রোববার ২৮ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ১৫ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

একটি ভিত্তিহীন কিসসা ইহুদীর লাশ দেখে নবীজীর আফসোস- যদি আমরা তাকে কিছু পূর্বে দাওয়াত দিতাম সে জাহান্নামী হত না

 প্রকাশিত: ০৭:৩১, ১২ জানুয়ারি ২০২৪

একটি ভিত্তিহীন কিসসা ইহুদীর লাশ দেখে নবীজীর আফসোস- যদি আমরা তাকে কিছু পূর্বে দাওয়াত দিতাম সে জাহান্নামী হত না

দাওয়াতের ফযীলত বর্ণনা করার সময় উম্মতের প্রতি নবীজীর দরদ এবং তাদের হেদায়েতের জন্য তাঁর ব্যাকুলতার কথা আলোচনা করতে গিয়ে কিছু মানুষকে এই কিসসাটি বলতে শোনা যায়-

একবার নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের সাথে বসা ছিলেন। তাঁর সামনে দিয়ে এক ইহুদীর লাশ যাচ্ছিল। তা দেখে নবীজী কাঁদলেন। তখন উপস্থিত সাহাবীগণ বললেন, এ তো এক ইহুদীর লাশ; আপনি কাঁদছেন কেন?

তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমরা যদি তাকে কিছু পূর্বে ইসলামের দিকে দাওয়াত দিতাম তাহলে সে জাহান্নামী হত না।

উম্মতের হেদায়েতের জন্য নবীজীর ব্যাকুলতা তো বর্ণনাতীত। তাঁর এ ব্যাকুলতার কথা তো খোদ আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমে অতি হৃদয়গ্রাহী ভাষায় তুলে ধরেছেন। ইরশাদ হয়েছে-

فَلَعَلَّكَ بَاخِعٌ نَّفْسَكَ عَلٰۤي اٰثَارِهِمْ اِنْ لَّمْ يُؤْمِنُوْا بِهٰذَا الْحَدِيْثِ اَسَفًا.

(হে নবী! অবস্থা দৃষ্টে মনে হয়) তারা (কুরআনের) এ বাণীর প্রতি ঈমান না আনলে যেন তুমি আক্ষেপ করে করে তাদের পেছনে নিজের প্রাণনাশ করে বসবে। -সূরা কাহফ (১৮) : ০৬

আরো ইরশাদ হয়েছে-

لَعَلَّكَ بَاخِعٌ نَّفْسَكَ اَلَّا يَكُوْنُوْا مُؤْمِنِيْنَ.

(হে রাসূল!) তারা ঈমান (কেন) আনছে না, এই দুঃখে হয়তো তুমি আত্মবিনাশী হয়ে যাবে! -সূরা শুআরা (২৬) : ০৩

মানুষ ঈমান না আনার বিষয়ে নবীজীর আক্ষেপ ও আফসোসের বিষয়ে স্পষ্ট ভাষায় ইরশাদ হয়েছে-

فَلَا تَذْهَبْ نَفْسُكَ عَلَيْهِمْ حَسَرٰتٍ اِنَّ اللهَ عَلِيْمٌۢ بِمَا يَصْنَعُوْنَ.

সুতরাং (হে নবী!) এমন যেন না হয় যে, তাদের (অর্থাৎ কাফেরদের) জন্য আফসোস করতে করতে তোমার প্রাণটাই চলে যায়। নিশ্চয়ই তারা যা-কিছু করছে, সে সম্পর্কে আল্লাহ পূর্ণ জ্ঞাত। -সূরা ফাতির (৩৫) : ০৮

এই হল উম্মতের  প্রতি নবীজীর দরদ এবং তাদের ঈমান ও হেদায়েতের ব্যাপারে তাঁর ব্যাকুলতা। কিন্তু সে দরদ ও ব্যাকুলতা প্রকাশের উপরোক্ত কিসসাটি একেবারে বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।

তবে এক ইহুদীর ঈমানের বিষয়ে নবীজীর ব্যাকুলতা এবং সে ঈমান আনার পর নবীজীর শোকর আদায়ের একটি সহীহ বর্ণনা রয়েছে-

عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، قَالَ: كَانَ غُلاَمٌ يَهُودِيٌّ يَخْدُمُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَمَرِضَ، فَأَتَاهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعُودُه، فَقَعَدَ عِنْدَ رَأْسِه، فَقَالَ لَه: أَسْلِمْ، فَنَظَرَ إِلَى أَبِيه وَهُوَ عِنْدَه فَقَالَ لَه: أَطِعْ أَبَا القَاسِمِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَسْلَمَ، فَخَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَقُولُ: الحَمْدُ لِلهِ الَّذِي أَنْقَذَه مِنَ النَّارِ.

আনাস রা. থেকে বর্ণিত, এক ইহুদী বালক নবীজীর খেদমত করত। সে একবার অসুস্থ হলে নবীজী তাকে দেখতে গেলেন। তার মাথার কাছে বসলেন। এরপর বললেন, তুমি ইসলাম কবুল কর (ঈমান আনো)।

তখন বালকটি (অনুমতি প্রার্থনাসূচক দৃষ্টিতে) তার পিতার দিকে তাকাল।

তার পিতা বলল, তুমি আবুল কাসেমের (অর্থাৎ নবীজীর) কথা মেনে নাও (তার প্রতি ঈমান আনতে পারো)। এরপর বালকটি ইসলাম গ্রহণ করল।

নবীজী তার কাছ থেকে বের হয়ে বললেন-

الحَمْدُ لِلهِ الَّذِي أَنْقَذَه مِنَ النَّارِ.

আল্লাহর শোকর, যিনি তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করলেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৩৫৬

যাইহোক, ঈমান আনার জন্য ইহুদীকে মৃত্যুশয্যায় দাওয়াত দেওয়ার ঘটনা সহীহ; কিন্তু আলোচ্য কিসসাটি বানোয়াট।

আলকাউসার

মন্তব্য করুন: