বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, চৈত্র ১৪ ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ইসলাম

হিজড়াদের ধর্মীয় শিক্ষা: কী বলে ইসলাম

 প্রকাশিত: ২২:৪৪, ৮ নভেম্বর ২০২০

হিজড়াদের ধর্মীয় শিক্ষা: কী বলে ইসলাম

মুফতি নাজমুল হাসান
শিক্ষক: জামিয়া আরাবিয়া কাসেমুল উলূম, কুমিল্লা৷

ঢাকায় হিজড়াদের জন্য একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে৷ এমন একটি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন ছিল বহু আগেই৷ কারণ, হিজড়া সম্প্রদায়ও মানুষ, আর মানুষই হল আশরাফুল মাখলুকাত তথা আল্লাহর সৃষ্টির সেরা জীব। এ মানব সম্প্রদায় সম্পর্কে আমাদের মন-মগজে এক ভিন্ন নেতিবাচক বদ্ধ ধারণা বিদ্যমান রয়েছে।

ফলে সমাজে অতি কাছে থেকেও হিজড়াদের সম্পর্কে আমাদের দায়িত্ববোধের অনাগ্রহ বেশ পরিলক্ষিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ প্রতিবন্ধী মানুষের যেমন শারীরিক ত্রুটি থাকে এটি তেমনই একটি ত্রুটি। তবে এই ত্রুটির জন্য তাদেরকে পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত করা ঠিক না। বিশেষ করে ধর্মীয় শিক্ষা থেকে বঞ্চিত রাখার কোন সুযোগ নেই৷ বরং অন্যান্য প্রতিবন্ধীদের মত তারা আরো বেশি স্নেহ মমতা, ভালোবাসা ও শিক্ষার পূর্ণ সুযোগ পাওয়ার শতভাগ অধিকার রাখে।

 

ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী হিজড়া বলা হয়, যার পুরুষ লিঙ্গ ও স্ত্রী লিঙ্গ উভয়টি রয়েছে অথবা কোনটিই নেই তবে মূত্রত্যাগের জন্য একটি ছিদ্রপথ রয়েছে। একই দেহে স্ত্রী ও পুরুষ চিহ্নযুক্ত অথবা উভয় চিহ্নযুক্ত আল্লাহর সৃষ্টি মানুষটির নামই হল হিজড়া। সৃষ্টিগতভাবে সব মানুষই নিখুঁত নয়। কারো হাত নেই ,কারো পা নেই, কেউ চোখে কম দেখে, কেউ কানে কম শোনে, কেউ কথা বলতে পারেনা, কারো বুদ্ধি কম, তবু এরা সবাই এক আল্লাহর সৃষ্টি।

ইসলামি শরীয়াহ অনুযায়ী হিজড়া সন্তান তারা মা-বাবার সম্পত্তির ভাগ পাবে। এবং উত্তরাধিকার সম্পদে তারা নারী হিসেবে পাবে নাকি পুরুষ হিসেবে পাবে সেটাও ইসলামী শরীয়াহ নিশ্চিত করেছে। যে হিজড়া নারী বা পুরুষ প্রকৃতির সে নারী বা পুরুষের মানদণ্ডে উত্তরাধিকার সম্পদ পাবে। আর যে নারী নাকি পুরুষ এর কোনটিই চিহ্নিত করা যায়না সে তার প্রস্রাবের পথের অবস্থা অনুযায়ী ভাগ পাবে। (সুনানে বায়হাকী: হাদিস নং ১২৯৪)

 

ফিকহের কিতাব গুলোতে হিজড়াদের নারী ও পুরুষ ভাগে বিভক্তি করার ক্ষেত্র তাদের দেহ গঠনের প্রতি নজর দিতে বলা হয়েছে৷ যদি তার দাড়ি, গোঁফ সহ পুরুষদের দেহ গঠনের বাহ্যিক আলামত প্রকাশিত হয়, তবে সে পুরুষ৷ আর যদি স্তন, ঋতুস্রাব হওয়া বা এধরনের নারী জাতীয় নিদর্শন প্রকাশিত হয়, তবে সে নারী৷ উভয় লিঙ্গ থাকার ক্ষেত্র কোন লিঙ্গ দিয়ে প্রস্রাব করে তা ধর্তব্য হবে৷ যদি উভয় লিঙ্গ দিয়েই প্রস্রাব করে, তাহলে দেখতে হবে প্রস্রাব কোনটিতে আগে আসে৷ এভাবেও নির্ণয় করা সম্ভব না হলে যেটি দিয়ে প্রস্রাবের পরিমাণ বেশি আসে, সেটি ধর্তব্য হবে৷

উল্লিখিত মানদণ্ড শুধু সম্পত্তি বন্টনের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়৷ এই মানদণ্ডের ভিত্তিতেই নির্ধারিত হবে একজন হিজড়ার গোটা জীবনের যাবতীয় বিধান৷ তার পর্দার বিধান, পোশাকের বিধান, নামায-রোযা সহ শরীয়তের যাবতীয় বিধান এই মানদণ্ডে নির্ণয় হবে৷

ইদানীংকালের হিজড়াগণ নারী সেজে সাধারণ মানুষের উপর খুব জুলুম করে থাকে৷ কোন কোন মানুষ তো কৃত্রিমভাবে ইচ্ছাকৃত হিজড়া সেজে ধোকা দিয়ে থাকে৷ যারা ইচ্ছাকৃত এমন করে তাদের ব্যাপারে হাদিসে কঠোর হুঁশিয়ারি এসেছে। ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐসকল নারী-পুরুষদের লা’নত করেছেন, যারা একে অপরের সাদৃশ্য অবলম্বন করে৷ (বুখারি: হাদিস নং ৩৮৮৫)

বর্তমানে হিজড়া সম্প্রদায় সমাজে অনৈতিক কাজ করে বেড়াচ্ছে৷ মানুষের থেকে জোর করে টাকা আদায় করা সহ যাবতীয় অনৈতিক কাজকে তারা পেশা বানিয়ে নিয়েছে৷ এসবের মূল কারণ হচ্ছে, এদের মাঝে ধর্মীয় শিক্ষা না থাকা৷ সমাজের অবহেলিত এই মানব সম্প্রদায়ের কর্ণকুহরে ইসলামের সুমহান আদর্শের দাওয়াত যারা পৌঁছে দেওয়ার জন্য মাদরাসা প্রতিষ্ঠার এ মহান মেহনতের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের এ মেহনতকে কবুল করুন।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: