শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, চৈত্র ১৫ ১৪৩০, ১৯ রমজান ১৪৪৫

ইসলাম

হৃদয়ে প্রশান্তি বয়ে আনে পবিত্র কুরআনের ১০ আয়াত

 প্রকাশিত: ০৯:৪৭, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

হৃদয়ে প্রশান্তি বয়ে আনে পবিত্র কুরআনের ১০ আয়াত

জীবনের চলার পথে অনেক আমরা হতাশ হয়ে পরি। উৎসাহ হারিয়ে ফেলি। নিজেদের চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ মনে হয়।

হতাশার এ মুহূর্তে আমরা এমন আশ্রয় খুঁজি, যার কাছে আমরা পেতে পারি সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা। এর জন্য আমাদের স্রষ্টা আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উত্তম আশ্রয়ই নেই, যিনি হতাশার মুহূর্তে তার যাবতীয় সমস্যা সমাধানের যোগ্য।

মানুষের জীবনে চলার পথে যখন চূড়ান্তভাবে হতাশ হয়ে পড়ে, আল্লাহর কাছেই সে পেতে পারে নিরাপদতম আশ্রয় এবং সামনে চলার অনুপ্রেরণা।

এখানে আল্লাহর বাণী পবিত্র কুরআন থেকে অনুপ্রেরণামূলক ১০টি আয়াত উল্লেখ করা হলো, যা আপনার হতাশা দূর করে আপনাকে সামনে চলতে আশা যোগাবে।

১.

وَمَا كَانَ اللَّـهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُونَ

অর্থ: এবং তারা যতক্ষণ ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে আল্লাহ কখনও তাদের উপর আযাব দেবেন না। (সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৩৩)

এ আয়াতে আল্লাহ তার দয়া ও ক্ষমার বিশালত্বের কথা বর্ণনা করেছেন। বান্দা যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর দয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে কোনো গুরুতর বিপদে পড়তে পারেনা। সকল মুহূর্তের জন্য আল্লাহ তার সহায় হয়ে থাকবেন।

২.

خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ وَصَوَّرَكُمْ فَأَحْسَنَ صُوَرَكُمْ ۖ وَإِلَيْهِ الْمَصِيرُ

অর্থ: তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলকে যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদেরকে আকৃতি দান করেছেন, অতঃপর সুন্দর করেছেন তোমাদের আকৃতি। তারই কাছে সকলকে ফিরতে হবে। (সূরা তাগাবুন, আয়াত: ৩)

এখানে আল্লাহ মানুষকে সুন্দরতম আকৃতিতে তৈরির কথা বলেছেন। পাশাপাশি তার কাছেই সকলের নিশ্চিত ফিরে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।

আল্লাহ তার যে সৃষ্টিকে সুন্দরতমভাবে সৃষ্টি করেছেন, তাকে সৃষ্টি করেই তিনি ছেড়ে দেননি। পাশাপাশি তার উপর সর্বদা খেয়াল রাখছেন। সকল মানুষকেই তার কাছে ফিরে যেতে হবে। সুতরাং, আল্লাহ সবসময় তার বান্দাদের সাথে আছেন।

৩.

وَمَن يَتَّقِ اللَّـهَ يَجْعَل لَّهُ مَخْرَجًا ﴿﴾ وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ ۚ وَمَن يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّـهِ فَهُوَ حَسْبُهُ

অর্থ: আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন। এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। (সূরা তালাক, আয়াত: ২-৩)

আল্লাহ তার উপর নির্ভরকারী ব্যক্তিতে এ আয়াতে সুসংবাদ দিচ্ছেন যে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট। বান্দা যখন এক আল্লাহর উপর নির্ভর করতে পারে, তখন দুনিয়ার সকল আপদ-বিপদ, দুশ্চিন্তা থেকে সে নিশ্চিন্ত হয়ে যায়। সকল বিষয়ে আল্লাহ তার সহায় হয়ে যান।

৪.

وَرَحْمَتِي وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ

অর্থ: আমার রহমত সব বস্তুকে আবৃত করে আছে। (সূরা আরাফ, আয়াত: ১৫৬)

আল্লাহ তার সকল সৃষ্টির প্রতি যেমন প্রতিমুহূর্তে খেয়াল রাখছেন, তেমনি প্রতিটি মানুষের প্রতিটি মুহূর্তে খেয়াল রাখছেন। সুতরাং, মানুষের হতাশার কোনো কারণই থাকতে পারেনা।

৫.

الْحَقُّ مِن رَّبِّكَ فَلَا تَكُن مِّنَ الْمُمْتَرِينَ

অর্থ: যা তোমার পালকর্তা বলেন তাই হচ্ছে যথার্থ সত্য। কাজেই তোমরা সংশয়বাদী হয়ো না। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৬০)

সকলের অদ্বিতীয় স্রষ্টা আল্লাহর চেয়ে অধিক জ্ঞানী আর কেউ হতে পারেন। অতএব যে ব্যক্তি তার উপর নির্ভর করতে পারে, তার জীবনে সাফল্যের অনিশ্চয়তার কোনো শঙ্কা থাকতে পারেনা।

৬.

لَا يُكَلِّفُ اللَّـهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا

অর্থ: আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোনো কাজের ভার দেন না। (সূরা বাকারা, আয়াত: ২৮৬)

আল্লাহ মানুষকে যে পরিস্থিতিতেই রাখুন না কেন, মানুষ তার মোকাবেলার ক্ষমতা রাখে। মানুষ যদি ধৈর্য ধরে সামনে অগ্রসর হয়, তবে কোনো কিছুই তার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনা।

৭.

إِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا

অর্থ: নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে। (সূরা আলাম নাশরাহ, আয়াত: ৬)

মানুষের জীবন কখনোই একাধারে দুঃখের আধার নয়। জীবনে যেমন দুঃখ আছে, তেমনি সুখও আছে। কষ্টের পাশাপাশি স্বস্তিরও অনেক মুহূর্ত আসে জীবনে। জীবনে চূড়ান্ত হতাশার কিছুই নেই।

৮.

وَأَحْسِنُوا ۛ إِنَّ اللَّـهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ

অর্থ: উত্তম কাজ করো। আল্লাহ উত্তম কাজ করা ব্যক্তিদের ভালোবাসেন। (সূরা বাকারা, আয়াত: ১৯৫)

আল্লাহ এখানে মানুষকে সর্বদা উত্তম কাজে নিজেদের ব্যস্ত রাখার জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন। যে ব্যক্তি উত্তম কাজের সাথে থাকবে, আল্লাহও তার সাথে থাকবেন।

৯.

فَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ ﴿﴾ وَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ

অর্থ: অতপর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে। এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে। (সূরা যিলযাল, আয়াত: ৬-৭)

মানুষ যে কাজই করুক না কেন, তা কখনোই ব্যর্থ হতে পারেনা। যত ছোট কাজই হোক, তার প্রতিদান সে পাবে। সুতরাং, তার হতাশার কোনো কারণ নেই।

১০.

قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَىٰ أَنفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِن رَّحْمَةِ اللَّـهِ ۚ إِنَّ اللَّـهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا ۚ إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ

অর্থ: বলুন, হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা যুমার, আয়াত: ৫৩)

আল্লাহর ক্ষমার বিশালত্বের অপর একটি প্রমাণ এ আয়াত। আল্লাহ এখানে বান্দাকে তার রহমতের থেকে নিরাশ হতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহর কাছে যদি সঠিকভাবে কেউ ক্ষমা ও দয়া চাইতে পারে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে তার রহমতের চাদরের নিচে ক্ষমাপ্রার্থণাকারীকে আশ্রয় দেবেন।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: