শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ১৩ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

মহিষের দইয়ে মিলেছে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া

 প্রকাশিত: ১৪:০০, ১১ জানুয়ারি ২০২২

মহিষের দইয়ে মিলেছে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) একদল গবেষকরা দেশীয় মহিষের দইয়ে ক্ষতিকর অনুজীব এবং ছত্রাকের উপস্থিতি সনাক্ত করেছেন। এই অনুজীব মানবদেহে প্রভাব ফেলতে সক্ষম। দইয়ের অনুজীব এবং ছত্রাক একসঙ্গে চিহ্নিতকরণের গবেষণা এটিই বাংলাদেশে প্রথম।
দুই বছর ধরে চলা গবেষণায় নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি  বিভাগের অধ্যাপক এস এম রফিকুল ইসলাম। সহযোগী ছিলেন একই বিভাগের শিক্ষক ড. আদনান মান্নান। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বিসিএসআইআর, বন গবেষনাগার, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও অস্ট্রেলিয়ার কার্টীন বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীদের যৌথ গবেষণায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, রংপুর, মুন্সিগঞ্জ, বগুড়া ও কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থান থেকে নানা রকমের দই সংগ্রহ করেন গবেষকরা।

এসব দইয়ের মধ্যে গরুর টক দই ও মিষ্টি দই এবং মহিষের টক দই মিলিয়ে মোট ৩০৬ রকমের অনুজীব সনাক্ত করেন। এরমধ্যে ২৮ রকমের অনুজীব সবগুলো দইয়ে পাওয়ার কথা জানান তারা। এতে ল্যাক্টোব্যাসিলাস এবং স্ট্রেপটোকক্কাস ছাড়াও ল্যাক্টোকক্কাস ও এরোমোনাস ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে বেশীরভাগ দইয়ে। আর মিষ্টি দইয়ে মিলেছে ক্ল্যাভেরোমাইসেস ও ক্যান্ডিডা ছত্রাকের আধিক্য।  

নেচার রিসার্চ এর “সায়েন্টিফিক রিপোর্টস” জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল- দইয়ের মধ্যে পুষ্টিগুণের তুলনা, ভারী ধাতব ও এন্টিবায়োটিকের উপস্থিতি যাচাই। এই গবেষনার নমুনা বিশ্লেষণ করে তথ্য সুনিশ্চিতকরণের কাজ করেন অস্ট্রেলিয়ার নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী ব্যারি মার্শাল এর গবেষণাগারের গবেষকগণ।

মহিষের দইয়ে যেসব অণুজীব পাওয়া গেছে তা মানবদেহের পাকস্থলীর সংক্রমণ, ডায়রিয়া ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়া ইত্যাদির জন্য দায়ী। এদের মধ্যে এন্টারোব্যাকটার প্রজাতির অণুজীব সাধারণত গবাদী পশুর মলমূত্রে পাওয়া যায় যা প্রাণীর অন্ত্র সংক্রমণের জন্য দায়ী।

এছাড়াও মহিষের দইয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ছত্রাক পাওয়া গেছে যাতে আছে ক্যান্ডিডা, আয়োডোফেনাস, এপিওট্রাইকাম ও ট্রাইকোস্পোরন। এই ছত্রাকগুলো চুলকানি ও চামড়ায় সংক্রমণ, হজমে সমস্যা এবং রক্তে বিষক্রিয়ার জন্য মারাত্মকভাবে দায়ী। গবেষকেরা মনে করেন, মহিষের দই এর লবনাক্ত এবং ভিন্ন মাত্রার স্বাদ অবিক্রিত রাখার জন্য দুধ থেকে দইপ্রক্রিয়াজাত করনের সময় তা পর্যাপ্ত পরিমানে ফোটানো হয়না যা দইয়ে  সংক্রামকঅণুজীবের উপস্থিতি বাড়িয়ে দিচ্ছে।

তবে তুলনামূলকভাবে মিষ্টি দইয়ে উপকারী অণুজীবের পরিমাণ কম এবং কয়েকটি ধরনে স্ট্রেপটোকক্কাস অণুজীবের পাশাপাশি ক্ল্যাভিসপোরা প্রজাতির ছত্রাকের বিপুল পরিমাণে উপস্থিতি পেয়েছেন। এর পেছনে অতিরিক্ত চিনি বা অন্যান্য দ্রব্য মেশানো একটি কারন হতে পারে বলে মনে করেন গবেষকেরা। ক্ল্যাভিসপোরা অতিরিক্ত চিনির উপস্থিতিতে বসবাস করতে পারে। এটি সরাসরি কোন রোগের জন্য মারাত্মকভাবে দায়ী না হলেও খাবারকে তাড়াতাড়ি পচিয়ে ফেলতে এর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আছে।

গবেষণায় আরো দেখা যায়, পুষ্টিগুণের দিক থেকে টক দই অনেক বেশি এগিয়ে। টক দইয়ের সবগুলো ধরনে উপকারী খনিজ যেমন সোডিয়াম, পটাশিয়াম এবং ক্যালসিয়ামের পরিমান বেশি পাওয়া গেছে যা মিষ্টি দইয়ের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। কিন্তু বেশ কিছুব্রান্ডে দইয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ন উপাদান “জিঙ্ক” যা মানবদেহের গঠন, বিকাশ ও প্রজননে সাহায্য করে, পাওয়া যায়নি পর্যাপ্ত পরিমাণে দেশের অধিকাংশ টক ও মিষ্টি দইয়ে।

এদিকে গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক এস এম রফিকুল ইসলাম বলেন, দেশে যেহেতু খুব বেশি মহিষের দই বিএসটিআই অনুমোদিত নেই তাই একটিমাত্র জনপ্রিয় মহিষের দই এর নমুনা চট্টগ্রাম থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে মহিষের দইয়ের বিভিন্ন অণুজীবের উপস্থিতি পেয়েছি আমরা। যা মানুষের দেহে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। গবেষণায় বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন: