বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ১২ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

হালাল-হারাম সংক্রান্ত কিছু মাসআলা

 প্রকাশিত: ১১:০৪, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

হালাল-হারাম সংক্রান্ত কিছু মাসআলা

মাসআলাঃ স্বর্ণ-চান্দির পাত্রে পানাহার করা, স্বর্ণ-চান্দির চামচ দ্বারা আহার করা, স্বর্ণের শলা ব্যবহার করে বা স্বর্ণের সুরমাদানী থেকে সুরমা লাগানো বা এমন শলা দ্বারা আতর লাগানো, স্বর্ণ-চান্দির পানদানীতে পান রাখা, স্বর্ণ-চান্দির ঘড়ি ব্যবহার করা, স্বর্ণ-চান্দির তৈরী ফ্রেমের আয়না ব্যবহার করা, ঘড়িতে স্বর্ণ-চান্দির চেইন লাগানো-এ সবই হারাম।

মাসআলাঃ যে জিনিসে স্বর্ণ-চান্দির কীলক বা টকুরা বসানো আছে, সে জায়গা থেকে বেঁচে থেকে যদি জিনিসটি ব্যবহার করে তাহলে জায়েয আছে।

মাসআলাঃ দাওয়াতের মজলিসে শরীয়ত বিরোধী কোন কাজ হলে সেখানে যাওয়ার পূর্বেই যদি জানতে পারে তাহলে দাওয়াত নিবে না। তবে যদি প্রবল আশা থাকে যে, আমি সেখানে গেলে আমার প্রতি সম্মানের কারণে এবং লজ্জায় শরীয়তবিরোধী কাজটি বন্ধ হয়ে যাবে তাহলে সেখানে যাওয়া উত্তম। আর যদি আগে থেকে জানা ছিলো না, সেখানে গিয়ে দেখতে পেলো তাহলে এ ব্যক্তি যদি দ্বীনের বিষয়ে মাননীয় হয় তাহলে ফিরে আসবে, আর যদি সাধারণ মানুষ হয় তাহলে খাওয়ার জায়গায় যদি সেই শরীয়তবিরোধী কাজটি হয় তাহলে সেখানে বসবে না। আর যদি অন্যত্র হয় তাহলে নিরুপায় অবস্থায় বসবে এবং বাড়িওয়ালাকে বুঝানো উত্তম। আর যদি এতটুকু হিম্মত না হয় তাহলে ধৈর্য ধরবে এবং অন্তর দিয়ে কাজটিকে ঘৃণা করবে।

মাসআলাঃ পুরুষের জন্যে রেশমী কাপড় পরা হারাম। একইভাবে ছেলেদেরকে পরানও হারাম। তবে রেশমের চার আঙ্গুল চওড়া পাড় পরা জায়েয আছে। এর অধিক নাজায়েয। এমনিভাবে যদি রেশমের চার আঙ্গুলের কম লেইস, ফিতা, জরি ইত্যাদি লাগানো থাকে তাহলে জায়েয আছে। স্বর্ণ-চান্দির তৈরী সুতারও একই হুকুম। অর্থাৎ, চার আঙ্গুল পর্যন্ত অনুমতি আছে, আর অধিক হলে নিষেধ।

মাসআলাঃ মখমল অর্থাৎ, যে কাপড়ের উপর রেশমের পশম বসানো আছে উপরোক্ত সব বিষয়ে তার রেশমের মতোই বিধান।

মাসআলাঃ তানা সুতার হলে আর বানা রেশমের হলে সে কাপড় ব্যবহার করা দুরস্ত নয়, আর যদি বানা সুতার হয় আর তানা রেশমের হয় তাহলে তা পরা দুরস্ত আছে।

মাসআলাঃ স্বর্ণ-চান্দির বোতাম ব্যবহার করা জায়েয আছে।

মাসআলাঃ চার মাশার চেয়ে কম ওজনের চান্দির আংটি ছাড়া অন্য কোন আংটি ব্যবহার করা জায়েয নেই। মহিলাদের জন্যে স্বর্ণের আংটি ব্যবহার করাও জায়েয। মহিলাদের জন্যে গিল্টি ইত্যাদির অলংকার ব্যবহার করা জায়েয আছে।

মাসআলাঃ একটি মন্দ রীতি হলো, এক মহিলা অন্য মহিলার সাথে একদম পর্দা করে না। উলঙ্গ অবস্থায় কোমরের সাথে কোমর মিলিয়ে থাকে-এটি হারাম। তবে নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত কাপড় জড়ানো থাকলে এমতাবস্থায় এক মহিলার জন্যে আরেক মহিলার দেহের অবশিষ্টাংশ দেখা জায়েয আছে।

মাসআলাঃ মহিলাদের পরপুরুষের সাথে যেমন পর্দা করতে হয়, তেমনিভাবে কাফের ও ফাসেক মহিলাদের সাথেও পর্দা করা ওয়াজিব। অর্থাৎ, মুখ, দুই হাত কব্জি পর্যন্ত এবং (টাখনু) গিরার নিচ পর্যন্ত দু্ই পা ছাড়া দেহের অন্যান্য অঙ্গ-যেমন, মাথা, বাহু ইত্যাদি তাদের সামনে খোলা জায়েয নয়।

মাসআলাঃ কতক মহিলা খালাতো, ফুফাতো বা মামাতো ভাই, ভগ্নিপতি, দেবর ইত্যাদির সামনে মাথা খুলে, ছোট হাতার জামা পরে, পাতলা কাপড় পরে, আতর ও সুগন্ধি লাগিয়ে বা সুরমা ব্যবহার করে আসে-এটা সম্পূর্ণরুপে হারাম।

মাসআলাঃ আমর যায়েদের কাছে ঋণী, সে হারাম আমদানি থেকে তা পরিশোধ করতে চায় এবং যায়েদের তা জানা আছে তাহলে তার জন্যে এটা নেওয়া হালাল হবে না। একইভাবে হারাম আয়ের লোকের কাছে কোন জিনিস বিক্রি করে ঐ হারাম থেকে দাম নেওয়া বা এমন ব্যক্তির কাজ করে দিয়ে এমন আয় থেকে পারিশ্রমিক নেওয়া এ সবের একই হুকুম।

মাসআলাঃ শস্য ক্রয় করে মজুত করে রাখা এবং মানুষের কষ্ট হলেও বিক্রি না করে অধিক মূল্যের অপেক্ষায় থাকা হারাম।

মাসআলাঃ বর্তমান যুগে কতক লোক পীর-মুরীদীকেও একটি পেশা বানিয়েছে। কৃত্রিম কিছু তাবীয-গন্ডা মুখস্থ করে এবং কিছু তেলেসমাতি শিখে মানুষকে ঠকানোর জন্যে পীর-মুরীদী শুরু করে দিয়েছে। তারা মুরীদদের থেকে ফসলী এবং অন্যদের থেকে ধোঁকাবাজির মাধ্যমে উপার্জন করে থাকে। এটি সর্বনিকৃষ্ট পেশা। তবে শরীয়তসম্মত তাবিয করে এবং ধোঁকাবাজি না করে পারিশ্রমিক নেওয়া জায়েয আছে। কোন কামেল শাইখ পীর-মুরীদীর অনুমতি দিয়ে থাকলে মানুষকে সৎপথ দেখানোর জন্যে বাইআত গ্রহণও দুরস্ত আছে। কেউ আন্তরিকতার সাথে কিছু হাদিয়া দিলে তা নেওয়াও দুরস্ত আছে। তবে দুনিয়া উপার্জনের নিয়তে এটা করাও দুরস্ত নয়।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: