পরিচিত করে তুলতে হবে। যেন জীবনের শুরুতেই সে নিজের ঈমান ও ইসলাম রক্ষা করতে শেখে। যেকোনো প্রতিকূল অবস্থায় সে আত্মপরিচয় নিয়ে টিকে থাকতে পারে। যদি প্রাথমিক পর্যায়ে সে ঈমানের শিক্ষা না পায়, তবে চার পাশের কুফর, শিরক ও পাপ চর্চা তার হৃদয়ে শিকড় গেড়ে বসবে এবং সমগ্র জীবনে তার প্রতিফলন ঘটবে। ঈমানি শিক্ষা ত্রুটি থাকলে শুধু সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, তার পরিবারও ভুগবে। কেননা অমুসলিম দেশের সামাজিক পরিবেশ ও আইন পরিবারের বিরুদ্ধে তার অনৈসলামিক জীবনধারার পক্ষে অবস্থান নেবে। মুসলিম পরিবারগুলোতে ঈমানি শিক্ষার প্রতি অবহেলা ব্যাপক হলে মুসলিম সমাজ অস্তিত্বের হুমকিতে পড়বে।

জাতিসত্তার অস্তিত্ব রক্ষা : অমুসলিম দেশের ইসলামী শিক্ষায় ‘মুসলিম জাতিসত্তা’র প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। জাতি হিসেবে মুসলমানের বৈশিষ্ট্যগুলো, জীবনাচারে তাদের করণীয় ও বর্জনীয়, মুসলিম সমাজের সামাজিক মূল্যবোধ ইত্যাদির প্রতিফলন থাকতে হবে। যেন অমুসলিম দেশের সমাজ, সংস্কৃতি ও চলমান জীবন প্রবাহের মধ্যে বেড়ে ওঠা শিশু আত্মপরিচয়ের সংকটে না ভোগে। শিক্ষা-সংস্কৃতি ও জীবন প্রবাহে মুসলিম জাতির বৈশিষ্ট্য ও নিদর্শন রক্ষা করতে না পারি, তবে আগামী প্রজন্ম অন্যান্য জাতি-গোষ্ঠীর মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে। শিশুকে মুসলিম সংস্কৃতি ও সামাজিক মূল্যবোধের সঙ্গে পরিচিত করার প্রথম কাজ হলো তার নাম ইসলামী রাখা, দ্বিতীয় কাজ হলো পরিবারে দ্বিনচর্চা, তৃতীয় কাজ হলো ইসলামের সামাজিক ও নৈতিক শিক্ষার সঙ্গে পরিচিত করে তোলা, উম্মাহ বোধ ও চেতনা তাদের ভেতর সৃষ্টি করা।

ঘরে দ্বিনচর্চা : মিসরের একজন প্রখ্যাত সাহিত্যিক, যিনি আরবি সাহিত্যের বুলবুলি নামে খ্যাত ব্যক্তিগত জীবনে ইসলামচর্চা করতেন না। তবে তিনি কোরআনের শিল্পশৈলী নিয়ে বই লেখেন। তাঁকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, শৈশবে আমার মা আমাকে কোলে নিয়ে কোরআন তিলাওয়াত করতেন। তখন কোরআনের ধ্বনি আমাকে মোহিত করত। বড় হওয়ার পরও আমি সে স্বাদ অনুভব করি এবং অনুসন্ধান করে দেখি কোরআনের সাহিত্যশৈলী অনন্য উচ্চতায় অধিষ্ঠিত। তাই আমি এ বই লিখেছি। এ ঘটনা থেকে পরিবারে দ্বিনচর্চার গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়।

আধুনিক শিক্ষার প্রতি অবহেলা নয় : অমুসলিম দেশের মুসলিম শিশুরা যেহেতু একটি প্রতিকূল অবস্থার ভেতরে বড় হয় এবং সংখ্যালঘু হিসেবে নানা ধরনের সামাজিক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়, তাই তাদের জাগতিক শিক্ষার প্রতিও মনোযোগী হতে হবে। যেন নাগরিক জীবনে তারা পিছিয়ে না পড়ে; বরং মুসলিম সমাজের মুক্তি ও স্বার্থ রক্ষায় মুসলিম শিশুদের আগামী দ্বিনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত করা প্রয়োজন। সেটা সম্ভব হবে শুধু আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষা নিশ্চিত করলে। মানসম্পন্ন আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হলে তাদের পক্ষে মুসলমানের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব হবে। অন্যদিকে আধুনিক শিক্ষা ও জীবন থেকে বিমুখ হয়ে থাকলে একসময় তারা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। প্রয়োজনে মুসলিমরা আধুনিক ধারার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারে। ইসলামী শিক্ষা-সংস্কৃতি ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বিত প্রয়াস মুসলিম শিশুদের বহুবিধ জটিলতা থেকে রক্ষা করবে।

চাই শিক্ষার সমপরিমাণ সচেতনতা : যে সমাজ ও দেশের বেশির ভাগ মানুষ অমুসলিম, সেখানে মুসলিম শিশুদের শিক্ষার সমপরিমাণে সচেতনতা আবশ্যক। শৈশব থেকে সে দেশের আইন, সামাজিম মূল্যবোধ, কৃষ্টি-কালচার ও জীবনধারা সম্পর্কে তাদের সচেতন করে তুলতে হবে। যেন তারা ছোট থেকেই জানতে পারে প্রচলিত সমাজব্যবস্থার কোনটা গ্রহণীয়, কোনটা বর্জনীয় ও কোনটা সহনীয়। কোনটা ঈমান-ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং কোনটি গ্রহণে ইসলামের কোনো বাধা নেই। যেন একজন মুসলিম হিসেবে সে তার জীবনের পথ ও ধারাটি সহজেই পার্থক্য করতে পারে এবং সঠিক পথটি বেছে নিতে পারে। পাশাপাশি নিজেকে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।

আল্লাহ পৃথিবীর সব মুসলমান ও তাদের সন্তানদের ঈমান ও ইসলাম রক্ষা করুন। আমিন।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: